৭ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ৯:২০

হাওরজুড়ে কৃষকের কান্না

টানা বৃষ্টি আমাদের সব কেড়ে নিলো। বছরের সম্বল চোখের সামনেই ডুবে গেল। আমাদের সব শেষ। পরিবার পরিজন নিয়ে খাবো কি। সংসার চালাবো কি করে। হাকালুকি হাওরের বোরো চাষি আছর উল্লাহ (৭৫), রজব আলী (৫৮), আমির আলী (৬০), ইসুব আলী (৬৫), সুনীল দাস (৫০) সহ অনেকেই ডুবে যাওয়া জমি দেখিয়ে তাদের দুর্দশার কথা বলেন। স্বপ্নের সোনালী ফসল বোরো ধান হারিয়ে এখন তারা বিপর্যস্ত। পুরো বছরের জীবিকার এই ফসল হারিয়ে এখন তারা চরম হতাশায়। ওই চাষিদের মধ্যে কেউ ২৫ বিঘা, কেউ ৩০ বিঘা, ১০ বিঘা কেউ ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। আবার অনেকেই নিজের জমিজমা না থাকায় বর্গা নিয়ে করেছিলেন বোরো চাষ। বিঘাপ্রতি ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল তাদের। স্বপ্ন ছিল বাম্পার ফলনের। কিন্তু অকাল বন্যায় সব শেষ। গতকাল হাকালুকি হাওর পাড়ের কাড়েরা, ছকাপন ও বাদে ভূকশিমইল এলাকায় গেলে বৃষ্টির মধ্যেও জটলা বেঁধে কৃষকরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের কষ্টের কথাগুলো জানান। এখন পুরো হাকালুকি হাওর জুড়ে কৃষকের হাহাকার। হাওর পাড়ের মানুষের একমাত্র ফসল বোরো ধান এখন ৪-৫ ফুট পানির নিচে। প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক নতুন এলাকা। টানা তিন দিনের ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে থোড় দেয়া ও আধাপাকা বোরো ধান হারিয়ে দিশাহারা চাষিরা। মৌলভীবাজারের বোরো ধান চাষের জন্য বিখ্যাত হাকালুকি হাওরের মতো একই অবস্থা কাউয়াদিঘি আর হাইল হাওরেরও। ওখানেও থামছে না কৃষকের কান্না। হাওর পাড়ে বসে বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখছেন আর ডুকরে কাঁদছেন। বছরজুড়ে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ফসল হারিয়ে এখন তারা নির্বাক। সরজমিন হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়ার কাড়েরা, কানেহাত, কালেশার, ছকাপন, বড়ধল, বাদেভুকশিমইল, কুরবানপুর, শাহাপুর, গৌড়করণ, মুক্তাজিপুর ও জুড়ি উপজেলার জায়ফরনগর ও পশ্চিম জুড়ি, বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেল থোড় বের হওয়া অবস্থায় হেক্টরের পর হেক্টর বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি এলাকায় দেখা গেল বাড়ির পাশে থাকা এমন ধান দ্রুততার সঙ্গে কাটছেন কয়েকজন কৃষক। জানতে চাইলে চাষিরা বললেন- এই থোড় ধানগুলো গরু ও মহিষের খাদ্য হবে। কিছু সময় গেলে এগুলোও পানিতে তলিয়ে যাবে। তাই বলতে পারেন পানির সঙ্গে যুদ্ধ করেই এগুলো কাটছি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায় গত তিন দিনের টানা ভারি বর্ষণে জেলায় মোট ১৪,৮৬২ হেক্টর বোরো ফসল ও ৮০ হেক্টর সবজির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। তন্মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর বোরো ফসলের জমি হাকালুকি হাওর এলাকার। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি না থামলে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। ভূকশিমইল আইপিএম কৃষি ক্লাবের সভাপতি মো. এনামূল হক, সদস্য দেলোয়ার হোসেন সুজন, আব্দুল মুমিন জানু, ইসলাম উদ্দিন, কদম আলীসহ ওই এলাকার কৃষকরা জানান, আর মাত্র ১৪-১৫ দিনের মধ্যে ফসল কাটা শুরু হতো। এবছর প্রথমদিকে আবহাওয়া বোরো চাষের অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা ছিল। প্রতি বছরের মতো এবছরও তারা বোরো ধান ঘরে তোলাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসবের আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তিন দিনের টানা ভারি বর্ষণে তাদের সব স্বপ্ন শেষ। একমুঠো ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারেন নি। তাই এবছর তাদের পরিবার জীবন-জীবিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ- পরিচালক মো. শাহজাহান মানবজমিনকে বলেন এ ক’দিনের থেমে থেমে ভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে এ জেলার হাওর অঞ্চলের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি সবজি ক্ষেতেরও ক্ষতি হয়েছে। এবছর জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা ছিল। প্রাথমিক ভাবে আমরা এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২শ’ কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করছি।

ভৈরবে ১১শ’ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ভৈরবে উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে ১১শ’ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে জমির ধান। উপায় না দেখে পানির নিচ থেকে আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছে কৃষকরা। একমাত্র ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। এদিকে কৃষি অফিস মাঠ পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করছে।
আগানগর ইউনিয়নের কৃষক আসাদ মিয়া, ইসমাইল মিয়াসহ ৮/১০ কৃষক জানান, ধারদেনা করে জমি রোপণ করেছিলাম। হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢলে আমাদের শত শত জমির বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় পানির নিচ থেকে কোনো রকমে আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছে কৃষকরা। এখন আমরা কি খেয়ে বাঁচবো আর ধারদেনা পরিশোধ করবো কি করে। আর কেটে যে আনছি মজুরির পয়সা পাবো না আর এগুলো গরুর খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে না।
সাদেকপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার জানান, তার ইউনিয়নে ১ হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৮শ’ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দীন জানান, আগাম বন্যার পানিতে ভৈরবের ৪টি ইউনিয়নের কয়েকশ’ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আগানগর ইউনিয়নের। এখন কৃষকরা পানির নিচ থেকে আধা-পাকা ধান কেটে নিচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। সরকারি সহায়তা পেলে তাদেরকে দেয়া হবে।
লাখাইর হাওরে কৃষকের কান্না
লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মাঠ জুড়ে সবুজ ফসলের আভায় কৃষক সোনালী ধানের বাম্পার ফলনের স্বপ্নে বিভোর। দিন গুনতে গুনতে কষ্টে ফলানো সোনালী ফসল ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে টানা বর্ষণে আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কৃষকের সেই স্বপ্ন ম্লান হতে বসেছে। কৃষিভাণ্ডার খ্যাত লাখাইর সবুজ হাওরের মাঠ এখন অথৈ পানি। এতে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন উপজেলার কৃষককুল। অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সুতাং নদী এখন টইটম্বুর। ইতিমধ্যে লাখাই উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ সাতবিলা, সাকাতী, জোয়ারী বিল, লাখাই, মাদনা, বেগুনাই, করাবসহ নিম্নাঞ্চলের বেশিরই ভাগই পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। এদিকে গত মঙ্গলবার শেষ রাতে উপজেলাজুড়ে বয়ে যায় আকস্মিক শিলাবৃষ্টি ও বৈশাখী তাণ্ডব। এতে নেতিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, ক্ষতিসাধিত হয়েছে ঘরবাড়ি ও গাছপালার শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার বুল্লা, সিংহগ্রাম, করাব, আগাপুর, গোপালপুর, নিদনপুর ও গুনিপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বোরো ধানসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। বিনষ্ট হয়ে গেছে কৃষকের শেষ স্বপ্নটুকু। নতুন করে ঢলের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। সরজমিন দেখা যায়, কষ্টে বোনা ধান রক্ষার জন্য বুল্লা গ্রামবাসী বাঁধ দিয়ে প্রায় ১৭টি ইঞ্জিনচালিত সেচ পাম্প বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে ফসল রক্ষায় প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালালেও, ক্রমাগত বৃষ্টি আর ঢলের পানিতে গতকাল বুধবার তলিয়ে গেছে সাতবিলা রক্ষা বাঁধ। এতে করে সাতবিলা বাঁধে দেখা যায় কৃষকদের বুকফাটা কান্না। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ১৪৮০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এবং আরো জমি তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এতে প্রায় ৪ হাজার কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ২০ হেক্টর জমির মৌসুমী ফসল নষ্ট হয়েছে। বেগুনাই, বলাকান্দি, চন্দ্রপুর, বুল্লা হাওরে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে লাখাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ অ্যাডভোকেট মুশফিউল আলাম আজাদ উপজেলার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
জগন্নাথপুরে কৃষকদের ইউএনও অফিস ঘেরাও
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট ও জগন্নাথপুর প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে হাওরের বেড়িবাঁধের জন্য বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা লুটপাটকারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও পিআইসি সদস্যদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্ত মূলক শান্তিসহ ৭ দফা দাবিতে জগন্নাথপুরের ইউএনও কার্যালয় ঘেরাও করা হয়েছে। এর আগে হাজার হাজার কৃষক জনতা বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা সদরের স্থানীয় পৌর পয়েন্টে এক বিশাল মানববন্ধন ও দুর্নীতিবাজদের শাস্তির দাবিতে সমাবেশ করেন। জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল মনাফের সভাপতিত্বে ও হাওর উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন হাওর পাড়ের চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান চৌধুরী, হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বকুল, সাবেক কাউন্সিলর লুৎফুর রহমান, মাওলানা এমরান আহমদ, জগন্নাথপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ, জগন্নাথপুর প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হাসান সুনু, কাউন্সিলর সফিকুল হক, আবাব মিয়া, মো. দিলোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী মিন্টু রঞ্জন ধর, আবুল হোসেন ডালিম, কৃষক মাসুক মিয়া, জামাল হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে ৭ দফা দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে দেন বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার কৃষক জনতা। পরে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীম আল-ইমরান কৃষকদের দাবি-দাওয়া পূরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে বেলা ২টার দিকে কৃষকরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন। এসময় ইউএনওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ৭ দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে দেয়া হয়।
ঠিকাদারের পেটে টাঙ্গুয়া, মাটিয়ানা
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পানিতে ডুবে যাচ্ছে সোনালী ফলস। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর বোরো ধানের ফসলি জমি। হুড়মুড় করে পানি ঢুকছে ফসলি জমিতে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জামখোলা হারের ৩১শ হেক্টর ও দেখার হাওরের ২৫শ হেক্টর বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। সাংহাইর হাওরের আরো প্রায় ২০০শ হেক্টর বোরো ধানের জমি তলিয়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় দেখার হাওরের কৃষকদের অভিযোগ, পিআইসি পদ্ধতিতে বাঁধ নির্মাণে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা অনেকটাই নিশ্চিত হয়। পিআসি পদ্ধতিতে অপেক্ষাকৃত কম টাকা খরচ করে ফলপ্রসূ বাঁধনির্মিত হয়। কারণ নির্মাণ প্রক্রিয়ায় জড়িতদের সবাই সংশ্লিষ্ট হাওরের পাড়ের কৃষক, শ্রমিক, জনপ্রতিনিধি।তাই কাজে ইচ্ছে করলেও অবহেলা, অনিয়ম, দুর্নীতি করার প্রবণতা অপেক্ষাকৃত কম থাকে। এছাড়া ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়লে সংশ্লিষ্টদের পালিয়ে যাওয়ার কোনো পথ থাকে না কারণ যিনি প্রকল্পের চেয়ারম্যান তার বসত বাড়ি ওই হাওরের কোনো এক গ্রামে তাই দরদটাও অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে। বর্তমানে দরপত্রের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের ফলে অনেক দুর্নীতিবাজ জনপ্রতি ঠিকাদারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পার্সেন্টিজে কাজ ভাগিয়ে নেন। তারা কোনো মতে কাজ শেষ করে সাইট ছেড়ে চলে আসেন বিল তুলতে। যেহেতু ওই ঠিকাদারের এখানে কোন জমিজমা নেই এজন্য তার কাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতাও কম থাকে। ফলে যা হবার তাই হয় পানি আসার আগেই ঠিকাদার উধাও। পরে জনসাধারণ নিজেদের স্বার্থে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে বাঁধে মাটি ফেলে। চলতি বছরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওরসহ অন্যান্য হাওরে যে সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। সব ঠিকাদার কাজ না করেই লাপত্তা। যার ফলে পিআইসির তৈরি বঁধ দিয়ে পানি না ঢুকে সবকটি হাওরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বঁধের অংশে পানি ঢুকে হাওরাঞ্চলের কৃষকরা সর্বস্ব হারিয়ে ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছেন অপর দিকে ঠিকাদারা লাখপতি থেকে কোটিপতি হয়েছেন। কৃষকদের অভিযোগ দলীয়করণ, ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কোনো বছরই পরিপূর্ণ কাজ হয় না বাঁধের। চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজে যোগ দেয়। নির্র্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণ না করতে পারায় হাওরে গত ২/৩ দিনে পানি ঢুকে ২৫শ হেক্টর বোরো ফসলি জমি তলিয়ে যায়।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=60518&cat=3/