৫ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ৯:৩৬

জনপ্রতিনিধির ওপর খড়গ

স্থানীয় সরকারব্যবস্থা নিয়েই উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা

তৃণমূল জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রশাসনের জনপ্রতিনিধিদের ‘দায়িত্ব পালন’ কার্যত অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। যখন তখন তাদের ওপর নেমে আসছে আইনের খড়গ। এ জন্য জন্য স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯ এ অপপ্রয়োগকে দায়ী করা হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের বাইরে যারা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হচ্ছেন তাদের হয় কারাগারে, নয়তো বরখাস্ত হতে হচ্ছে। স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯ এর ১২(১) ধারায় জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হলেও ওই আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনের পর সোয়া তিন বছরে প্রায় চার শ’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরখাস্ত করেছে। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ব্যক্তি হওয়ায় চার সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৩৫ পৌর মেয়র, ৫৬ কাউন্সিলর, ৪৯ উপজেলা চেয়ারম্যান, ৬৬ ভাইস চেয়ারম্যান, শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান. শতাধিক মেম্বারসহ প্রায় চার শ’ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তের কারণ হিসেবে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দেখানো হলেও অধিকাংশের বিরুদ্ধে দেখানো হয় রাজনৈতিক সহিংসতায় ঘটা ফৌজদারি মামলা। এক যুগ দেড় যুগ আগের দায়ের করা মামলায়ও হঠাৎ জনপ্রতিনিধিদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে দফায় দফায় বরখাস্ত করা হয়। উচ্চ আদালত ওই বরখাস্তের উপর স্থগিতাদেশ রায় দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়ার পর নতুন করে মামলায় নাম জড়িয়ে তাদের হয় গ্রেফতার, নয়তো বরখাস্ত করা হয়েছে। সরকারি আদেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ। তিনি বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। এ কোন দেশে বসবাস করছি? জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এভাবে বরখাস্ত করা শুভ নয়। যে ধারায় জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হয়েছে সেগুলোর তীব্র সমালোচনা করে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, আইনের ধারাগুলো সরকার খড়গ হিসেবে ব্যবহার করছে। বিরোধী মতের জনপ্রতিনিধিদের ভীতসন্ত্রস্ত রাখা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য করার জন্যই এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। এ ঘটনাকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের মাধ্যমে আমলানির্ভর প্রশাসন গড়ার অপচেষ্টা হিসেবে অবিহিত করে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। যাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে তাতে ক্ষমতাসীন দলের একজনও নেই। এর মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেটকে ভুন্ডল করা হচ্ছে। এটা গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনপ্রতিনিধিদের এভাবে বরখাস্ত গণতন্ত্রচর্চার জন্য সুখকর নয়। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড, তোফায়েল আহমদ বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ ট্র্যাডিশন আগেও ছিল। তবে বর্তমানে এটা ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করেছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউছকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে গতকাল তাদের বরখাস্তের আদেশে স্থাগিতাদেশের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। এর আগের দিন একই আদেশ দেয় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুর হক চৌধুরীর ক্ষেত্রে। উল্লেখ্য, আদালতের আদেশে রাজশাহী, সিলেট সিটি ও হবিগঞ্জ পৌরসভার তিন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু হবিগঞ্জের মেয়র গউসকে দুই সপ্তাহ, সিলেট মেয়রকে তিন ঘণ্টা এবং রাজশাহীর মেয়রকে ১০ মিনিট দায়িত্ব পালনের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করে। তিন মেয়র বরখাস্ত নিয়ে যখন তোলপাড় তখনই বরখাস্ত করা হয় মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান জার্জিস হোসেনকে। গত সপ্তাহে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি পৌরসভার মেয়র মুরতুজা সরকার মনিক ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোতাহার আলী বরখাস্ত হন। ৩০ মার্চ বরখাস্ত হন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ও ফরিদপুরের সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামান। ২৩ মার্চ গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আবু কাউছার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকার ও কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে যাওয়ার কয়েক মিনিট-ঘণ্টা-দিন পর রাজশাহী, সিলেট সিটি করপোরেশন ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করার ঘণ্টায় দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, বøগ, টুইটার ও পাঠক মতামতে সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হয়। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সর্বত্র। কেউ কেউ আদালত অবমাননার অভিযোগ ভুক্তভোগীদের উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। দেশের বুদ্ধিজীবী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, আইন বিশেষজ্ঞরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এ ঘটনাকে গণতš,¿ জনগণের ভোটের অধিকারের উপর আঘাত হিসেবে অবিহিত করেন। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯ এ অপপ্রয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। দেশি মিডিয়ার পাশাপাশি ঘটনায় বিদেশি মিডিয়াগুলোতেও ফলাও করে প্রচার করা হয়। ঢাকায় আইপিইউ সম্মেলনে যখন গণতন্ত্র, ভোটের অধিকারের প্রতি সোচ্চার হওয়ার সেøাগান তোলা হচ্ছে তখন সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত তিন মেয়রকে বরখাস্তের ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন সরকারের নীতি নির্ধারকরা। নীতি নির্ধারকদের কেউ কেউ মেয়রদের বরখাস্তের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানেন না এটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার ইত্যাদি বলে দায় এড়ানো চেষ্টা করলেও আইপিইউ সম্মেলন চলার সময় প্রায় চার শ’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্তের খবর মিডিয়ায় প্রচারণায় সরকার কোণঠাসা অবস্থায় পড়ে যায়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রফেসর এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে দফায় দফায় ২১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে তিনি কারাগারে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পরই তাকে আবার গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। প্রফেসর এম এ মান্নান, আরিফুর রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জি কে গউসসহ বিএনপির নেতারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেই কারাগারে নেয়া হয় এই ভয়ে অনেকেই স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। জানা গেছে, মেয়র নির্বাচিত হলে কারাগারে যেতে হবে সে চিন্তা থেকেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশরেন মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেননি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
স্থানীয় সরকার বিভাগ আইন-২০০৯ এ বলা হয়েছেÑ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ কোনো জনপ্রতিনিধি যে কোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলে (আদালতের চার্জশিট গৃহীত) কিংবা ওই জনপ্রতিনিধি শারীরিকভাবে সক্ষমতা হারালে কিংবা পরিষদের সভায় পরপর তিনবার অনুপস্থিত থাকলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারে। তবে সিলেট সিটির করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আইনজীবী তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার আইনের ২০০৯ এর যে ধারা প্রয়োগ করে আরিফুল হককে অপসারণ করা হয়েছে, সেই আদেশের কার্যকারিতা আদালত স্থগিত করে দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে নাম থাকলেই কেউ অপরাধী হয়ে যায় না এই যুক্তি আদালত গ্রহণ করেছে। স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতাসীনরা ইচ্ছামতো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে যাতে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিষয়ে ১৯৯২ সালে সোনারগাঁও উপজেলা চেয়ারম্যান ‘কুদরত-ই এলাহী পনির বনাম বাংলাদেশ’ শীর্ষক মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ একটি রায় দেন। ওই বেঞ্চে অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বিচারপতি এ টি এম আফজাল, বিচারপতি মোস্তফা কামাল ও বিচারপতি লতিফুর রহমান। তারা সবাই পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। আবার মুহম্মদ হাবিবুর হরমান ও লতিফুর রহমান তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ তো প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ ধারায় স্থানীয় সরকার বিষয়ক আইন প্রসঙ্গে ওই রায়ে বলা হয়েছিল- ‘স্থানীয় বিষয়গুলোর ব্যবস্থাপনা করবে স্থানীয় পরিসরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। যদি সরকারি অধিকর্তা কিংবা তাদের ভৃত্য বা অনুসারীদের স্থানীয় সরকার পরিচালনায় নিয়ে আসা হয়, তাহলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেগুলো রাখার কোনোই মানে হয় না’। অথচ গণহারে যেভাবে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হচ্ছে, তা উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনার চরম লঙ্ঘন।
জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, এ ধরনের আইনের সুযোগে সামরিক শাসকরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণ করতো। বর্তমান সরকারও তাই করছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ক্ষমতাচ্যুত করা গণতন্ত্রের জন্য অশুভ, গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। একজন যে কোনো দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। জনগণ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে সেই ব্যক্তি আর দলের থাকে না। সে জনগণের হয়ে যায়। কিন্তু আইন নিজেদের মতো ব্যবহার করে সেই প্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য অশনি সঙ্কেত। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সরকার আমলাদের খুশি করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইন-৯ অপব্যবহার করছে। মন্ত্রণালয়ের আইনের এই অপব্যবহার বলে দেয়, দেশে নব্য বাকশালী শাসন কায়েম হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারা বিচার ব্যবস্থাকে তোয়াক্কা করছে না। প্রহসনের নির্বাচনে জনগণের ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপতিনিধিদের বরখাস্ত করছে। আইপিইউ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভাষণ দিয়েছেন, তিন মেয়রকে বরখাস্ত তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এভাবে মন্ত্রণালয়ের আইনের অপব্যবহার করা হলে ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। এখনো মন্ত্রিসভায় তিন ব্যক্তি রয়েছেন যারা সর্বোচ্চ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত। অথচ ১০ বছর ১৫ বছর আগের মামলায় বিএনপির মেয়রদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে তাদের বরখাস্ত করা হয়। আওয়ামী লীগ যে নব্য স্বৈরতন্ত্রের মাধ্যমে আদালত, আইনের অবজ্ঞা করছে, মন্ত্রণালয়ের আইন প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর প্রয়োগ করছে তা এক সময় তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। আসলে সোয়া তিন বছরে বিরোধী রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী প্রায় চার শ’ জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করে আওয়ামী লীগ দেশবাসীকে যে বার্তা দিলো তাহলো- জনগণ নয়; প্রতিবেশী ভারতের পাশাপাশি পুলিশ আর আমলা তাদের ক্ষমতার হাতিয়ার। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তিন বছরে যাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তারা সবাই বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের। এ সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন জনপ্রতিনিধিকেও বরখাস্তের খবর নেই। তার মানে আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নেই? আসলে ঘটনা সেটা নয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে স্থানীয় সরকার আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে আইনের অজুহাতে এসব করা হচ্ছে। এতে করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হলে এগুলো বন্ধ করতে হবে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করতে ও রাজনৈতিক ময়দান থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা মামলা দেয়া ঠিক নয়। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে চাইলে বিদ্যমান আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা পুনর্মূল্যায়ণ করতে হবে।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/73226/