২৫ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ৯:১৭

দাম বেড়েছে সব নিত্যপণ্যের

মওসুম বদলাচ্ছে তাই সবজির দাম বাড়তি


বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শালগম শিম প্রভৃতি শীতকালীন সবজির সরবরাহ প্রায় শেষের দিকে। আবার বর্ষাকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত কাকরোল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কচু, লতি, পটোল, ঢেঁড়স প্রভৃতি এখনো পুরোপুরি আসতে শুরু করেনি। স্বাভাবিক কারণেই দুই মওসুমের মধ্যবর্তী এ সময়ে বাজারে সবজির দাম বেশ বাড়তি। পেঁপে, করল্লা, বরবটি, বেগুন, শিম, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, কাঁচকলা সবই বিক্রি হচ্ছে অধিক দামে। তবে দাম বাড়লেও বাজারে সবজির কোনো কমতি নেই।
গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। ৫০ থেকে ৫৫ টাকার প্রতি কেজি করল্লার দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গত সপ্তাহে যে শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল সে শিম গতকাল বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে আলুর দাম ছিল ১৬ থেকে ১৮ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া বেগুন গতকাল বিক্রি হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়।
খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শালগম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুরলতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, মুলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শসা ও খিরা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, মটরশুঁটি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রতি হালি কাঁচকলা ২৪ থেকে ৩২ টাকা, লেবু ২০ থেকে ৪০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ১৫ থেকে ২৫ টাকা, প্রতি আঁটি লাউশাক ২৫ থেকে ৩০ টাকা, লালশাক, পালংশাক, ১০ টাকা, পুঁইশাক ও ডাঁটাশাক ১০ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
সবজির বাড়তি দাম প্রসঙ্গে শান্তিনগর বাজারের বিক্রেতা সোলায়মান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, শীতের সবজি এখন আর তেমন আসে না। যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলোরও স্বাদ নেই। আবার গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালীন সবজিও বাজারে অসছে না। আগাম এবং বারোমাসি সবজিগুলোই এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য দাম কিছুটা বাড়তি। বৈশাখ মাস শুরু হলে সবজির সরবরাহ বাড়বে জানিয়ে সোলায়মান বলেন, তখন দাম কিছুটা কমে আসবে। আপাতত মাসখানেক সবজির দাম কমবার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই জানান এই বিক্রেতা।
এ দিকে মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। হাওর-বাঁওড় শুকিয়ে যাওয়ায় সাধারণ মাছের সরবরাহ কমেছে বলে জানান বিক্রেতারা। মাছের দাম কমবার জন্যও বর্ষাকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তারা। ব্যবসায়ীরা জানান, পয়লা বৈশাখ ঘনিয়ে আসায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশের দাম। আকারভেদে দাম বেড়েছে হালিপ্রতি ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। ৯০০ গ্রামের ইলিশের দাম ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি রুই মাছ ২৬০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতলা ৩০০ থেকে ৪০০, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ২০০, সিলভার কার্প ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, আইড় ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মেনি মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বাইলা মাছ ২৫০ থেকে ৫০০, বাইন মাছ ৪০০ থেকে ৫০০, ছোট চিংড়ি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৮০০, পুঁটি ১৮০ থেকে ২০০, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০, মলা ২২০ থেকে ৩০০, পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০, কোরাল ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, বোয়াল ৪৫০ থেকে ৫০০, শিং ৪০০ থেকে ৭০০, মাগুর ৪০০ থেকে ৭০০, শোল মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০, পাঙ্গাস ১৪০ থেকে ১৬০, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে। মিনিকেট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, পাইজম ৪২ থেকে ৪৬ টাকা, নাজির শাইল ৪৫ থেকে ৬০ টাকা ও আটাশ ৪০ থেকে ৪২ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দেশী পেঁয়াজ ২৪ থেকে ৩০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৮ টাকায়। লিটার প্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১০৭ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের ডিমের হালি ৩০ থেকে ৩২ টাকা এবং দেশী মুরগির ডিম ৪৬ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্য দিকে ধর্মঘট নাটকের মাধ্যমে বেড়ে যাওয়া দামেই বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির গোশতের দাম। প্রতি কেজি গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা। খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগিও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। গেল সপ্তাহে ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয় ১৬০ টাকা দরে। এ ছাড়া এক কেজি ওজনের প্রতি পিস কক মুরগি ২৩০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা ও দেশী মুরগি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/206521