২০ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ৮:০৭

রেলের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন উন্নয়ন

প্রস্তুতিতেই সাড়ে ৫ বছর পার!

প্রকল্প এক বছরের * সময় বাড়ল আরও ২ বছর * ব্যয় কয়েক গুণ

 এক বছরে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও প্রাথমিক প্রস্তুতিতেই পেরিয়ে গেছে সাড়ে ৫ বছর। এখন নতুন করে আরও দুই বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য সময় খেকো প্রকল্পে পরিণত হয়েছে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ প্রকল্পটি। রেলপথ মন্ত্রণালয় অবশ্য নানা কারণ দেখিয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, অর্থায়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া, পরামর্শক চুক্তিতে বিলম্ব এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতি ও মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরুতে দেরি হওয়ায় এই বিলম্ব।


বাড়তি সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও প্রকল্প পরিচালক শহিদুল ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্ধিত দুই বছরেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।

শনিবার তিনি যুগান্তরকে জানান, শুধু প্রস্তুতিতেই সাড়ে ৫ বছর যায়নি। প্রথম পর্যায়ে সরকারি নাকি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে দোদুল্যমানতা ছিল। পরবর্তীতে দীর্ঘ দিন পর ভারতীয় ক্রেডিট লাইনের (এলওসি) অর্থে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে সেখানে একটা বড় সময় চলে যায়। ডিজাইনের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী জুন-জুলাইয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি দুই বছরের মধ্যেই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

এদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিকে ১১৭ কোটি ৬৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। মূল প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু নানা কারণে আটকে যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন। পরবর্তীতে ভারতীয় ঋণ প্রাপ্তির পর প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব ২০১৫ সালের ২৬ মে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। এ সময় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ সাড়ে চার বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেও কোনো ভৌত অগ্রগতি হয়নি। ফলে নতুন করে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি)।

প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ ও যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির শুরু থেকে অর্থাৎ ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত প্রকল্পের অনুকূলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) কোনো অর্থ বরাদ্দ ছিল না। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর প্রকল্পটি ভারতীয় এলওসির অর্থে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক হতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের সম্মতিপত্র পেতে আরও প্রায় ছয় মাস লেগে যায়। ফলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতিসহ মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়। তবে ইতিমধ্যেই টোপোগ্রাফিক সার্ভে, মাটি পরীক্ষা, খসড়া নকশা প্রতিবেদন প্রণয়নসহ বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে মূল নকশা প্রণয়ন প্রতিবেদন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ ছাড়া গত বছরের ৪ অক্টোবর প্রি-কোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বানের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর আটটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রি-কোয়ালিফিকেশন আবেদন পাওয়া যায়। দাখিল করা প্রি-কোয়ালিফিকেশন আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মূল্যায়ন করা এবং পাশাপাশি নকশা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে সময় লাগছে। এ ছাড়া মূল কনস্ট্রাকশন কাজের দরপত্র আহ্বান এবং সংস্থানকৃত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে সময়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন। আর এজন্যই ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াও প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রথম বছর প্রকল্পের জন্য অর্থই বরাদ্দ দেয়া হয়নি। কিন্তু পরের অর্থবছরগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হলেও চাহিদার তুলনায় ছিল অনেক কম। দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী চাহিদা ছিল ৭৪ কোটি ৪৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা (সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তা মিলে)। কিন্তু এডিপিতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চাহিদা ছিল ৩০২ কোটি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু বরাদ্দ দেয়া হয় ৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যয় হয় প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চাহিদা ছিল ৩০২ কোটি ৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৬২ কোটি ১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যয় হয় সামান্যই। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ডিপিপি অনুযায়ী ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা বরাদ্দ চাহিদার বিপরীতে এডিপিতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। চাহিদা ও বরাদ্দের এ ফারাকের কারণে সময় বাড়ালেও আগামীতে প্রকল্পটির কাক্সিক্ষত বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা বর্ধিত দু বছরেও যদি বরাদ্দের এ হাল হয় তাহলে প্রকল্পের সুফল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষ।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/03/20/110482/