৬ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৮

নয় মাসে ঘাটতি ৯৩২০ কোটি টাকা

পূরণ হয়নি রফতানি লক্ষ্যমাত্রা

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আয় কম হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এ আয় ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ কম। তবে প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় এটি গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সর্বশেষ প্রকাশিত চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) পর্যন্ত আয়ের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ সময়ে মাসওয়ারি আয় কমার পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিও ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের (জুলাই-অক্টোবর) সময়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার ছিল ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এটি ৬ মাসের হিসাবে অর্থাৎ (জুলাই-ডিসেম্বর) কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অর্থবছরের সাত মাসের হিসাবে (জুলাই-জানুয়ারি) কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশে। আট মাসের হিসাবে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ। আর নয় মাসের হিসাবে (জুলাই-মার্চ) তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশে।


এদিকে মাসওয়ারি আয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এর থেকে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ হাজার ৭১১ কোটি ডলার। লক্ষ্য অর্জনের এ দৌড়ে নির্ধারিত সময় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয় এসেছে ২ হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার। রফতানি আয় কম হয়েছে ১১৬ কোটি ডলারের বেশি। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯ হাজার ৩২০ কোটি টাকা।

খাতভিত্তিক আয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পোশাক খাতে (নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্ট) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এ খাতে ১২ মাসে আয় ধরা হয় ৩ হাজার ৩৭ কোটি ডলার। নয় মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ২২৫ কোটি ডলার। কিন্তু ফেব্রুয়ারি শেষে তা অর্জিত হয় মাত্র ২ হাজার ৯২ কোটি ডলার। তবে সার্বিক পোশাক খাত এ কম আয় নিয়েই প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ খাতে আশঙ্কার বড় কারণ হচ্ছে ওভেন গার্মেন্টে হতাশাজনক রফতানি আয়। নিটওয়্যার তুলনামূলক ভালো করলেও কাক্সিক্ষত আয় অর্জন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে ওভেন গার্মেন্ট। এই উপখাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য খাতেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চিত্র সন্তোষজনক নয়। তাজা মাছ রফতানি খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ৫৫ দশমিক ১২ ভাগ, কৃষিপণ্য খাতে ৮ দশমিক ১৯ ভাগ, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ৪ দশমিক ৩১ ভাগ, প্রিন্টেড ম্যাটেরিয়ালস খাতে ১৮ দশমিক ৫২ ভাগ, এবং ম্যান মেড ফিলামেন্ট ও স্ট্যাপল ফাইবার পণ্যে ২২ দশমিক ৭২ ভাগ।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববাজারে রফতানি পরিস্থিতি, ভোক্তার চাহিদা এবং রফতানিকারকদের সরবরাহ সক্ষমতা সব সময় এক তালে চলে না। ফলে বিভিন্ন খাতে রফতানি আয়ে বিভিন্ন সময়ে কম-বেশি বিচ্যুতি ঘটতে পারে। কিন্তু আমাদের রফতানি খাতে আশার খবর হচ্ছে- কয়েকটি খাত ছাড়া বাকি সব রফতানি খাত এবং পণ্যে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। এ প্রবৃদ্ধিই সামনে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

অপরদিকে রফতানিকারকরা বলছেন, রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে এটিই এখন আশঙ্কার বড় কারণ। এটি ভালো লক্ষণ নয়। কারণ আমাদের ন্যূনতম প্রবৃদ্ধি নিয়ে এগুলো চলবে না। মনে রাখা দরকার, সামনে ২০২১ সাল নাগাদ সার্বিক রফতানি খাত থেকে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এককভাবে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন তা অর্জন করতে হলে প্রতি মাসেই রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি থাকতে হবে ১১-১২ শতাংশ হারে।

http://www.jugantor.com/industry-trade/2017/04/06/115548/