৫ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ৯:৫১

৭ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীর জীবনে নতুন অনিশ্চয়তা

অধিভুক্ত হলেও দায়িত্ব বুঝে নেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকার সময় শিক্ষার্থীদের কেটেছে ‘সেশন জট’ আর ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নামের আতঙ্কে। শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পাঠগ্রহণ ছাড়াই যেখানে চলেছে গত কয়েক বছর ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রামে’র নামে পরীক্ষা আর পরীক্ষা। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসে শুরু হয়েছে তাদের নতুন অনিশ্চয়তা। গত দেড় মাসে রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা দেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে এসব কলেজে শিক্ষাকার্যক্রম এক প্রকার বন্ধ হওয়ার উপক্রম। জানা গেছে, ওই কলেজগুলোর অ্যাকাডেমিক দায়দায়িত্ব বুঝে নেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অন্য সরকারি-বেসরকারি কলেজের সহপাঠীরা আগামী ১৭ এপ্রিল থেকে মাস্টার্স শেষ পর্বের পরীক্ষায় বসছেন; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসে সাত সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত প্রায় ৫০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। ওই সাত কলেজে অধ্যয়নরত মাস্টার্স শেষ পর্বের শিক্ষার্থীরা কবে পরীক্ষায় বসবেন তার কোনো দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ হয়নি।
শুধু মাস্টার্সের ৫০ হাজার শিক্ষার্থীই নন, ওই সরকারি কলেজগুলোতে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ের আরো প্রায় লক্ষাধিক এবং অন্যান্য কোর্সের আরো প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীরও শিক্ষাকার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে। সব মিলে রাজধানীর প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষাকার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ওই কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নতুন করে অধিভুক্তির পর এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা নয়া দিগন্তকে জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা এসব সরকারি কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম হস্তান্তর না হওয়ায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এমনই প্রেক্ষাপটে গত ১ এপ্রিল সাত সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এবং কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক সাক্ষাৎ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সাথে। বৈঠকে কলেজ অধ্যক্ষেরা তাদের বিদ্যমান সমস্যা বিশেষ করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ এখনো দায়িত্ব বুঝে না নেয়ায় যে সমস্যাগুলো হচ্ছে তা তুলে ধরেন। অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব বুঝে নেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভর্তি, পরীাসহ অ্যাকাডেমিক সমস্যাগুলো সভায় তুলে ধরা হয়েছে। দেড় মাসেও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় দেড় লাখ শিার্থীর উদ্বেগ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক অধ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব কথা জানান।
এ বৈঠকে কলেজের অধ্যক্ষেরা শুধু আশ্বাসবাণী শুনে এসেছেন বলে জানা গেছে। কবে নাগাদ ওই সাত সরকারি কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে তার কোনো দিকনির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওই বৈঠক শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন কলেজ অধ্যক্ষেরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অধ্যক্ষ নয়া দিগন্তকে আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের। দেড় মাস অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমও এক প্রকার বন্ধ রয়েছে। কারণ নতুন অধিভুক্তির পর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম কী হবে তা আমাদের জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনার কথা আমাদের শোনানো হয়েছে মাত্র।
উল্লেখ্য, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন ঢাবি’র চ্যান্সেলরের সাথে ওই কলেজের অধ্যক্ষদের বৈঠকে নতুন অধিভুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়।
ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব কলেজের ভর্তিপ্রক্রিয়া এবং সব পরীা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনা অনুসারে পরিচালিত হওয়ার কথা। পাঠদান সূচিও নির্ধারণ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের সিলেবাস প্রণয়ন, ভর্তিকার্যক্রম, পরীা পদ্ধতি নির্ধারণ, সনদ প্রদানসহ যাবতীয় অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সিলেবাসেও থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামের একটি বড় অংশের প্রভাব।
সে থেকে গত দেড় মাস অতিবাহিত হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাবি’র কর্তৃপক্ষ ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক তথ্য-উপাত্ত বুঝে নেয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাবি’র কর্র্তৃপক্ষ গতকাল পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো চাহিদাপত্রও পাঠায়নি। অপর দিকে, ঢাবি’র কর্র্তৃপক্ষ নতুন অধিভুক্ত সাত কলেজের দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রশাসনিক ও দাফতরিক কার্যক্রমও এখন পর্যন্ত শুরু করেনি। ঢাবি’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও রেজিস্ট্রার দফতরে এ পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তাকেও দায়িত্ব দেয়া হয়নি নতুন কলেজগুলোর ব্যাপারে।
ঢাবি’র ভিসি’র সাথে বৈঠক সম্পর্কে সরকারি কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ ও বিসিএস শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আই কে খন্দকার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বৈঠকে জানানো হয়েছে, দ্রুতই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাকাডেমিক নির্দেশনা দেয়া হবে। তবে অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান হয়ে যাবে। তিনি জানান, বৈঠকে একটি বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে, উচ্চশিক্ষার কোনো স্তরেই ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া কাউকেই ভর্তি করা হবে না। এর জন্য সময় হয়ত একটু বেশি লাগবে। তার পরও ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া কেউ ভর্তির সুযোগ পাবে না।
অধ্যক্ষদের সাথে বৈঠকের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, সাত সরকারি কলেজের অধিভুক্তির পরবর্তী অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম দ্রুতই শুরু হবে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা বা হতাশার কিছু নেই।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/209687