২২ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ৭:৫৪

বেড়েই চলেছে চালের দাম

সরকারি হিসাবে দেশে চালের উৎপাদন হয়েছে মোট দেশজ চাহিদার অতিরিক্ত। সরকারিভাবে চাল রফতানির ঘোষণার বাস্তবায়নও দেখেছে দেশবাসী। অবশ্য আমদানিকারকেরাও বসে নেই। গত এক বছরে আমদানি হয়েছে আট লাখ টনের মতো। নিজস্ব তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, দেশে চালের কোনো সঙ্কট নেই। অথচ গত এক মাস ধরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যটির দাম বেড়েই চলেছে। সরকারিভাবে ১০ টাকায় চাল বিক্রির কার্যক্রম চললেও সাধারণ মানুষকে প্রতি কেজি চালের জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত।
বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও চালকল মালিকেরা কয়েক দফায় দাম বাড়িয়েছেন। তাদের ওপর ভর করে দাম বাড়িয়েছেন আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতারাও। রাজধানীর পাইকারি চালের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং সরু ও মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে গড়ে ২০০ টাকা। বাজারে বর্তমানে মিনিকেট চালের বস্তা দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা, গুটি ও স্বর্ণা এক হাজার ৭৫০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা, পারিজা এক হাজার ৮০০ থেকে এক হাজার ৯০০ টাকা, লতা ও বিআর-২৮ চাল দুই হাজার ১০০ থেকে দুই হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের দাম আবার বাড়তির দিকে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহেই বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। খুচরা বাজারে ৫০ টাকার নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। এ ছাড়া স্বর্ণা ৪২ টাকা, পারিজা ৪২ থেকে ৪৪ টাকা উন্নতমানের মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, বিআর আটাশ ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, উন্নতমানের নাজিরশাইল ৫৩ থেকে ৫৬ টাকা, হাস্কি নাজির ৪২ টাকা, বাসমতি ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, কাটারিভোগ ৭৪ থেকে ৭৬ টাকা এবং পোলাও চাল ১০০ (পুরাতন), নতুন ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায়, কালো বেগুনের দাম ১০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সাদা বেগুন ৭০ টাকায়, প্রতি কেজি শিম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, করলা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুরমুখি ৬০ টাকা, আলু ১৮ থেকে ২০ টাকা, এবং পেঁপে ২৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লেবু হালিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, আঁটিপ্রতি শাক ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে দেশের শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে বেড়েই চলেছে ধান-চালের দাম। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি চার থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। মিলমালিকদের মজুদের কারণেই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অন্য দিকে মিলমালিকেরা জানান, নতুন ধান বাজারে না ওঠা পর্যন্ত চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
গতকাল মঙ্গলবার দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরা চাল বিক্রির স্থান বাহাদুর বাজার ঘুরে দেখা দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, গুটি স্বর্ণ (মোটা) চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৬ টাকায়Ñ এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকায়। বিআর আঠাশ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়Ñ গত সপ্তাহে যার কেজি ছিল ৪০ টাকা। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়Ñ গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছে ৪৪ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া রঞ্জিত ৩৬ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায়, সুমন স্বর্ণ ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। জেলাজুড়ে হঠাৎ করে চিকন চালের পাশাপাশি মোটা চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে নি¤œ আয়ের মানুষের।
বাহাদুর বাজারে চাল কিনতে আসা একজন ক্রেতা জানান, কয়েক দিন আগেও চাল কিনেছি প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। কিন্তু সেই চালই আজ ৩৬ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম এভাবে বাড়ায় আমরা পড়েছি মহাফাসাদে। খুরচা চাল বিক্রেতা সোহেল রানা বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মিলমালিকেরা সিন্ডিকেট করে চাল মজুদ করছেন। তারা যে দামে বাজারে চাল ছাড়ছেন আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে তার চেয়েও বেশি দামে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা চালকল মালিক সমিতির সদস্য নুরুজ্জামান সরকার বলেন, বর্তমানে জমিতে ধান চাষ হচ্ছে। নতুন ধান না ওঠা পর্যন্ত চালের বাজার ঊর্র্ধ্বমুখী থাকতে পারে। মিলমালিকদের বিরুদ্ধে মজুদের অভিযোগ সত্য নয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/205675