১৮ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার, ১১:৫৮

চাল তেলের পর এবার সিন্ডিকেটের নজরে চিনি

চাল, তেল আর পেঁয়াজের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় এবার বাজারে চিনির সিন্ডিকেট সক্রিয়। ক্রমেই চড়া হচ্ছে পণ্যটির দাম। আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে এখন থেকেই তৎপরতা শুরু করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪-৫ টাকা। আর এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে অন্তত ১২-১৫ টাকা। পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম বাড়ায় দেশের বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারির দিকে চিনির বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

আমদানিকারকরা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারির কারণে চিনি উৎপাদন ও আমদানি ব্যাহত হয়েছে। একইসঙ্গে অপরিশোধিত চিনির দাম বাড়ায় দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের অনেক চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদনে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। ফলে চিনির দাম বাড়তে শুরু করেছে। আগামী ১-২ মাসের মধ্যে বাজার আরো চড়া হবে বলে জানান তারা। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বর্তমান খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা দরে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৪-৬৫ টাকা।

রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই মাস আগেও ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে চিনি। সেই চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। তবে বাজার ভেদে দামে তারতম্য রয়েছে। কাওরান বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, সেখানে মানভেদে চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৬২ থেকে ৬৬ টাকায়, আবার মোহাম্মদপুরে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। অনেক দোকানে অবশ্য আগের কেনা চিনি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাওরান বাজারে পাইকারিতে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনি ৩ হাজার ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা কেজিতে পড়ে সাড়ে ৬৩ টাকার মতো। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৭০ টাকায়।

কাওরান বাজারের আমীন স্টোরের পরিচালক মো. বাবলু গণমাধ্যমকে জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ৫-৬ টাকা বেড়েছে। তবে দেশের বাজারে তার প্রভাব এখনো তেমন পড়েনি। আমার জানা মতে ২-৩ টাকা বেড়েছে ৪-৫ টাকা বাড়েনি। তবে ফেব্রুয়ারির দিকে চিনির দাম চড়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বিশ^বাজারে বাড়লে আমাদের দেশেও বাড়বে। অন্যদিকে দেশের অনেক চিনিকল বন্ধ থাকায় দেশে যা উৎপাদন হতো, এবার তার থেকে অনেক কম উৎপাদন হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের বেসরকারি কোম্পানিগুলো মূলত বিদেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে তা পরিশোধনের পর বাজারজাত করে। আর দেশীয় মিলগুলো আখ থেকে চিনি তৈরি করছে। এখন কোম্পানিগুলো বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে মূল্য বৃদ্ধি করছে। জানা গেছে, বেসরকারি কোম্পানিগুলো চিনি পরিশোধন করলেও দেশের চিনির বাজারে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল নিয়ে অস্থিরতা, সরকারি চিনির সরবরাহ ব্যবস্থাপনা সংকটে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। এতে চিনির দাম নিয়ে কারসাজি করার সুযোগ পাচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেট।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সূত্র বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলের মধ্যে চলতি মাড়াই মৌসুমে ছয়টি মিলের উৎপাদন কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলো থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও উৎপাদন হয়েছে ৮২ হাজার টন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ছয়টি মিল উৎপাদন স্থগিত ঘোষণা করায় চিনি উৎপাদন ৬০-৬৫ হাজার টনে নেমে আসবে। ফলে বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানটি ডিলার পর্যায়ে চিনি বিক্রি কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী চিনি না পাওয়ায় এরই মধ্যে চিনির ডিলারশিপ বাতিলে ঝুঁকছেন নিবন্ধিত ব্যবসায়ীরাও।

মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী শফিকুল আলম। তিনি কিছুদিন আগেও চিনির ব্যবসা করতেন। বাজারে অস্থিরতা ও নানা সংকটের ফলে তিনি চিনির ব্যবসা ছেড়ে তেলের ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বড় বড় আমদানিকারকদের সিন্ডিকেটের কারণে আমি ব্যবসা করতে পারিনি। এখানে নানান রকমের সমস্যা আছে, কারসাজি চলে। তাদের সঙ্গে আমার মতো ছোট ব্যবসায়ীরা পেরে ওঠে না।
চিনির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। সে কারণেই সিন্ডিকেট মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ পায়। সরকারি চিনিকলে যেহেতু উৎপাদন কম হচ্ছে তাই বেসরকারি কোম্পানিগুলো আমদানি করছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ আছে। সরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে চিনি আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে দাম স্বাভাবিক থাকবে। অন্যথায় বাজার আরো অস্থির হবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।

https://dailysangram.com/post/440925