৫ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ৯:৩৯

একের পর এক হাওর ডুবছে

সুনামগঞ্জে হাহাকার

সিলেট মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনার দিকেও অগ্রসর হচ্ছে পাহাড়ি ঢল, এরই মধ্যে ১ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে

এক ফসলি এলাকা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে নতুন ফসলের ঘ্রাণে এ এলাকায় থাকে রাজ্যের আনন্দ। সেখানে এখন শুধুই হাহাকার। বছরের একমাত্র ফসল হারিয়ে কৃষক দিশেহারা। পাহাড়ি ঢলে কোনো কোনো কৃষকের ফসল এরই মধ্যে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। আবার কোনোটা তলিয়ে যাওয়ার পথে। এ অবস্থায় যার যা কিছু আছে তা নিয়েই নেমেছেন বন্যার পানি ঠেকানোর যুদ্ধে। জেলার যেক’টি হাওর এখনও টিকে আছে সেগুলো রক্ষায় হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে নেমেছেন। বাঁধ নির্মাণে সেখানে কোনো ধনী-গরিব নেই, সবাই নেমে পড়েছেন। সবাই যার যার অবস্থান থেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছেন। এখনও প্রয় ১২০টি হাওরের বোরো ফসল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।


জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের সর্ববৃহৎ দেখার হাওর, দিরাই-শাল্লার বরাম হাওর, চাপটির হাওর, জামালগঞ্জের হালির হাওর, জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওর, মৈইয়ার হাওর, ধর্মপাশার চন্দ্রশোনা থাল হাওর, সদর ও বিশ্বম্ভরপুরের খরচার হাওর, তাহিরপুরের মাটিয়ান হাওরসহ প্রায় ৪০টি হাওর তলিয়ে গেছে।

জেলা কৃষি অধিদফতরের হিসাবে চৈত্রের এ তৃতীয় সপ্তাহে ৪০টি হাওরের প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি এখন পানির নিচে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের হিসাব অনুযায়ী তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ লাখ হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডুবে যাওয়া ফসলের পরিমাণ। টাকার অঙ্কে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকারও বেশি। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মতো বাঁধ নির্মাণ শুরু না করায় অকাল বন্যায় তাদের একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে গেছে। আর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘সুরমা নদীর পানি সাড়ে ৬ মিটার লেভেল ক্রস করলেই বিপদ সংকেত। সেখানে রোববার রাত পর্যন্ত ছিল প্রায় ৮ মিটার (৫ ফুট)।’ তিনি বলেন, ‘অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের এরই মধ্যে ২১০ টন চাল ও ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর ৬শ’ বান্ডিল টিন, ৩শ’ টন খাদ্যশস্য ও ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন, সারা দেশে তীব্র খরা চলছে। আর সুনামগঞ্জে আকস্মিক মুসলধারে বৃষ্টিতে নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আমি এটাকে দুর্যোগই বলব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতি পাওয়া গেলে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। কিছুতেই অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসর উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘বিপদসীমা অতিক্রম হয়েছে আরও দু’দিন আগে। এখন প্রতি ঘণ্টায় পনি বিপদসীমারও ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের চেরাপুঞ্জিতে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি আমাদের ক্ষতি করছে। সেখানে মঙ্গলবার ১৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়। এই বৃষ্টির সম্পূর্ণ পানিই সুমরা নদী হয়ে সুনামগঞ্জের হাওরে ঢুকছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধের যে ডিজাইন করেছে তা হচ্ছে ৬ দশমিক ৫ মিটার। আর ৮ দশমিক ২ মিটার (প্রায় ৫ ফুট) ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মাত্রারিক্ত বৃষ্টিই এই অকাল বন্যার কারণ বলে তিনি মনে করেন।

বিক্ষোভ : হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন উপজেলায় হাওর তলিয়ে যাওয়ায় ঠিকাদার ও পাউবো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছেন কৃষকরা। মঙ্গলবার জামালগঞ্জের মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। এর আগে, সোমবার জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জের উথারিয়া বাঁধ ভেঙে দেখার হাওরে পানি প্রবেশ করে। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা তিন ঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ অবরোধ করে রাখে।

চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের ৩৭টি বড় হাওরসহ মোট ৪২টি হাওরের ফসল রক্ষার জন্য ২২৫টি পিআইসি এবং ৪৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পিআইসির জন্য ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং দরপত্রের মাধ্যমে কাজ করার জন্য ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই মোটা অঙ্কের বরাদ্দের পরও গত মৌসুমে পাহাড়ি ঢল ও অকাল বন্যা আঘাত হানে বোরো ফসলের ওপর। হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে দুই লাখ হেক্টর জমির ফসলের প্রায় ৮০ ভাগ তলিয়ে যায়।

কৃষকরা জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু করার কথা থাকলেও বরাদ্দকৃত টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার উদ্দেশ্যে অনেক বাঁধে কাজই করেননি পাউবোর ঠিকাদাররা। আর যেসব বাঁধে কাজ হয়েছে তার বেশিরভাগ নামমাত্র। জেলার দিরাই, শাল্লা, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ সরেজমিন ঘুরে কৃষকের এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। শনির হাওরের বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ঠিকাদারের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হলেও বাঁধে নামমাত্র কাজ করেছেন পাউবোর ঠিকাদার পার্থ। বেশিরভাগ বেড়িবাঁধে এক কোদাল মাটিও ফেলা হয়নি। যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সুনামগঞ্জ ও তাহিরপুর : সরেজমিন দেখা গেছে, শনির হাওরের লালুরখলা বাঁধে তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বুরহান উদ্দিনের নেতৃত্বে শতাধিক মানুষ বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন। ওই হাওরের নান্টুখালী, ঝালখালী বাঁধও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজামান কামরুল বলেন, উপজেলার বেশিরভাগ হাওরের ফসল চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব বাঁধ মেরামতের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে, যেটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের করার কথা ছিল। তিনি আরও বলেন, কৃষকের একটি মাত্র ফসল রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মানুষের ভাগ্য নিয়ে প্রতিবছর খেলা শুরু করে। গত বছরও বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে ফসল হারিয়েছেন কৃষকরা। এবারও যদি এর পুনরাবৃত্তি ঘটে তাহলে মানুষের বেঁচে থাকার উপায় থাকবে না।

ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনারথাল, ফাসুয়া, গুরমা, বোয়ালা, শালদিঘা হাওরসহ কয়েকটি হাওর তলিয়ে গেছে। ফাসুয়া নদীর পাশে যে বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসল তলিয়ে যায় সেটি নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ছিল ১০ লাখ টাকা। স্থানীয়রা জানান, চৈত্র মাসের শেষ পর্যায়ে এসেও বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ না করায় পানির চাপে এটি ভেঙে যায়। বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি ও চামরদানী ইউপি চেয়ারম্যান জাকিরুল আজাদ মান্না অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাছ ধরার জন্য রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা বাঁধটি ভেঙে দিয়েছে।

জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার অন্যতম প্রধান হাওর নলুয়ার হাওরের ডুমাখালী, শালিকা ও মাছুয়াখালী বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। গত দু’দিন ধরে প্রাণপণ চেষ্টা করেও শেষরক্ষা করতে পারেননি কৃষকরা। এখানে বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কৃষকদের।

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্তকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, এ বছর নলুয়ার হাওরসহ উপজেলার ছোট-বড় ১৫টি হাওরে ২৫ হাজার হেক্টর বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে নলুয়ার হাওরে ১০ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে।

দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় একের পর এক বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে বোরো ফসল। দিরাই উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, এরই মধ্যে বরাম ও টাংনীর হাওর তলিয়ে গেছে। অন্য হাওরগুলো রক্ষায় এলাকার মানুষ দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের টাকায় এখন বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবং বাঁধের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় কালিয়াকোটা হাওর, ছায়ার হাওরসহ ২৭টি হাওরের অনেক পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। স্থানীয় মানুষ রাত জেগে সেই বাঁধগুলো পাহারা দিচ্ছে। তিনি পাউবোর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওরে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ৭ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়।

সিলেট ও জকিগঞ্জ : সিলেটে ২৭ হাজার ৬৫৫ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ১০ হাজার ৪২, হবিগঞ্জে আড়াই হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। চোখের সামনে ক্ষেতের কাঁচা-পাকা ধান তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা এখন দিশেহারা। ঋণের টাকা পরিশোধ আর বছরব্যাপী সংসার চালানোর দুশ্চিন্তায় তাদের ঘুম হারাম। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এবার সিলেটের চার জেলায় ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৪ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে সিলেট সদর, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, বিশ্বনাথ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জের নিন্মাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

মৌলভীবাজার কুলাউড়া ও বড়লেখা : জেলার প্রায় ১০ হাজার ৪২ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে বোরো চাষীদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, সদর উপজেলার কাঞ্জার হাওর, মানিক হাওর, হাইল হাওর ও কাউয়াদীঘি হাওর পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে আবাদকৃত ১০ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৩১৫ হেক্টর, শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওর পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে আবাদকৃত ৯ হাজার ৫৬৬ হেক্টর জমির মধ্যে ৩২ হেক্টর, রাজনগর উপজেলার সোনাদীঘি, কাইয়াদীঘি ও সিঙ্গাহুরা হাওর পানির নিছে তলিয়ে গিয়ে আবাদকৃত ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমির মধ্যে ৫৯৫ হেক্টর, কমলগঞ্জ উপজেলার কেওলার হাওরের ৩ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হেক্টর, কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর, ডলডল হাওর, রফিনগর হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

হবিগঞ্জ ও বানিয়াচং : জেলার পাঁচ উপজেলার আড়াই হাজার হেক্টর জমির ফসল বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারা ও মেঘনা নদীর বাঁধ ভেঙে ও উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত আজমিরীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি আগাম বানের পানিতে ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক স্থানে নদীর পানি আটকাতে স্বেচ্ছায় বাঁধ মেরামতে কাজ করে যাচ্ছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, বানিয়াচং উপজেলার মাহতাবপুরে খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করায় ডুবছে ফসলি জমি। লাখাইয়ে পানি আসছে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের মেঘনা নদীর বাঁধ উপচে। আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওর ডুবছে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে।

কিশোরগঞ্জ ও ইটনা : মঙ্গলবার জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়ন সরেজমিন পরিদর্শনকালে হালালপুর গ্রামের কৃষক বিশ্বজিৎ দাস জানান, তিনি এ বছর ১০ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। তার পুরো জমি এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণ ও মহাজনি সুদের বোঝার পাশাপাশি পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবেন সে চিন্তায়ই এখন দিশেহারা। একই ইউনিয়নের কলমা গ্রামের সমরেন্দ্র দাসও ১০ একর জমিতে, বর্গাচাষী আবদুল কালাম ৩ একর ও শহীদ মিয়া ২ একর জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। তাদের জমির ফসলও পানিতে ডুবে গেছে।

নেত্রকোনা ও কেন্দুয়া : জেলার বিভিন্ন হাওরে ফসল রক্ষার বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে। এতে অন্তত সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ফসল নষ্ট হওয়ার আশংকায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, বাঁধে অনিয়ম, গাফিলতি, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ না করায় সারা বছরের চলার একমাত্র ফসল হারাতে বসেছেন। হাওরাঞ্চলের কৃষকদের এখন হাহাকার ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

কেন্দুয়া উপজেলায় পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের বোরো ফসলের জমি। ইতিমধ্যে উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়নের জালিয়ার হাওরে সাইডুলি নদীতীরবর্তী প্রায় তিন একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এদিকে জালিয়ার হাওরের হাজার হাজার একর ফসলি জমির রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/04/05/115129/