৯ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১:৪২

এত কল ড্রপ কেন

প্রতিকারের কি ব্যবস্থা নেই দায়িত্বশীলরা করছেটা কি

প্রতিদিনই বাড়ছে কল ড্রপ; কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটরদের হিসেবে কল ড্রপের পরিমাণ আইটিইউর নির্ধারিত ৩ শতাংশের কমই আছে। প্রতিটি কলই কেটে যাওয়ায় গ্রাহক চরম বিরক্ত হচ্ছেন। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এত কল কেটে যাচ্ছে, সেটা কিভাবে ৩ শতাংশের কম হয়? এখন তো টানা ৫ মিনিটই কথা বলা যাচ্ছে না। মজার ব্যাপার হলো- কল ড্রপের পরিমাণ নির্ধারণ করে অপারেটররাই। অর্থাত্ যিনি অভিযুক্ত, তিনিই বিচারক। ফলে তিনি যা বলছেন, সবাইকে সেটা মেনে নিতে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো তিনি সঠিক বলছেন, না ভুল বলছেন- সেটা পরিমাপের কোনো ব্যবস্থা নেই আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে। এই কারণে গ্রাহক ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘কল ড্রপ পরিমাপ করতে আমরা কিছু যন্ত্রপাতি কিনেছি। সেগুলোর ব্যবহার শুরু হচ্ছে। এখন আমাদের অপারেটরদের দিকেই চেয়ে থাকতে হয়। তারা যে রিপোর্ট দেয় সেটাই বিশ্বাস করতে হয়। ফলে তাদের ধরতে পারছি না। যন্ত্রপাতির ব্যবহার পুরোপুরি শুরু হলে তখন আমরা তাদের ধরতে পারব, কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

একজন গ্রাহকের অভিযোগ, ‘মোবাইল ফোন অপারেটররা এখন এতটাই বেপরোয়া যে, কল সেন্টারে কোনো গ্রাহক ফোন করলে তার অভিযোগ ঠিকমতো শুনছেই না। সমাধান তো দূরের কথা।’ এই গ্রাহকের মতে, ১৬ কোটি মানুষের দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক বর্তমানে প্রায় ১৩ কোটি। ফলে আপাতত গ্রাহক বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। যারা মোবাইলের সিম কিনেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছেন তারা তো সিমটা ফেলে দিতে পারবেন না। তাতে সেবা যে পর্যায়েই থাকুক না কেন? আর সর্বোচ্চ ট্যাক্স দেয়া প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারের শীর্ষ মহলেও তাদের কদর আছে। এসব কারণে সাধারণ গ্রাহকদের অভিযোগ আমলেই নিচ্ছে না অপারেটররা।

এই সেক্টরের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, মোবাইলের টাওয়ার পৃথক কোম্পানীর হাতে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অনেক আগেই। এ নিয়ে গাইডলাইন চূড়ান্তও হয়েছে। নিলামের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছিল। অনিবার্য কারণে সেটা পিছিয়েছে। যেহেতু টাওয়ার নিজেদের হাতে থাকছে না, এই কারণে অপারেটররা টাওয়ারের পেছনে কোনো খরচও ঠিকমতো করছে না। সব অপারেটরই টাওয়ার থেকে খরচ কাটেল করেছে। ফলে গ্রাহক সেবাও নেমে গেছে। কল ড্রপের পরিমাণও বেড়ে গেছে। অপারেটর বাজেট কমাচ্ছে, দুর্ভোগ হচ্ছে গ্রাহকের। অথচ সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা কেটে নেওয়ার পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন এমটবের সিইও ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল কবির ইত্তেফাককে বলেন, ‘কল ড্রপের কারণে শুধু অপারেটরদের দায়ী করা হয়। অথচ এর সঙ্গে আইসিএক্সসহ আরো অনেকের সম্পৃক্ততা আছে। শুধু অপারেটর তার নেটওয়ার্ক ভালো করলেই কল ড্রপ বন্ধ হবে না। সবগুলো ম্যাকানিজম একসঙ্গে কাজ করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আর টেকনোলজি নিউটিলিটির জন্য আমরা বারবার বলছি, সেটা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হতো।’ এসব ব্যাপারে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা গতকাল ইত্তেফাক অফিসে এসে তার কল ড্রপের হিসাব দিলেন। গতকাল এক দিনে তিনি ১২টি কল করেছেন। তার মধ্যে ৯টি কলের সংযোগ একাধিকবার কেটে গেছে। এ নিয়ে খুবই বিরক্ত তিনি। তার দাবি, মোবাইল ফোনের গ্রাহক সেবা এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। মোবাইল ফোন থেকে সমানে টাকা কাটা যাচ্ছে; কিন্তু সেবার নামে গ্রাহকের সঙ্গে যা হচ্ছে সেটা ভয়াবহ অন্যায়। শুধু একটা অপারেটর থেকে নয়, সব অপারেটরেরই একই অবস্থা। কোনো প্রতিকার মিলছে না।

মোবাইল ফোন অপারেটররা এই কল ড্রপ নিয়ে দিনের পর দিন একই কথা বলে যাচ্ছে; কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। কিছুদিন আগে গ্রামীণফোনের একজন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেছিলেন, কল ড্রপের জন্য শুধু অপারেটররাই দায়ী না। আবহাওয়া, আইসিএক্সসহ অনেক কিছুই সম্পৃক্ত। রবির একজন কর্মকর্তা বলেন, এয়ারটেল ও রবি একীভূত হওয়ার কারণে নেটওয়াকের কিছু সমস্যা হচ্ছে। শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে। বাংলালিংকের বক্তব্যও গ্রামীণফোনের মতোই। আর টেলিটকের অবস্থা তো বলাই বাহুল্য। তাদের পদে পদে সমস্যা।

তবে গ্রাহকদের একটু আশার কথা শোনালেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, অপারেটরদের কল ড্রপে কল ফেরত দিতে বাধ্য করেছেন তিনি। দিনে একটির বেশি কল ড্রপ হলে প্রতি কলে এক মিনিট করে ফেরত পাচ্ছেন গ্রাহক। মাস শেষে এটা দেয়া হচ্ছে। বিটিআরসিকে তিনি এটা মনিটরিং করতেও বলেছেন। গ্রাহক কল ড্রপে ঠিকমতো কল ফেরত পাচ্ছে কি-না সেটা বিটিআরসিকে নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৮৪ হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক প্রায় ৬ কোটি। বাংলালিংকের ৩ কোটি ১৩ লাখ ও রবির ২ কোটি ৭০ লাখ, এয়ারটেলের ৮২ লাখ ১৯ হাজার। আর টেলিটকের ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার।

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2017/04/09/187978.html