১ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার, ৯:৫৪

আসকের প্রতিবেদন

করোনায়ও অপহরণ গুম থেমে থাকেনি

করোনা মহামারিকালে নানা সংকটের মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধসহ বিভিন্ন বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন-মৃত্যু হয়েছে। বিদায়ী বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ-গুমের ঘটনা থেমে থাকেনি। ২০২১ সালের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আসকের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির ও সহকারী সমন্বয়কারী অনির্বাণ সাহা। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আসকের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মো. নূর খান। আরও উপস্থিত ছিলেন আসকের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মানোয়ার কামাল ও পরিচালক নীনা গোস্বামী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্নেষণ করে আসক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৮০ জন। কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৫১ জন। কথিত বন্দুকযুদ্ধের সমর্থনে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে আসক জানায়, তাদের বক্তব্য প্রকারান্তরে বিচারবহির্ভূত হত্যা বা ক্রসফায়ারকেই উৎসাহিত করে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিদায়ী বছরে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়েছেন আটজন। এর মধ্যে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনে ছয়, হার্ট অ্যাটাকে এক ও গ্রেপ্তারের আগে শারীরিক নির্যাতনে একজন নিহত হয়েছেন। দেশের কারাগারগুলোয় অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন ৮১ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২৯ ও হাজতি ৫২ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে ছয়জনকে পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এখনও এক নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়া সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৩২১ নারী। যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন ১২৮ নারী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ৭৭ জন পুরুষ। উত্ত্যক্তের ঘটনায় আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৪০ জন; যার মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা যান ৩৭২ জন, আত্মহত্যা করেন ১৪২ জন। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১০ নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যার শিকার হন ৭২ নারী, আত্মহত্যা করেছেন ১৩ জন। ২০২১ সালে সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে ১২ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে আসক জানায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ মোট ৯৩২টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘাতে ১৫৭ নিহত ও ১০ হাজার ৮৩৩ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পৌর ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে ৮৩টি ঘটনায় ১৩ নিহত ও ৭৮৮ জন আহত হয়েছেন। ১৪৪ ধারা জারির ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ২০ বার। বিদায়ী বছরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ছিল। দুর্গাপূজা চলাকালীন কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পূজামণ্ডপে ও মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর, বাড়িঘর এবং দোকানপাটে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও মারধরের ঘটনা ঘটে। নোয়াখালীতে একজনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ আসে।

শিশু অধিকার বিষয়ে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে ৫৯৬ শিশু নিহত হয়েছে।

https://samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/2201138649