২৮ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:৫০

আসন্ন রমযানকে টার্গেট করে নিত্যপণ্যের মজুদ বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা

আসন্ন রমযানকে টার্গেট নিয়ে এখন থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ গড়ে তুলছে ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যেই তেল চিনি ছোলা আর ডালের বড় চালান দেশে আসতে শুরু করেছে। রমযানের আগেই আরো কিছু পণ্যের মজুদ বাড়ানোর চিন্তা করছে তারা। রমযানের আগে নিত্যপণ্যের এই মজুদকে অবশ্য স্বাভাবিক ঘটনাই মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য মতে বিশ্বব্যাপীই রমযানের আগে কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই এদেশের ব্যবসায়ীরাও নিয়মিত চাহিদার আলোকেই কিছু পণ্যের মজুদ বাড়ায়। পণ্যের এই মজুদ বাড়লেও রমযানের আগে দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।


সংশ্লিষ্টদের মতে, রোজা শুরু হতে এখনো দুই মাস বাকি। রমযান ঘিরে এরই মধ্যে বেশকিছু ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও মজুদ বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সহনীয় দাম ও রোজার আগমুহূর্তে প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে ব্যবসায়ীরা এ কৌশল নিয়েছেন। এদিকে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, গমসহ বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বাড়তি চাহিদার কারণে রোজা শুরুর এক মাস আগেই এসব পণ্যের দাম তুলনামূলক বেড়ে যায়। তাই দাম বাড়ার আগেই এসব পণ্য আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই রমযানের ভোগ্যপণ্যের আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।


চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্দরের তথ্যমতে, বন্দরে এখন প্রায় ২২/২৩টি বড় জাহাজ থেকে ভোগ্যপণ্য খালাস হচ্ছে। এসব জাহাজে প্রায় ১০ লাখ টন মটর, মসুর ডাল, অপরিশোধিত চিনি, ভোজ্যতেল ও লবণ রয়েছে। এসব পণ্য খালাস শেষ হতে মার্চের শেষ পর্যন্ত সময় লাগবে। এছাড়া কনটেইনারে করেও ছোলাসহ ডালজাতীয় পণ্য আমদানি বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে ছোলা এসেছে ২৭ হাজার টন। যদিও স্বাভাবিক সময়ে ছোলা আমদানি হয় প্রতি মাসে গড়ে ১০ হাজার টন। রোজার আগেই এই বিপুল পরিমান পণ্য আমদানির প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকায় গত বছরের তুলনায় পণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। মে মাস পর্যন্ত ভোগ্যপণ্যের আমদানি বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে।


বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় যেসব পণ্য রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে গম। বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, মোট ১১টি জাহাজে প্রায় ছয় লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। আর কাস্টমসের হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে গম আমদানি হয়েছে ২৮ লাখ টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আট লাখ টন বেশি।


গত কয়েক মাসে চিনি আমদানি কমে এলেও এখন বন্দরে একসঙ্গে চারটি জাহাজ থেকে চিনি খালাস হচ্ছে। এ চারটি জাহাজে চিনি আনা হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার টন। এসব চিনি এনেছেন পরিশোধন কারখানার মালিকরা। এর আগে চিনি আমদানি হতো প্রতি মাসে গড়ে পৌনে দুই লাখ টন। বন্দরে চলতি মাসে দুটি জাহাজ থেকে ভোজ্যতেল খালাস হচ্ছে। এ দুই জাহাজে ভোজ্যতেল রয়েছে ২০ হাজার টন। এ দুটিসহ ফেব্রুয়ারি মাসে ১২ জাহাজে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টন। এর মধ্যে ৮৭ হাজার টনই অপরিশোধিত সয়াবিন তেল। এর আগে প্রতি মাসে গড়ে দেড় লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি হতো।


কনটেইনারের পাশাপাশি বন্দর দিয়ে বড় জাহাজে করে মসুর ও মটর ডাল আমদানিও হচ্ছে। বন্দরে এখন তিনটি জাহাজে ১ লাখ ৯ হাজার টন মটর ও মসুর ডাল খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ডালজাতীয় পণ্যের আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯২ হাজার টন বেড়েছে। রমযান ঘিরে পণ্য আমদানি ও মজুদ বৃদ্ধির পাশাপাশি পাইকারি পর্যায়ে কয়েকটি পণ্যের দামও বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ছোলার দাম। গেল এক সপ্তাহে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে প্রায় ২৫০ টাকা।


বর্তমানে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ ভালো মানের অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে। ফেব্রুয়ারির শেষভাগে একই মানের ছোলা বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে মাঝারি মানের প্রতি মণ অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও একই ছোলা এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ টাকায়। এ হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে মণপ্রতি প্রায় ২৫০ টাকা। খাতুনগঞ্জের পাইকারি ছোলা ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে ছয় মাস ধরে দফায় দফায় কমে ছোলার দাম। তবে গত সপ্তাহের পর থেকে পণ্যটির দাম আবারো বাড়তে শুরু করেছে।

http://www.dailysangram.com/post/277471-