১ জুলাই ২০২০, বুধবার, ১২:৩৮

দিনভর মানুষের ভোগান্তি

বুড়িগঙ্গা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা : যান চলাচল বন্ধ

বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু (প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু) ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার সদরঘাটে গত সোমবার সকালে ডুবে যাওয়া লঞ্চ উদ্ধারে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা উদ্ধারকারী জাহাজের ধাক্কায় সেতুটিতে ফাটল দেখা দেয়ার পর ওই দিন রাতেই যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। গতকাল সওজ বিভাগের বিশেষজ্ঞ টিম পরিদর্শন করার পর সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে।

এদিকে, বুড়িগঙ্গা সেতুতে যান চলাচল বন্ধ থাকায় গতকাল মঙ্গলবার দিনভর হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। মানুষজন পায়ে হেঁটে সেতু পার হয়ে ওপাড়ে গিয়ে যানবাহনের খোঁজ করেছেন। সেতুর কেরানীগঞ্জ অংশ থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে দূরপাল্লার বাস। অনেক যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ এবং ঢাকা থেকে বের হওয়ার জন্য বিকল্প পথ হিসেবে নয়াবাজার দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু ব্যবহার করেছে। এতে করে পুরান ঢাকায় দিনভর যানজটে আটকে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

গতকাল সকালে সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শত শত মানুষ পায়ে হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা। আবার অনেকেই আছেন দূরপাল্লার বাসের যাত্রী। আকবর নামে একজন যাত্রী বলেন, হঠাৎ করে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমার মতো অনেকেই বিপদে পড়েছেন। ওপাড়ে গিয়ে বাস মিলবে কি না জানিনা। সেতুর ওপাড়ে কেরানীগঞ্জ অংশে আবু বক্কর নামে একজন বলেন, পরিবার নিয়ে খুলনা থেকে এসেছি। বাস দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সামনে। সেখান থেকে মালামাল নিয়ে কষ্ট করে পায়ে হেঁটে আসছি। অন্যদিকে, ঢাকা থেকে মাওয়া রুটে চলাচলকারী যানবাহন পুরান ঢাকার নয়াবাজার সেতু ব্যবহার করছে। সেখানে দিনভর যানজট লেগে ছিল। ইলিশ বাসের চালক আবদুর রউফ বলেন, সেতুর উপর দুই ঘণ্টা সময় কেটে গেছে। মাওয়া পর্যন্ত একবার গেলে আর হয়তো ফেরা যাবে না এ যানজটের কারণে। করোনাকালে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে স্টাফদের খাওয়ার টাকাই জুটবে না বলে জানান তিনি।

সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা অঞ্চল) সবুজ উদ্দিন খান জানান, গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পোস্তগোলায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১ (প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু) আমরা বিশেষজ্ঞ দলসহ পরিদর্শন করেছি। বিশেষজ্ঞরা তাদের মতো করে কী ধরনের রিপেয়ার করলে ঝুঁকিমুক্ত হবে সে ধরনের ডিজাইন করছেন। কবে নাগাদ সেতুটি ঝুঁকিমুক্ত হবে বা রিপেয়ারিংয়ের কাজ সম্পন্ন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সময়সাপেক্ষ, বেশ সময় লাগবে। বুধবার আমাদের আরও অনেক ইকুইপমেন্ট আসবে। ব্রিজের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ স্ক্যান করা হবে, এক্সরে এর মতো করে ভেতরের অবস্থা দেখা হবে যে কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে। সেটা দেখার পরে পরবর্তী ট্রিটমেন্ট ঠিক হবে। এজন্য বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। সেতুটি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোমবার যে লঞ্চটি ডুবেছে সেটি উদ্ধার করতে আসা প্রত্যয়ের ধাক্কায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্যদিকে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মো. আবু নাছের জানান, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত গার্ডারের জরুরি মেরামত কাজ চলছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) আশা করছে, মঙ্গলবার রাতেই সেতুটি সীমিত পর্যায়ে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে। তিনি বলেন, সেতুটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন এবং যানবাহন সীমিত আকারে চালু রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। সেতু ব্যবহারকারীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে সওজ।

উল্লেখ্য, সোমবার (২৯ জুন) সকালে বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটি) উদ্ধারকারী জাহাজ যাচ্ছিল। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, উদ্ধারকারী জাহাজের মাস্টার দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে চাইছিলেন। তার ভুলে সেতুতে আঘাত লাগতে পারে।

https://www.dailyinqilab.com/article/304018