৯ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১:৫১

উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিবেদন

বিদেশি সহায়তা কমছে বাড়ছে সরকারের ঋণ

মাথাপিছু ঋণ ৩০ হাজার ৭৪০ টাকা

সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। বর্তমানে দেশি ও বিদেশি মিলে মোট ঋণের স্থিতি প্রায় ৪ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিপরীতে প্রতিবছরই বিদেশি সহায়তা কমে আসছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’র পর্যালোচনায় এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানোর কারণে সরকারের দায় বাড়ছে। এ কারণে বাজেটে সুদ পরিশোধকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজেট ঘাটতি ও ঋণের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় দুটি সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে রয়েছে- রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় করে কার্যকরী ঋণ ব্যবস্থাপনা নীতিকাঠামো তৈরি এবং প্রবৃদ্ধি সহায়ক রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। শনিবার এ পর্যালোচনা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।


প্রতিবেদনে ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ বলছে, বতর্মানে দেশে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি মিলিয়ে মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯১ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। এ হিসাবে মাথাপিছু ঋণ ৩০ হাজার ৭৪০ টাকা। এর মধ্যে দেশীয় ঋণ ২ লাখ ৮১ হাজার ৩৩১ কোটি এবং বিদেশি ঋণ ২ লাখ ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া বতর্মানে বিদেশি ঋণের স্থিতি দেশের মোট রফতানি আয় ও রেমিটেন্সের প্রায় ৫২ শতাংশ। অন্যদিকে বাড়ছে ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধের দায়।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি ঋণের বিপরীতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারকে ২০ কোটি ২১ লাখ ডলার সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা দেশের মোট রাজস্ব আয়ের ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং মোট রফতানি ও প্রবাসী আয়ের ২ দশমিক ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে আগের বছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট দেশীয় ঋণের স্থিতি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে দেশীয় ঋণের স্থিতি ১৮ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়েছে। আর জিডিপির অনুপাতেও দেশীয় ঋণ বাড়ছে। জিডিপির অনুপাতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঋণের স্থিতি ছিল ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০১৩-১৪তে ছিল ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ, ২০১৪-১৫তে ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশে উন্নীত হয়। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেই তা ১৪ দশমিক ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বেশি ঋণ নিয়েছে। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে দেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা এবং অর্থবছর শেষে দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকায়। এদিকে ২০০৯-১০ অর্থবছর দেশীয় ঋণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সাত বছরে দেশীয় ঋণ হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

উন্নয়ন অন্বেষণ আরও বলছে, দেশে বৈদেশিক ঋণও ব্যাপক হারে বাড়ছে। বর্তমানে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি জিডিপির ১২ শতাংশ। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ২ হাজার ৬৩০ কোটি ৫৭ লাখ মার্কিন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা ২ লাখ ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪-১৫ সালে যা ছিল ২ হাজার ৩৯০ কোটি ডলার।

এদিকে বর্তমান অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিদেশি সহায়তা প্রায় ৩০ কোটি ডলার কমেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ সময়ে বিদেশ থেকে অনুদান এসেছে ১৪৬ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৭৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। এছাড়া বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশি সহায়তা কমেছে ৪৫ দশমিক ০৩ শতাংশ।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি ঋণের সুদের হারও বাড়ছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে সুদ ও আসল মিলিয়ে মোট বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৯২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে ১২৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পরিশোধের পরিমাণ কমে ১০৫ কোটি ৫ লাখ ডলারে নেমে আসে। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ সালে বৈদেশিক ঋণের সুদ ছিল ১৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে ২০ কোটি ২১ লাখ ডলারে উন্নীত হয়।

বাজেট ঘাটতি পূরণে চলতি অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৯২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ৪১ হাজার ১০০ কোটি টাকা নিয়েছে সরকার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/04/09/116165/