৪ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:২৭

ভেঙ্গে গেছে তিনটি সেতু ॥ ক্ষতি অন্তত ১শ’ কোটি টাকা

অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলায় ডলু সেতুসহ প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, চাম্বী সেতুসহ প্রায় ৩০টি বক্স কালভার্ট ভেঙে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনটি সেতু ভেঙ্গে গেছে। এতে অন্তত ১শ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিগগির ব্যাপক কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, ও একটি মন্দির ডলুখালে ধসে পড়বে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবে এলাকাবাসি। সরকারের প্রভাশালী মহল বালুমহাল ইজারা নিয়ে দরপত্রের শর্ত লঙ্গন করে বালু উত্তোলন করছেন যার ফলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছেন। এতে বলি হতে চলেছে এলাকার সাধারণ লোকজন।
স্থানীয়রা জানায়, পুটিবিলা বালুমহাল-২ এলাকায় ড্রেজার দিয়ে গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলনের ফলে ডলুখালের দুইপাশে প্রচন্ড ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। এই ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে এলাকার শত শত পরিবার তাদের বসত-ভিটা হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়বে। মাওলানা পাড়া জামে মসজিদ ও বড়–য়া পাড়া বৌদ্ধ মন্দির চলতি বর্ষায় রক্ষা হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এছাড়া হাজার হাজার মানুষের যাতায়তের একমাত্র সড়কও ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। পুটিবিলা বালুমহাল-২ এর নিষ্টুর থাবা থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট প্রসাশনের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো প্রকার সুফল পায়নি বলে জানান তারা।
লোহাগাড়া উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, চলতি বছরের ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পুটিবিলা বালুমহাল-২ পুনরায় ইজারা দেওয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এই বালু বালুমহালের করালগ্রাসে আমার ৬ থেকে ৭ একর কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আরো ৩ থেকে ৪ একর জমিও বিলিন হওয়ার পথে। তিনি পুটিবিলা বালুমহাল-২ এর ইজারা বাতিল চেয়ে চলতি বছরের ৩০ মার্চ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন।
দরপত্র বিজ্ঞপ্তির শর্তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, সেতু, সড়ক, মহাসড়ক, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার সন্নিকটবর্তী স্থান এবং পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করে এমন কোন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না।
পরিবেশবিদরা জানান, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র বালু তুললে নদী বা খালের গভীরতা যেমন বাড়ছে, তেমনি প্রশস্ততা বেড়ে যায়। এতে কৃষিজমি ধ্বংস হয়, নষ্ট হয় জীববৈচিত্র।
এ ব্যাপারে পুটিবিলার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম বলেন, উপজেলা সমন্বয় সভায় এ ব্যাপারে কার্যবিবরণী তৈরি করে জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। প্রতিবাদ করায় উল্টো আমার বিরুদ্ধে ১৪টি মিথ্যা মামলা দিয়েছিল বালু ব্যবসায়ীরা।
পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদ ২ নং বড়–য়া পাড়া এলাকার সদস্য সুজিত বড়–য়া বলেন, পুটিবিলা বালুমহাল-২ এলাকায় বালু উত্তোলনের ফলে এখানকার পুরাতন বৌদ্ধ মন্দির নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে ডলু নদীর করালগ্রাসে।
পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদ ৩ নং মাওলানাপাড়া এলাকার সদস্য নাছির উদ্দিন বলেন, পুটিবিলা বালুমহাল-২ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে নিলাম দিচ্ছে। নিলাম নিয়ে ইজারাদাররা ডলুখাল থেকে বালু উত্তোলন করছেন। বালু উত্তোলনের ফলে খাল গভীর হচ্ছে। গভীর হওয়ার ফলে খাল নদীতে পরিণত হচ্ছে। ফলে শিগগির এখানকার ঘরবাড়ি নদী গর্ভে হারিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে এ খালের ওপর নির্মিত তিনটি সেতু ভেঙ্গে গেছে।
পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদ নালারকুল এলাকার মহিলা সদস্য শাহিন আক্তার বলেন, পুটিবিলা বালুমহাল-২ থেকে খালের পাড় গেষে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে গভীর গর্ত করে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে। ফলে এলাকার ব্যাপক কৃষি জমি ইতিমধ্যে খালের সাথে বিলিন হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুচ বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পুটিবিলা বালুমহাল-২ দীর্ঘদিন ধরে ইজারা দিচ্ছেন। নিলাম গ্রহীতা এই বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন করছেন। ফলে ডলুখাল গভীর থেকে আরো গভীর হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে অপুরনীয় ক্ষতি হবে। বর্তমানে ডলুব্রিজ ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় ব্রিজটি ধসে পড়তে পারে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি প্রশাসন ম্যানুয়াল ভলিউম-৩ এর ৯ ধারার ৩ উপধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে পুটিবিলা বালুমহাল-২ বিলুপ্ত করার জন্য এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।

 

http://www.dailysangram.com/post/278397-