২৬ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ৭:৩৮

অধিভুক্ত ৭ কলেজ নিয়ে হ-য-ব-র-ল বিপাকে ২ লাখ শিক্ষার্থী

সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর ৭টি কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এসব কলেজে বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ২ লাখ শিক্ষার্থী। এ জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহযোগিতাকে দায়ী করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে আগামী ১লা এপ্রিল জরুরি বৈঠক ডেকেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ঘোর বিরোধিতা করে আসছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের ক্ষমতা খর্ব হবে এমন শঙ্কা যখন সত্য হলো, তখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতছাড়া হওয়া সাত কলেজকে সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা কার্যক্রমের তথ্য না দিয়ে নানাভাবে অসহযোগিতা শুরু করে। প্রথম ধাপে এ সাত কলেজের সব শিক্ষার্থী সব তথ্য ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া চলতি ও আসন্ন পরীক্ষাগুলোর ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনো সহযোগিতা করছে না। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বদিউজ্জামান গ্রেপ্তার হওয়ায় মাস্টার্স চূড়ান্ত বর্ষের সব পরীক্ষা আকস্মিক স্থগিত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খামখেয়ালিতে সাত কলেজের পরীক্ষা, পরীক্ষার ফলাফল
এবং অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এই কলেজগুলোর সব কার্যক্রম তথ্যকণিকা থেকে বাদ দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি এসব তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেও সরবরাহ করছে না। স্নাতক পর্যায়ের ৩০টি বিষয়ের প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত শতাধিক পরীক্ষার ফলাফল চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ২৮শে মার্চ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এ শিক্ষার্থীদের সব কার্যক্রম তথ্যকণিকা থেকে বাদ দেয়ায় এসব শিক্ষার্থী রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন। এরা এখন কেউ জানেন না তাদের পরীক্ষা কবে হবে এবং যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের অপেক্ষায় ছিল, তাও কবে নাগাদ পাওয়া যাবে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা কী নতুন কোনো সেশনজটের হুমকিতে পড়েছি? যারা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং পরীক্ষা শেষ তাদের ফলাফল দেয়া হচ্ছে না। ফলে তারা তৃতীয় বর্ষে ভর্তি এবং পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না। একই পরিস্থিতি অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও। ফলে এ শিক্ষার্থীরা একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ করছেন। শিক্ষার্থীদের তথ্য সরবরাহ না করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ কলেজগুলো আসন্ন পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না।
ঢাকা কলেজের সোহেল আহসান বলেন, আগামী ২৯শে মার্চ আমার পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, আমাদের পরীক্ষা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। কীভাবে পরীক্ষা নেবো? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোন করলে তারা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান। এছাড়া আমাদের সব তথ্য ওয়েবসাইট থেকে মুছে দেয়া হয়েছে। এখন আমরা কী করব?
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এটা নিয়ে সমস্যা চলছে সেটা সবাই জানে। কেউ অসহযোগিতা করছে, এটা বলার আগে এটার সমাধান করা এখন জরুরি। এ জন্য ১লা এপ্রিল সাত কলেজের কর্তৃপক্ষকে নিয়ে মিটিং ডাকা হয়েছে। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।
আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর এই কলেজের তথ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে থাকবে না- এটাই স্বাভাবিক। তবে তাদের তথ্য আমরা দিচ্ছি না- এটা সত্য নয়। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সার্বিক পরিস্থিতি এখন জটিল পর্যায়ে পৌঁছেছে। যত দ্রুত সম্ভব এটার সমাধান না করলে শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দায় এখানে পাওয়া যায়নি। না হয় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভে কোনো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এড়াতে পারবে না।
ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, প্রতিদিন শ’ শ’ শিক্ষার্থীর চাপটা আমরা অনুভব করছি। শুধু আমরা নই, সব কলেজের শিক্ষার্থীরাই এ একই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এখন আমরা আশঙ্কায় রয়েছি কখন এই চাপা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে যায়। আমরা দ্রুত এ অবস্থার সমাধান প্রত্যাশা করছি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এ ব্যাপারে একটি পরিপত্র জারি করে। সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ বছরের ১৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হচ্ছে, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এই সাত কলেজের প্রত্যেকটিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৩০টি বিষয়ে পড়ানো হয়। প্রথম বর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লক্ষাধিক শিক্ষার্থী।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=58890&cat=2/