২১ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:২৮

মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদন

গ্রামে বাড়ি করলেও ছাড়পত্র লাগবে

 আপনি গ্রামে নিজের ইচ্ছামতো কোনো ভূমিতে বাড়ি নির্মাণ বা অন্য কোনো উন্নয়ন করতে চাইছেন। কিন্তু আগের মতো চাইলেই তা আর পারবেন না। এর জন্য সরকার-নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র বা অনুমোদন নিতে হবে। শুধু গ্রামেই নয়, উন্নয়নকাজে দেশের যেকোনো জায়গায় ভূমি ব্যবহার করতে হলে সরকারি কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র লাগবে।
এমন বিধান যুক্ত করে নতুন একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন, ২০১৭ নামের আইনের খসড়া গতকাল সোমবার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম আইনটিকে কঠোর উল্লেখ করে বলেন, এটি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হবে। সারা দেশে ভূমি ব্যবহারে শৃঙ্খলা আনার জন্যই এ আইন করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আইনটির মূল উদ্দেশ্য হলো যেখানে-সেখানে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট বা অন্য কোনো নির্মাণকাজ করা যাবে না। উদ্দেশ্য খুব ভালো এবং ক্রমান্বয়ে সেদিকেই যেতে হবে। কিন্তু অভিজ্ঞতায় বলে, আইন বাস্তবায়নে হয়রানি বাড়ে। তাই মানুষের হয়রানি যেন না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া এই আইন বাস্তবায়নে বেশ কিছু পদক্ষেপও নিতে হবে।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, এই কাজগুলো বাস্তবায়নে দুটি কেন্দ্রীয় পরিষদ কাজ করবে। এর মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা উপদেষ্টা এবং একই মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে ২৫ সদস্যের নির্বাহী পরিষদ থাকবে। দুই কমিটিতেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিশেষজ্ঞরাও থাকবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ মূলত নীতিনির্ধারণী কাজগুলো করবে এবং উপদেষ্টা পরিষদের কাজ বাস্তবায়ন করবে নির্বাহী পরিষদ।
কোথা থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে
আইনের খসড়ায় উপদেষ্টা পরিষদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে একই সঙ্গে বলা হয়েছে, পরিষদ ছাড়পত্র প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দিতে পারবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষসহ সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ এবং ভবিষ্যতে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্দেশিত সংস্থা নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ভূমি ব্যবহার ব্যবস্থাপনা প্রণয়নকারী সংস্থা দায়িত্ব পালন করবে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, যে এলাকা উল্লিখিত সংস্থা বা পরিষদের অধীনে থাকবে, তাদের ছাড়পত্র নিয়ে ভূমির উন্নয়নকাজ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন নিতে হবে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য ঢাকার বাইরের কাউকে ঢাকায় আসতে হবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বর্তমানেও ভূমি উন্নয়নকাজের জন্য রাজউকসহ অন্যান্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। এখন এটিকে একটি আইনি কাঠামোয় নিয়ে আসা হয়েছে। এ সময় সাংবাদিকেরা জানতে চান, কেউ যদি গ্রামের বাড়িতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেন, তাহলে কোনো অনুমোদন লাগবে কি না। তখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, লাগবে। তিনি বলেন, এখনো ইউনিয়ন পরিষদসহ সংশ্লিষ্টদের অনুমোদন নেওয়ার কথা। ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলেও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিতে হয়, কিন্তু নেওয়া হয় না। সবকিছু বিধিতে উল্লেখ থাকবে।
কবে থেকে বাস্তবায়ন
আইনের খসড়া অনুযায়ী, সরকার গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করে যে তারিখ নির্ধারণ করবে, সেই তারিখ থেকে এ আইন কার্যকর হবে। জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব বলেন, তাঁরা জমির ধরন অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক মহাপরিকল্পনা করে উপজেলায় পাঠিয়ে দেবেন। পরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষই এর ছাড়পত্র দেবে। যখন যে এলাকার পরিকল্পনা করে দেওয়া হবে, তখন থেকে ওই এলাকায় এই নিয়ম মানতে হবে।
প্রস্তাবিত আইনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার জন্য এটা করতে হবে। না হলে কৃষিজমিরও সুরক্ষা সম্ভব নয়।
২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস
গতকালের বৈঠকে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা পরিপত্র ‘ক’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘ক’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করার অর্থ হলো, দিবসটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হবে।
এ ছাড়া সভায় বালাইনাশক আইন, ২০১৭; বস্ত্র আইন, ২০১৭ এবং প্রবাসীকল্যাণ বোর্ড আইন, ২০১৭-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিসভা ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরের জন্য অরবিট ফ্রিকোয়েন্সি কো-অর্ডিনেশন অব সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট-সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। ভারত এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তির সম্পূরক অংশ হিসেবে ‘জয়েন্ট ইন্টারপ্রিটেটিভ নোটস’ স্বাক্ষরের প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়। শততম টেস্ট ম্যাচে অবিস্মরণীয় জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1114861/