ব্রিটিশ পার্লামেন্ট চত্বরে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ব্যক্তির লাশ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ : ডেইলি মেইল
২৪ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ৮:২৮

লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলার পর রাতভর অভিযান, ৮ জন গ্রেফতার

লন্ডনে পার্লামেন্টের বাইরে বুধবারের সন্ত্রাসী হামলার পর ব্রিটিশ পুলিশ লন্ডন ও বার্মিংহাম শহরের ছয়টি বাড়িতে রাতভর অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেফতার করেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, হামলাকারী ব্রিটিশ নাগরিক। এ দিকে লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সংগঠনটি হামলাকারীকে তাদের সৈনিক বলে দাবি করেছে। আইএসের নিউজ এজেন্সি আমাক-এর বরাত দিয়ে রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। বুধবারের ওই হামলায় একজন পুলিশ সদস্য ও এক নারীসহ তিনজন নিহত ও বিদেশী নাগরিকসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে ওই হামলাকারী। আহতদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে পুলিশ জানিয়েছে। খবর বিবিসি, ডেইলি মেইল ও আলজাজিরার।
নিহতদের প্রতি গতকাল শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কিছু সময় দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে গতকাল পার্লামেন্টে বলেন, সহিংস তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে হামলাকারীর বিরুদ্ধে অনেক আগে গোয়েন্দারা তদন্ত করেছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার ব্যাপারে গোয়েন্দাদের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। তিনি আরো বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সারা দেশে পুলিশের টহল জোরদার করা হবে। জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
পার্লামেন্টের বাইরে সন্ত্রাসী হামলার পর লন্ডনের সড়কগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলায় লন্ডনবাসী ভীত হবে না। আমি লন্ডনের নাগরিকদের ও পর্যটকদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
লন্ডন পুলিশের কমান্ডার বি জে হ্যারিংটন বলেন, ‘জননিরাপত্তা এ মুহূর্তে আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। আমরা পুরো লন্ডনজুড়ে পুলিশি অবস্থান পর্যালোচনা করছি। অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের মোতায়েন করা হবে লন্ডনজুড়ে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। তারা যদি সন্দেহজনক বা উদ্বেগজনক কিছু দেখেন বা মনে করেন তাহলে আমাদের জানাতে অনুরোধ করছি। এমন কিছু হলে অবিলম্বে ৯৯৯ ডায়াল করুন।’
উল্লেখ্য, লন্ডনে এর আগে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিল ২০০৫ সালের জুলাই মাসে। ওই সময় নগরীর গণপরিবহনে একযোগে বেশ কিছু বোমা বিস্ফোরণে ৫২ জন নিহত এবং ৭০০-এর বেশি মানুষ আহত হন।
অভিযানে কয়েক শ’ পুলিশ : লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সন্ত্রাস দমন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার মার্ক রৌলি বলেছেন, কয়েক শ’ গোয়েন্দা পুলিশ বুধবার রাতভর লন্ডন ও বার্মিংহামসহ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এখনো মনে করি যে, হামলাকারী একাই লন্ডনে হামলাটি চালিয়েছে। তার সাথে আর কেউ অংশ নেয়নি। রৌলি বলেন, হামলাকারীর পরিচয় তারা জানতে পেরেছেন। কেউ তাকে হামলায় কোনোভাবে সহযোগিতা করেছে কি না তা জানার জন্য তারা ব্যাপক তদন্ত ও তল্লাশি চালাচ্ছেন। এর আগে তিনি বলেছিলেন, এই হামলা ইসলামপন্থীদের কাজ হতে পারে বলে তারা মনে করছেন। তবে এখন বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে সে এই হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
হতাহতদের পরিচয় : নিহতদের মধ্যে হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা কিথ পলমার হামলার সময় নিরস্ত্র অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি হামলাকারীকে আটকাতে গেলে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে হামলাকারীর গাড়িচাপায় নিহত নারীর নাম আয়শা ফ্রেড। তিনি ডিএলডি কলেজ নামে একটি কলেজে চাকরি করতেন। কলেজটি ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের কাছেই অবস্থিত। তিনি ব্রিটিশ নাগরিক যদিও তার মা স্প্যানিশ এবং বাবা সাইপ্রাস থেকে ব্রিটেনে আসেন। নিহত অন্য ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি।
এ ছাড়া আহতদের মধ্যে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা, ব্রিটেনের চারজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ ১৬ জন, লন্ডনে বেড়াতে আসা তিনজন ফরাসি স্কুলছাত্র, দণি কোরিয়ার চারজন, গ্রিসের দুইজন, একজন জার্মান, একজন পোলিশ, একজন আইরিশ, একজন চীনা, একজন ইতালিয়ান ও একজন মার্কিন নাগরিক রয়েছেন। তবে টেমস নদী থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তুলে আনা নারীর বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি ব্রিটিশ পুলিশ।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/206272