২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার, ১০:৩৭

ছাত্রাবাস খোলা রাখা নিয়ে প্রশ্ন

থাকতেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ছয় মাস ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সিলেটের এমসি কলেজও বন্ধ। তবে কলেজটির ছাত্রাবাস খোলা ছিল। শুক্রবার রাতে এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর গতকাল শনিবার শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ছাড়তে বলা হয়।

জানা গেছে, ছাত্রাবাসে বেশ কিছু ছাত্র অবস্থান করত। কিন্তু এর বাইরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দখলে ছিল ছাত্রাবাসের অনেকগুলো কক্ষ। এমনকি ছাত্রাবাসে শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ কক্ষও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দখল করে রেখেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করে।

কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার পর অভিযুক্ত হিসেবে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের ছয় নেতাকর্মীর নাম এসেছে। এর পর থেকেই ছাত্রাবাস খোলা থাকার বিষয়টি সামনে আসে। চাকরি ও টিউশনি করেন—এমন কিছু শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে ‘আনঅফিশিয়ালি’ থাকতেন বলে কলেজ অধ্যক্ষ জানলেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাত্রাবাস দখল করে রাখার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

১২৮ বছরের পুরনো সিলেটের এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গৌরবোজ্জ্বল অতীত রয়েছে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে নানা ঘটনায় কলেজটির ঐতিহ্য ম্লান হতে চলেছে। বিগত ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে কলেজের ছাত্রাবাসটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সে সময় দেশ-বিদেশে ঘটনাটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ছাত্রাবাসটি পুনর্নির্মাণ করে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে আবার চালু করা হয়। এর পর থেকেই ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষ ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ছাত্রাবাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় এবং আবারও ছাত্রাবাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। যদিও এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিও স্থগিত রয়েছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাস নিয়ন্ত্রণ করছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ছাত্রলীগের দখলে। ছাত্রদের পাশাপাশি অনেক অছাত্রও এখানে আস্তানা গেড়েছে। ছাত্রাবাসের ভেতরে নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে তারা। মাদক সেবন ও ব্যবসা, জুয়ার আসর বসানোসহ নানা অপকর্ম চলে ছাত্রাবাসের ভেতরে। অস্ত্র মজুদ করে রাখারও অভিযোগ রয়েছে। তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার পর শুক্রবার রাতেই পুলিশ ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদা ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করে, যে কক্ষে ছাত্রলীগকর্মী ও ধর্ষণ মামলার আসামি সাইফুর থাকেন।

কলেজ ছাত্রাবাসে শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ কক্ষও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দখল করে রেখেছিলেন বলে জানা গেছে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু থানা পুলিশকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েই তারা দায়িত্ব শেষ করে।

ছাত্রাবাস খোলা রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সালেহ আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই কলেজ ও ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি ও টিউশনি করে। সেই সব শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে থাকার জন্য হোস্টেল সুপারের মাধ্যমে আমাকে জানিয়েছিল। তখন আমি হোস্টেল সুপারকে বলেছি যারা বৈধ তাদের কয়েকজনকে ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। তবে ছাত্রাবাসে থাকলেও তারা ছাত্রাবাসের ডাইনিং ও গ্যাস ব্যবহার করতে পারবে না। সে জন্য ছাত্রাবাসের ডাইনিং বন্ধ রাখার পাশাপাশি গ্যাস সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

ছাত্রাবাসে বহিরাগতদের অবস্থান সম্পর্কে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যদি কারো গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কলেজের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুর ১২টার মধ্যে ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন। এরপর দুপুরের মধ্যেই ছাত্ররা ছাত্রাবাস ছেড়ে চলে যায়।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2020/09/27/959639