২৩ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:২৫

অযত্ন আর অবহেলায় খুলনা হার্ডবোর্ড মিলের কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে!

অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে খুলনা হার্ডবোর্ড মিলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। কর্মী সংকটে মিলটির রাষ্ট্রীয় সম্পদ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। মানুষের আনাগোনা না থাকায় খোলা স্থানে জন্মেছে আগাছা। আর টিনে ধরেছে মরিচা। বোর্ড তৈরির মেশিন, গোডাউন, ফিনিশিং কারখানা, চিপার মেশিন, বয়লারসহ মিলের প্রতিটি যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। আর মিল গোডাউনে অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে উৎপাদিত প্রায় আড়াই কোটি টাকার হার্ডবোর্ড। অর্থ সঙ্কটে এক সময়ের স্বর্ণপদক পাওয়া মিলটির ভবিষ্যৎ অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। মিলটি কবে চালু হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না মিল কর্তৃপক্ষ। সাড়ে তিন বছর ধরে বন্ধ থাকায় মিলের শ্রমিকরাও এখন ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন।


মিলের শ্রমিক মোল্লা শহিদুল ইসলাম এখন রিক্সা চালক, মফিজ দিনমজুর, ফারুখ হোসেন রাজ মিস্ত্রী আর জব্বার ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এমনটাই জানালেন খুলনা হার্ডবোর্ড মিল বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোল্লা ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, মিলটি চালু থাকাকালীন সময়ে প্রায় আড়াইশ’ শ্রমিক-কর্মচারী ছিল। ছিল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা, মানুষের পদচারণায় মুখরিত ও কর্মচাঞ্চল্য ছিল গোটা মিল এলাকা। আজ বন্ধ অবস্থায় মানুষের আনাগোনাও নেই, নেই সেই কর্মব্যস্ততা। আছে আগাছা। অযতœ আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ। তিনি আরো বলেন, মিল বন্ধের পর অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে অর্ধাহারে অনাহারে অতি কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। অনেকেই ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। ধার-দেনা আর দিনমজুরের কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। শ্রমিকরা মিল চালু হবে এমন আশায় রয়েছে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে বলে তিনি জানান।


মিল সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২১ এপ্রিল চলতি মূলধন সংকটে, কাঁচামাল ও ফার্নেস অয়েলের ক্রয় করতে না পেরে কর্তৃপক্ষ মিলটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে কয়েক দফা চেষ্টার পর সরকার বিসিআইসি‘র মাধ্যমে মিলটিকে ২০১২ সালের নবেম্বর মাসে শর্তসাপেক্ষে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রায় ৮ মাস মেইনট্যানেন্স কাজ শেষে ২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট মিলটি পুনরায় উৎপাদনে যায়। ওই বছরের ২৫ নবেম্বর অর্থ সংকটে মিলটি ফের বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে প্রায় তিন কোটি টাকার বোর্ড উৎপাদন হয়। পরবর্তীতে কিছু বোর্ড বিক্রি হলেও বর্তমানে মিলে অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে ৪৩ হাজার ৭৩০ পিস হার্ডবোর্ড। যার মূল্য দুই কোটি ৩৬ লাখ ৪২ হাজার ৮২০ টাকা (প্রতি পিচ ৫৪০ টাকা দরে)।


মিলের উপ-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. নুরুল্লা বাহার জানান, মিলটি চালুর বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। মিলটি বন্ধ থাকায় একজন সিকিউরিটি অফিসারসহ অস্থায়ীভাবে ১০ জন সিকিউরিটি গার্ড নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া নিউজপ্রিন্টের নিরাপত্তা কর্মীরাও দেখাশোনা করছেন।


উল্লেখ্য, ভৈরব নদের তীরে নগরীর খালিশপুরে ১৯৬৫ সালে ৯.৯৬ একর জমির ওপর কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন খুলনা হার্ডবোর্ড মিলটি স্থাপন করে। এটি ১৯৬৬ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশী লাভ করায় স্বর্ণপদক পায় খুলনা হার্ডবোর্ড মিল। এ প্রতিষ্ঠানটি ২০০২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার লে-অফ ঘোষণা করে। পরে তারাই ২০০৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পুনরায় চালু করে।

http://www.dailysangram.com/post/276779