৪ জুলাই ২০২০, শনিবার, ৩:০১

করোনা দেশে

ষাটোর্ধ্বরাই মারা যাচ্ছে বেশি

২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু : ৪২; শনাক্ত : ৩,১১৪; মোট মৃত্যু : ১,৯৬৮; শনাক্ত : ১,৫৬,৩৯১

এক দিনে আরো ৪২ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৯৬৮ জন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ১১৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯১ জনে। আইডিসিআরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো এক হাজার ৬০৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। তাতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল মোট ৬৮ হাজার ৪৮ জনে। গতকাল শুক্রবার অনলাইনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ। গত বৃহস্পতিবার তা দেড় লাখ পেরিয়ে যায়। আর ১৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এখন তা পৌঁছে গেছে দুই হাজারের কাছাকাছি।

নাসিমা সুলতানা বলেন, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ এবং ১০ জন নারী। ৩১ জন হাসপাতালে এবং ১১ জন বাড়িতে মারা গেছেন। এই ৪২ জনের মধ্যে তিনজনের বয়স ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া সাতজনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, পাঁচজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, তিনজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং একজনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে ১৮ জন ঢাকা বিভাগের, ১০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন খুলনা বিভাগের, তিনজন রাজশাহী বিভাগের, চারজন রংপুর বিভাগের, তিনজন সিলেট বিভাগের এবং একজন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

দেশে এ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৮৫৫ জনের বয়স ছিল ৬০ বছর বা তার বেশি। ১২ জনের বয়স ১০ বছরের কম। এ ছাড়া ২৩ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে, ৭০ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ১৪৭ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ২৯০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৫৭১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ছিল বলে জানান নাসিমা সুলতানা।

নাসিমা সুলতানা জানান, ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুরু হওয়ায় দেশে এখন মোট ৭১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার সুযোগ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এর মধ্যে ৬৩টি ল্যাবে ১৪ হাজার ৬৫০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে; এ পর্যন্ত দেশে পরীক্ষা হয়েছে আট লাখ ১৭ হাজার ৩৪৭টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, মৃতের হার এক দশমিক ২৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, দেশের হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যায় ভর্তি আছেন চার হাজার ৭০৮ জন করোনা রোগী, আর আইসিইউতে আছেন ২০৯ জন। সারা দেশে ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৭৮ জন, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৬৬৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ৮৭৭ জন, মুক্ত হয়েছেন ৬৮৭ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে গেছেন ২৯ হাজার ৩৭৯ জন। আর আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৪৩২ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৫ হাজার ৯৪৭ জন।

তিনি আরো জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৭১৪ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে গেছেন তিন লাখ ৭১ হাজার ৯০৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৭৬৬ জন। এ পর্যন্ত মোট মুক্ত হয়েছেন তিন লাখ আট হাজার ৩৪৭ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৩ হাজার ৫৫৬ জন।

চট্টগ্রামে রোগী বেড়ে ৯,৪০৫ জন, নতুন শনাক্ত ২৮২

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে নতুন করে আরো ২৮২ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সাতটি ল্যাবে মোট এক হাজার ৩২৩ জনের নমুনা পরীক্ষার পর ওই ২৮২ জন শনাক্ত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরো তিনজন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়েছেন আরো ৪৭ জন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১০৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩৪ জনের, বিআইটিআইডি ল্যাবে ৩৬০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩৭ জনের, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ৪০৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭০ জনের, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ১৪০টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৯ জনের, শেভরণ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ১৫৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯৪ জনের এবং ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ল্যাবে ১৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। অন্য দিকে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে চট্টগ্রামের আটটি নমুনা পরীক্ষা করে আরো তিনজন কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৪০৫ জন। তার মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৪৬৭ এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৯৩৮ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ১৩১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৮৭ জন।

রাজশাহী বিভাগে নতুন শনাক্ত ৪৭৫, করোনা ও উপসর্গে মৃত্যু পাঁচ

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিভাগে নতুন করে আরো ৪৭৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার তারা শনাক্ত হন। এ দিন সুস্থ হয়েছেন বিভাগের ১০৭ জন করোনা রোগী। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিভাগে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে। তাদের একজনের বাড়ি নওগাঁ। অন্যজন বগুড়ার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভাগে ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এর মধ্যে ৫৪ জনই বগুড়ার বাসিন্দা। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৯, নওগাঁয় সাত, নাটোরে এক, সিরাজগঞ্জে আট এবং পাবনায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। বৃহস্পতিবার নতুন শনাক্ত হওয়া ৪৭৫ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ১২৫ জনই রাজশাহীর বাসিন্দা। এ ছাড়া বগুড়ায় ১৪৭, সিরাজগঞ্জে ৩৭, নাটোরে ২৯, পাবনায় এক, নওগাঁয় এবং জয়পুরহাটে ৪৮ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আর পুরো বিভাগে এ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ৩৭৩ জন। বিভাগে সুস্থ হয়েছেন মোট এক হাজার ৭৭৯ জন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার করোনামুক্ত হয়েছেন ১০৭ জন। পুরো বিভাগে এখনো হাসপাতালে আছেন ৫৯৩ জন। বাকি রোগীরা বাড়িতেই আইসোলেশনে রয়েছেন।

এক দিনে রাজশাহীর ১১৭ জন শনাক্ত : দু’টি ল্যাবে এক দিনে রাজশাহীর ১১৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে রাজশাহীর ৭৫ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ দিন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে শনাক্ত হয়েছেন রাজশাহীর আরো ৪২ জন। হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, এ দিন তাদের ল্যাবে ১৮২টি নমুনার রিপোর্ট হয়েছে। এতে মোট ৪৪ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে একজনের বাড়ি বগুড়া এবং একজনের বাড়ি পাবনা। বাকি ৪২ জন আছেন রাজশাহী নগরীতেই। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: বুলবুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার তাদের ল্যাবে ১৮০টি নমুনার রিপোর্ট হয়েছে। এর মধ্যে ৭৭টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজনের বাড়ি পাবনা। বাকি ৭৫ জনই রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

রাজশাহীতে এক রাতে দুইজনের মৃত্যু, উপসর্গে আরো তিন : রাজশাহীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আর উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ আরো তিনজন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিরা হলেন- নগরীর শাহমখদুম থানার জিয়াপার্ক এলাকার সেলিম মৃধা (৫০) ও রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান মাহাবুবে খোদা (৫০)। আর উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতরা হলেন- রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার নগরীর মহিষবাথান এলাকার এখলাসুর রহমান (৪০), নগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকার আশরাফ আলীর স্ত্রী শামীমা বেগম (৪৮) এবং তেরোখাদিয়া এলাকার মেরাজুল ইসলাম (৪০)। বৃহস্পতিবার রাতে করোনায় দুইজনের মৃত্যু হওয়ায় রাজশাহীতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১ জনে। আর রাজশাহীতে এখন করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯১০ জন।

বগুড়ায় স্কুলশিক্ষকসহ দুইজনের মৃত্যু

বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার একজন সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে। টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র আব্দুর রহিম রুবেল জানান, শ^াসকষ্ট নিয়ে জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা গ্রামের বাসিন্দা ও বুড়ইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী (৫৭) গত ২৪ জুন দুপুরে এই হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন তিনি করোনা শনাক্ত হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে তিনি মারা যান। অন্যদিকে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা আইনুন নাহার (৫৪) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১ জুলাই করোনা আইসোলেশন কেন্দ্র মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার উচ্চ চাপ বেড়ে যাওয়ায় এবং করোনায় সংক্রমিত হয়ে শুক্রবার সকাল ৮টায় তিনি মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন ওই হাসপাতালের আরএমও খায়রুল বাশার মোমিন।

নতুন আক্রান্ত ১৪৩ জন : বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৪৭ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। শুক্রবার বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন এক ব্রিফিংয়ে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজে ১৮৮, টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭৬ ও ঢাকায় পাঠানো ৫৫৪ নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে মোট ৮১৮টি নমুনায় পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ১৪৩ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত তিন হাজার ১৯৯ জন, সুস্থ ৮৪৫ জন এবং মৃত্যু ৫৪ জন। তিনি জানান, সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত (২ জুলাই) জেলায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৯ হাজার ৪৪১টি। এর মধ্যে ফলাফল পাওয়া গেছে ১৭ হাজার ১২৫টি এবং পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছে দুই হাজার ৩১৬টি। উপজেলা ভিত্তিক সবচেয়ে বেশি বগুড়া সদরে সর্বশেষ ১২৮ জনসহ দুই হাজার ২১২ জন।

করোনা ও উপসর্গ নিয়ে কুমেক হাসপাতালে আটজনের মৃত্যু

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় করোনা পজিটিভ ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাস ও করোনা উপসর্গ নিয়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা পজিটিভ নিয়ে একজন পুরুষ, একজন মহিলা এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়। মোট মৃতের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও তিনজন মহিলা। বর্তমানে করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন ১১৫ জন। তাদের মধ্যে করোনা পজিটিভ ৩৯ জন ও করোনা উপসর্গ রয়েছে ৭৬ জনের। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা: সাজেদা খাতুন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে মারা যান চাঁদপুর ফরিদগঞ্জের আবদুর রশিদ (৮৫), একই এলাকার হাসিনা বেগম (২৭), কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আমানগ-া গ্রামের আবদুল হামিদ (৪৫), করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে মারা যান কুমিল্লার লাকসামের শেফালী বেগম (৫০), উপসর্গ নিয়ে মারা যান কুমিল্লা সদর দক্ষিণের আবুল হোসেন (৪৫), কুমিল্লার মুরাদনগরের লাভলী বেগম (৭০), চাঁদপুর ফরিদগঞ্জের মনু মিয়া (৬০), করোনা ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার তাজুল ইসলাম (৪৫)। সূত্র জানায়,এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৬৬ জন। তাদের মধ্যে পজিটিভ ২৮ জন ও উপসর্গ ছিল ১৩৮ জনের।

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইল জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬৯৭ জনে। এ দিন আরো ১০১ জনের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩১০ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৭৪ জন। এখনো করোনা রিপোর্ট পেন্ডিং আছে ১৯৮ জনের। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, শুক্রবার নতুন আক্রান্ত ২৮ জনের মধ্যে মির্জাপুরে সর্বোচ্চ ১৩ জন, মধুপুরে সাতজন, টাঙ্গাইল সদরে তিনজন, কালিহাতীতে দুইজন, ঘাটাইল, দেলদুয়ার ও বাসাইলে রয়েছেন একজন করে।

নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীতে এক দিনে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ২৩৫ জন। নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন নোয়াখালী সদর উপজেলায় তিনজন, সুবর্ণচরে পাঁচজন, বেগমগঞ্জে ১০ জন, হাতিয়ায় ১৩ জন, সেনবাগে একজন, কোম্পানীগঞ্জে চারজন ও কবিরহাট ১০ জন। জেলায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। গতকাল শুক্রবার সকালে জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাঙ্গলকোটে উপসর্গ নিয়ে পোস্ট মাস্টারের মৃত্যু

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে করোনা উপসর্গ জ¦র, সর্দি ও শ^াসকষ্ট নিয়ে পোস্ট মাস্টার আবদুল করিম মজুমদারের (৫০) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের খিলপাড়া গ্রামের বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। তিনি খিলপাড়া গ্রামের মৃত আলী মিয়া মজুমদারের ছেলে। আবদুল করিম মজুমদার চৌদ্দগ্রামের গুণবতী পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টারের দায়িত্বে ছিলেন।

নীলফামারীতে চার চীনা নাগরিক করোনায় আক্রান্ত

নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের ম্যাজেন (বিডি) ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানিতে কর্মরত চার চীনা নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন রনজিৎ কুমার বর্মন জানান, উত্তরা ইপিজেডের ৬৫ জন চীনা নাগরিকের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে চারজনের করোনা শনাক্ত হয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র মতে, এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫২ জন।

সিরাজদিখানে করোনায় স্বামীর মৃত্যুর ২০ দিন পর স্ত্রীর মৃত্যু

সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার শেখরনগর ইউনিয়নে পাউসার বৃহস্পতিবার রাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর মৃত্যুর ৯ দিন পর স্ত্রী সালেহা বেগমও (৮০) মারা গেলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: বদিউজ্জামান জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার বাড্ডায় এমজেট বেসরকারি হাসপাতালে ওই বৃদ্ধা মারা যান। তিনি শেখরনগর ইউনিয়নের পাউসার গ্রামের আনোয়ার আলীর স্ত্রী। গত ১৫ জুন তার নমুনা সংগ্রহ করার পর ১৮ জুন করোনা শনাক্ত হয়। এর পর ২০ জুন তাকে ঢাকার বাড্ডার এমজেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল রাত ১১টায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত ১২ জুন মৃত সালেহা বেগমের স্বামী আনোয়ার আলী (৯০) করোনায় মারা যান।

জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জামালপুরে হোম আইসোলেশনে থাকা একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার নারী কর্মকর্তার মেয়ে ও বৃদ্ধা মায়ের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। জামালপুরে ওই নানী-নাতনি, এক দম্পতি, ইসলামী ব্যাংকের তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নতুন করে আরো ১২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জামালপুর সদর উপজেলায় ছয়জন, ইসলামপুর উপজেলায় তিনজন, মাদারগঞ্জ উপজেলায় দুইজন ও বকশীগঞ্জ উপজেলায় একজন রয়েছে। এ পর্যন্ত জামালপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫৯৮ জন। অন্যদিকে সুস্থ ২৩৮ জন এবং মৃত্যু ৯ জন। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে জামালপুর স্বাস্থ্য বিভাগ।

গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, গোপালগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩২ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৪৩ জনে। এখন পর্যন্ত করোনায় জেলায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯৯ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ও নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৩২ জন। গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ জানিয়েছেন, নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৩ জন, টুঙ্গীপাড়ায় দুইজন, কোটালীপাড়ায় সাতজন, মুকসুদপুরে ছয়জন ও কাশিয়ানী উপজেলায় চারজন রয়েছেন।

মাগুরা সংবাদদাতা জানান, মাগুরায় নতুন করে আরো ২১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৬৬ জন। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ৫০ জন। মারা গেছেন চারজন। মাগুরা সিভিল সার্জন ডা: প্রদিপ কুমার সাহা জানান, শুক্রবার জেলায় নতুন করে ২১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মাগুরা সদরে ১৯ জন, শ্রীপুর ও মহম্মদপুরে একজন করে রয়েছেন।

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের এক কনস্টেবলসহ আরো চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১৬ জন। এর মধ্যে স্স্থু হয়েছেন ৩৫ জন এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ সেলিম এ তথ্য জানান।

চাঁদপুরে দুইজনের মৃত্যু, আক্রান্ত হাজার ছাড়াল

চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়াল। শুক্রবার করোনার উপসর্গ নিয়ে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের ৭১ বছরের নুরুল ইসলাম মিয়াজি ও শ্রী কালিয়া গ্রাামের ৬০ বছরের আবু তাহের। চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আর এম ও ডা: সুজাদ্দৌলা রুবেল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মৃত দুইজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা: সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, শুক্রবার আরো ৩১ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে ২১ জন, হাইমচরে দুইজন, মতলব দক্ষিণে দুইজন, মতলব উত্তরে দুইজন, ফরিদগঞ্জে একজন, হাজীগঞ্জে দুইজন ও শাহরাস্তিতে একজন রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার তিনজনে। মৃতের সংখ্যা ৬০ জন।

ঝিনাইদহ সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহ জেলায় গতকাল নতুন করে ১৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সকালে কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে আসা ৫২ জনের ফলাফলের মধ্যে ১৩ জনের রিপোর্ট পজিটিভ। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪৯ জনে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় পাঁচজন, কালিগঞ্জে তিনজন, শৈলকুপায় তিনজন, কোটচাদপুরে একজন ও মহেশপুরে একজন রয়েছেন। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা: সেলিনা বেগম এসব তথ্য জানিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের সাত উপজেলায় নতুন করে আরো ২৭ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পাওয়া নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে এই ২৭ জনের করোনা পজিটিভ আসে। এ নিয়ে জেলায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল এক হাজার ৫৭৯ জনে। অন্যদিকে পাঁচ উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৮৫ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ১১৬ জন। মারা গেছেন ২৪ জন। নতুন শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ১০ জন, করিমগঞ্জ উপজেলায় চারজন, তাড়াইল উপজেলায় দুইজন, কটিয়াদী উপজেলায় দুইজন, কুলিয়ারচর উপজেলায় একজন, ভৈরব উপজেলায় চারজন ও নিকলী উপজেলায় চারজন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/512893/