২২ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ৭:৫৩

গ্রামে বাড়ি নির্মাণে অনুমতির বিধান

দুর্নীতি ও হয়রানি বৃদ্ধির আশঙ্কা

অনুমতি ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ করলে জেল-জরিমানার বিধান রেখে আইনের একটি খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইন পাস হলে গ্রামের বাড়িতে একটি ঘর করতেও অনুমতি নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। গতকাল দেশজুড়ে অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল এটি। এ আইন যেমনি পরিকল্পিত উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ঘটাবে, তেমনি মাঠ পর্যায়ে আমলাতান্ত্রিকতা, দুর্নীতি ও হয়রানিকে স্বাগত জানাবে। এমনটিই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
অনেকের মতে এ আইনের যথেচ্ছ ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে এর প্রয়োগ না হলে জনভোগান্তি বাড়বে, যা কি না গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিতে পারে। একই সাথে ক্ষমতাসীন দলীয়দের অবৈধ উপার্জনের পথ আরো সুগম হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীসহ দেশের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলো থেকে ভবন বা বাড়ি নির্মাণের নকশা অনুমোদন নিয়ে দুর্নীতি ও হয়রানির বিষয়গুলো নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হতে পারে।
ভুক্তভোগীরা বলেছেন, ভবন নির্মাণের অনুমতি নিতে এখনি যে কাঠখড় পোহাতে হয়, তা সবারই জানা। রাজউক, সিটি করপোরেশন কিংবা পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে বিপুল অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়। দিনের পর দিন দালালদের পেছনে ঘুরতে হয়। এখন গ্রামপর্যায়েও যদি একটি ঘর তৈরিতে অনুমতি নিতে হয়, তাহলে দুর্নীতির আরো বিস্তৃতি ঘটবে। বাড়বে ভোগান্তি এবং হয়রানি।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহার কিংবা তথাকথিত ধনিক শ্রেণীর খামখেয়ালিপনা বন্ধে এ ধরনের একটি আইনের যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। কিন্তু কার্যকর পরিকল্পনা ছাড়া এ আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলে তা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়াবে। কেননা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বারগণের যোগ্যতা বা দক্ষতা নির্মাণকাজ বা নকশা অনুমোদন দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব নয়া দিগন্তকে বলেছেন, এ আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হলে তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক. দেশের অভ্যন্তরীণ ভূমি ব্যবহারের যে ম্যাপ রয়েছে, তা সমন্বিত ও চূড়ান্ত করতে হবে। দুই. স্থানীয় সরকারে কারিগরিভাবে দক্ষ, যারা ভূমি ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে বোঝেন এমন লোকদের নিয়োগ দিতে হবে। তৃতীয়ত : ভবন নির্মাণে অনুমোদন কিংবা মনিটরিং বডিতে জনপ্রতিনিধি ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন পেশার লোকজনকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমলা বা সরকারি কর্মকর্তাদের প্রাধান্য কমিয়ে আনতে হবে।
ইকবাল হাবিব বলেন, এসব ব্যবস্থা নেয়া না হলে হয়রানি ভোগান্তি বাড়বে।
দেশের যেকোনো ভূমি উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে হলে সরকারের নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে, এমন বিধান যুক্ত করে গত সোমবার ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন’ ২০১৭ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী এ আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এ আইনের অধীনে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। এ উপদেষ্টা পরিষদ এ সংক্রান্ত সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর কাজের সমন্বয় সাধন করবে। আর দৈনন্দিন কাজের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিবের নেতৃত্বে ২৫ সদস্যের একটি নির্বাহী পরিষদ কাজ করবে।
আইনের খসড়ায় আরো বলা হয়েছেÑ অনুমতি ছাড়া কেউ কৃষিজমি, জলাভূমি বা প্লাবনভূমিকে অকৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য কিনলে তার এক বছর থেকে পাঁচ বছরের সাজার পাশাপাশি আর্থিক দণ্ড হবে। দণ্ড হতে পারে পাঁচ লাখ থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এ আইনের অধীনে মামলা জামিন অযোগ্য হবে বলেও খসড়ায় বলা হয়েছে। আইন অনুযায়ী- সরকারি, আধাসরকারি বা বেসরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও সংস্থা পরিকল্পনার বাইরে ইমারত, শিল্প, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও হাউজিং প্রকল্প গড়ে তুলতে চাইলে জাতীয় নগর ও অঞ্চল উপদেষ্টা পরিষদ এবং নগর উন্নয়ন অধিদফতরের অনুমতি নিতে হবে। নিয়ম কার্যকর হচ্ছে কি না, তা মনিটর করতে শহর ও গ্রামে আলাদা আলাদা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি গ্রামের বাড়িতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে চায়, তাহলেও অনুমোদন লাগবে।
সরকার বলছে, দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ন বন্ধে এবং ভূমি ব্যবহারে শৃঙ্খলা আনার জন্যই এ আইন করা হয়েছে। এটি অনেক দিনের প্রত্যাশিত আইন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/205676