১৭ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ১১:৩৮

কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত উত্তরের জনজীবন

শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জনজীবন। রাজশাহী অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলমান থাকার কথা আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হলেও শনিবারই মৌসুমের কনকনে ঠান্ডার দিন ছিল। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা দেবল কুমার মৈত্র জানান, শনিবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দুপুর ১২টায়। দিনের শেষে তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পেয়ে ৯ ডিগ্রির নিচে নেমে যায়। ফলে সন্ধ্যার সময় কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হয়। উত্তরাঞ্চলের মধ্যে শনিবার নওগাঁর বদলগাছীতে সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শহরাঞ্চলের বাইরে গ্রাম জনপদে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পাকড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাকিব। কুয়াশার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। ৪ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করেছে বিমান। ব্যুরো ও প্রতিনিধদের পাঠানো খবর-


রাজশাহী : শুধু রাজশাহীতে নয়, গোটা উত্তরাঞ্চলজুড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। আবহাওয়াবিদ দেবল কুমার মৈত্র আরও জানান, উত্তর ভারতে গত দুই দিন ধরে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির কাছাকাছি অবস্থান করছে। কোথাও কোথাও তুষারপাত হচ্ছে। হিমালয়সংলগ্ন এ অঞ্চল থেকে বৈরী হাওয়ার সঙ্গে কনকনে ঠান্ডাও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ঢুকছে। এর ফলেই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে।

শুক্রবার কিছু সময়ের জন্য সূর্য উঁকি দিলেও শনিবার রাজশাহী অঞ্চলের কোথাও সূর্যের আলো ফোটেনি। আবার দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীত জেঁকে বসেছে। রবি ও সোমবার শীতের তীব্রতা কিছুটা বাড়তে পারে বলে আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে গোটা উত্তরাঞ্চল ছাড়াও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যেতে পারে।

চলমান শৈত্যপ্রবাহের ফলে সন্ধ্যার পরপরই রাজশাহীতে জন চলাচল কমে আসে। ফাঁকা হয়ে পড়ে বাজার ও বিপণিবিতানগুলো। সড়কেও যান চলাচল কমেছে। সন্ধ্যার আগেই হেডলাইট জ্বালিয়ে মহাসড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করছে দিনের বেলাতেও।

রংপুর : শৈত্যপ্রবাহে রংপুর বিভাগের শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে অসহনীয় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শনিবার সকালে রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। রংপুর নগরীসহ বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। কমে গেছে যানবাহন চলাচল। খড়কুটো জ্বালিয়ে অনেকেই শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। মানুষজনের পাশাপাশি কাহিল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে গবাদিপশু ও প্রাণিকুলেও। শুক্রবার সকালে রংপুরে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাপমাত্রা বাড়লেও বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেশি। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান, রংপুরে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। শৈত্যপ্রবাহ আরও দু-তিন দিন থাকতে পারে। রংপুরের ডিসি আসিব আহসান বলেন, এরই মধ্যে নগরীর ছিন্নমূল, প্রতিবন্ধী ও বস্তি এলাকায় ৫১ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। যা বিতরণ প্রক্রিয়ায় আছে।

পঞ্চগড় : শনিবার সারা দিন পঞ্চগড়ে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় সব যানবাহনকে হেডলাইড জ্বালিয়ে চলাচল করে। আর ঘন কুয়াশার কারণে দিন দিন কমছে তাপমাত্রা। শনিবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অব্যাহত কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের কারণে জেঁকে বসেছে কনকনে হাড় কাঁপানো শীত। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মলিন হয়ে উঠেছে প্রান্তিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অবস্থা। এ অবস্থায় দরিদ্র ও শীতার্ত মানুষরা গরম কাপড়ের অভাবে বাড়ির আঙিনায় খড়খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতার্ত মানুষ সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র ও সাহায্য পাচ্ছেন না। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, আগামী সপ্তাহে আরও একটি শৈতপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে শীতের তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে।

লালমনিরহাট : চরাঞ্চলের নদী ভাঙনের কবলে পড়া মানুষ শীতবস্ত্র থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই আত্মমানবতার সেবায় এগিয়ে এসে চরাঞ্চলের অসহায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এ অঞ্চলের অসহায় মানুষ। শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকলে আলু ও গমসহ রবিশস্য মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে বোরো ধানের বীজতলা হলুদ রঙ ধারণ করতে শুরু করেছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি আরও শীতবস্ত্র চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

নীলফামারী ও সৈয়দপুর : শীতজনিত জ্বর-সর্দি ও কাশিসহ নানা ধরনের অসুখ হচ্ছে। পাশাপাশি ছোট বাচ্চাদের অসুখ-বিসুখও বেড়েছে। শীত থেকে বাঁচতে সব শ্রেণির মানুষ পুরনো কাপড়ের দোকানে ভিড় করছেন। এ সময় গরিব ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষেরা কম্বল ও শীতবস্ত্র না পাওয়ায় কষ্টে আছেন। অনেকে গবাদিপশুর গায়ে চট জড়িয়ে দিয়েছেন। শনিবার সকাল থেকে ঘন কুয়াশার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ৪ ঘণ্টা বিলম্বে সব বিমান ওঠানামা করে। ফলে বিমান চলাচলের সিডিউল মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে।

কুড়িগ্রাম : রাতে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ে। কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা থাকলেও শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে এ জনপদ। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ৩ দিন ধরে এ এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে, যা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। জেলার রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরে এ এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে, যা আগামী ৩ দিন অব্যাহত থাকবে। শনিবার দুপুরে জেলার কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলার হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩ দিন ধরে ঠান্ডার কারণে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেই ইনডোরের পাশাপাশি আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন দুই শতাধিক শ্বাসকষ্টজনিত রোগী।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/384621