২৮ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:৫৫

জাতীয় দিবসের অজুহাতে বাস ভাড়া বৃদ্ধি!

জাতীয় দিবসের অজুহাতে বাস ভাড়া বাড়িয়েছে সাভার ইপিজেড থেকে নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড (এ-১৯২নং) রুটে চলার অনুমতি পাওয়া পরিবহন কোম্পানি লাব্বাইক (প্রা.) লিমিটেড। গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করে কোম্পানিটি। বিষয়টি পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতিকে অবহিত করা হলে স্বাধীনতার মাস উপলক্ষ করে আবারো বর্ধিত হারেই ভাড়া আদায় করছে কোম্পানিটি। এ বিষয়ে রুটে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কোনো নীতিমালাই মানছে না লাব্বাইক (প্রা.) লিমিটেড। সাভার ইপিজেড থেকে নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড পর্যন্ত চালাতে এই বাস কোম্পানিকে অনুমতি দিয়েছে বিআরটিএ। কিন্তু সাভার ইপিজেড পর্যন্ত না গিয়ে সাভার পর্যন্তই তাদের রুটের সীমানা নির্ধারণ করেছে কোম্পানিটি। এতে ১২ দশমিক ৮ কিলোমিটার এলাকার যাত্রীরা পরিবহন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া সাভার ইপিজেডের পর থেকে সাভার বাজার, গাবতলী, আসাদগেট, ফার্মগেট, বাংলামটর, মগবাজার, রাজারবাগ, খিলগাঁও ফাইওভার, বাসাবো, মুগদা, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত স্টপেজ নির্ধারণ করে দিলেও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করছে তারা। এসব নিয়মনীতির বাইরে সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাচরিতা হচ্ছে বিআরটিএ’র ভাড়ার চার্ট একেবারেই মানছে না কোম্পানিটি। নিজেদের মতো করে চার্ট তৈরি করে বাসের ভাড়া আদায় করছে। বিআরটিএ’র চার্ট অনুযায়ী সর্বনি¤œ ভাড়া সাত টাকা হলেও এই কোম্পানির সর্বনি¤œ ভাড়া ১০ টাকা। বিআরটিএ’র চার্টে সাভার থেকে গাবতলী পর্যন্ত ২২ টাকা নির্ধারিত থাকলেও লাব্বাইক নির্ধারণ করেছে ২৫ টাকা। সাভার থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়া হচ্ছে ৩৩ টাকা, কিন্তু লাব্বাইক যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছে ৪০ টাকা। আর সাভার থেকে বিআরটিএর চার্টে মগবাজার পর্যন্ত ৩৮ টাকা হলেও এই কোম্পানি ভাড়া নিচ্ছে ৫০ টাকা। সাভার থেকে যাত্রাবাড়ীর বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়া হচ্ছে ৫০ টাকা। কিন্তু তারা ১৫টা বাড়িয়ে নিচ্ছে ৬৫ টাকা। আর সর্বশেষ সাভার থেকে নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়া হচ্ছে ৫৯ টাকা, কিন্তু সানারপাড় পর্যন্ত গিয়েই লাব্বাইক তাদের নিজস্ব চার্টে ১৬ টাকা বাড়িয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ৭৫ টাকা আদায় করছে। এমন করে প্রতিটি স্টপেজেই বিআরটিএ’র নিয়ম না মেনে নিজেদের গড়া চার্ট দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে এই পরিবহন প্রতিষ্ঠানটি।
লাব্বাইক পরিবহনে ভ্রমণ করেন, এমন যাত্রীদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২১ ফেব্রুয়ারির আগে বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ১১ টাকা বেশি আদায় করত লাব্বাইক কোম্পানি। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আরো পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ১৬ টাকা বেশি আদায় করছে। এ নিয়ে বাসের স্টাফদের সাথে প্রায়ই বাগি¦তণ্ডা হয় যাত্রীদের। জানানো হয় ট্রাফিক পুলিশকেও। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এরপর গত ২০ মার্চ মালিবাগ মোড়ে লাব্বাইক পরিবহনের একটি বাসে স্টাফ ও যাত্রীদের সাথে বাগি¦তণ্ডা চলাকালে বিষয়টি জানানো হয় পরিবহন মালিদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহকে। তিনি পরিষ্কার বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাস ভাড়া বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। বিআরটিএ’র নির্ধারিত চার্ট অনুয়ায়ী যাত্রীরা ভাড়া দেবেন। এর বেশি নেয়া হবে না। তবে এই অভিযোগ জানানোর পরে বর্ধিত ভাড়ার চার্টে তারিখের পরিবর্তন এসেছে। ২১ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে মার্চের ৪ তারিখ বসানো হয়েছে লাব্বাইকের চার্টে।
লাব্বাইক পরিবহনের কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের কাছে ভাড়া বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি অতিরিক্ত হারে ভাড়া আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ জন্য বিআরটিএ তাদের কোম্পানির কাছে কারণও জানতে চেয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে বিআরটিএ’র কাছে জবাবও দেয়া হয়েছে। তবে এখনো ভাড়া নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত হারেই। এ ব্যাপারে লাব্বাইক পরিবহনের একটি বাসের স্টাফ ফরিদ জানান, কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করে ভাড়া বৃদ্ধির মালিকপক্ষের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে খুব কষ্ট হয়। যাত্রীদের সাথে প্রতিদিনই বাগি¦তণ্ডা এমনকি হাতাহাতিও হয়। এর পরও কিছু করার নেই।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/207356