২২ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ৮:৪২

চাঞ্চল্যকর হত্যার তদন্ত ডিপ ফ্রিজে

ডিপ ফ্রিজে বন্দী পড়ে আছে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্ত। একের পর এক ঘটনা ঘটছে, আর প্রথম দিকে কিছু দিন তোড়জোড় চললেও পরে সেসব মামলার তদন্তে আর অগ্রগতি দেখা যায় না। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, তনু হত্যাকাণ্ড ও মিতু হত্যাকাণ্ডের এই একই পরিণতি। আদৌ এসব হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা কোনো দিন আলোয় আসবে কি না এ নিয়ে সবার প্রশ্ন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর হলো। তখন থেকেই শুধু তদন্ত চলছে। তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। আজ ২১ মার্চ তদন্তে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা রয়েছে আদালতের।
মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি হত্যার ঘটনা ঘটে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব কোনো প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মাযহারুল ইসলাম ২১ মার্চের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ৫ বছরে ৫৫ বারের বেশি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সশরীরে তলব করে মামলার অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন; দীর্ঘসূত্রতায় বিচার বিলম্বিত হচ্ছে উল্লেখ করে দ্রুত চার্জশিট দাখিলের তাগাদা দিয়েছেন। তবু মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উন্মোচনের জন্য নতুন করে আন্দোলনে নেমেছে।
গত বছর ২০ মার্চ কুমিল্লায় নিহত হন কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু। মামলার তদন্ত কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করে তনুর মা আনোয়ারা বেগম সাংবাদিকদের বলেছেন, গত রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে একটি টিঅ্যান্ডটি ফোন নম্বর থেকে তনুর বাবাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। একটি সংস্থার নাম বলে জানানো হয়Ñ চাকরি করতে চান কি না, চাকরি করতে চাইলে চুপ থাকেন। মিডিয়ার সাথে এত কথা বলার দরকার নেই। তনুর মা বলেছেন, আমরা মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে সিআইডির দ্বারে দ্বারে ঘুরে কান্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছি, জানি না বিচার পাব কি না। সিআইডি কর্মকর্তারা শুধুই বলছেন, তনু হত্যাকাণ্ডে রহস্য উন্মোচন হবে এবং ঘাতকেরা শাস্তি পাবে। কিন্তু এ পর্যন্ত বিচার পাবো এমন কোনো কার্যক্রম দেখিনি। যদি সম্ভব হয় প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনী প্রধানের সাথে দেখা করে মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাইব।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি-কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সেনাবাহিনীর মহড়া হওয়ায় আমরা তদন্ত কাজ করতে পারিনি। ফেব্রুয়ারিতে কিছু কাজ করেছি। তনুর লাশের পাশে পড়ে থাকা স্যান্ডেল, কলম, মোবাইল ফোন ব্যাগসহ কয়েকটি জিনিসের ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপো করছি। রিপোর্ট পেলে আরো বেশি কাজ করা যাবে।
তনু হত্যার বিচার দাবিতে গতকালও কুমিল্লা ও ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। হত্যাকারীরা শনাক্ত না হওয়ায় ওই সব কর্মসূচি থেকে হতাশা প্রকাশ করা হয়।
গত বছরের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে খুন হন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনার পরদিন পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তার বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় কূলকিনারা করতে পারেননি তদন্তকারীরা। কে খুন করল, কার নির্দেশে খুনের ঘটনা ঘটল তা এখনো জানা যায়নি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/205711