৩০ জুন ২০২০, মঙ্গলবার, ১:৩৯

সদরঘাট থেকে মিটফোর্ড মর্গ : প্রিয়জনের সন্ধানে স্বজনদের আহাজারি

সদরঘাট বুড়িগঙ্গার পাড় থেকে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গ। কেউ খুঁজে ফিরছেন বাবাকে, আবার কেউ খুঁজছেন স্বামীকে, কেউবা খুঁজছেন ভাইকে। এভাবে স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের সন্ধানে এসে আহাজারি করছিলেন। লঞ্চ দুর্ঘটনায় উদ্ধার করা সব লাশ রাখা হয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ-মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে। স্বজন হারানোর বেদনায় বুড়িগঙ্গার বাতাস ভারী হয়ে উঠে গতকাল।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ-মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গের সামনে স্বামীর সন্ধানে ছুটাছুটি করছিলেন নুরজাহান বেগম। স্বামী আবু সাঈদ ফলের ব্যবসা করেন। ঢাকার সদর ঘাটের বাদামতলী থেকে ফল কেনার জন্য মুন্সীগঞ্জের বাসা থেকে সকাল ৭টায় রওনা হন তিনি। মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে লঞ্চে উঠেন। আবু সাঈদের কোনো খবর পাচ্ছেন না তার স্বজনেরা। আবু সাঈদের স্ত্রী নূর জাহান বেগম বলেন, অভাবের সংসার। করোনায় অনেক দিন ফলের দোকান বন্ধ। আয় নেই। এখন আবার ব্যবসা শুরু হয়েছে। কান্নায় ভেঙে পড়ে বিলাপ করে বলেন, স্বামী ফল কেনার জন্য ঢাকায় আসেন। সকাল সকাল লঞ্চ ধরতে হবে বলে খেয়েও আসেননি।

মর্গের সামনে বাবার সন্ধান করছিলেন দোলা বণিক। কেঁদে কেঁদে জানান, তার বাবা সত্যরঞ্জন বণিক। বাবার মিটফোর্ডে দোকান আছে। দোলা থাকেন ঢাকায়। বলেন, আমার বাবা প্রতিদিন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন। আবার কাজ শেষে চলে যান। গত পরশু দিন আমার বাসায় আসেন বাবা। আমি বাবাকে বলি, বাবা, এখন করোনাভাইরাস তুমি লঞ্চে করে যাতায়াত কোরো না। আমার বাসায় থেকে ব্যবসা করো। কিন্তু আমার বাবা কথা শুনল না। চলে গেল। লঞ্চ ডুবির খবর পেয়ে তিনি মিটফোর্ডে আসেন বাবার লাশের খোঁজে। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত বাবার লাশ খুঁজে পাননি।

লঞ্চডুবির সাত ঘণ্টা পরও প্রিয়জনের খোঁজ না পেয়ে বুড়িগঙ্গার পাড়ে অপেক্ষা করছিলেন স্বজনরা। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে শ্যামবাজার বুড়িগঙ্গা নদীপাড়ের এলাকা।

লঞ্চডুবির খবর পেয়ে নাসিমা আক্তার ছুটে এসেছেন শ্যামবাজারে। তার ভাই শাকিল আহমেদ (২৫) সকাল থেকেই নিখোঁজ। তাদের গ্রামের বাড়ি ভোলা। তিনি জানান, বন্ধুর সাথে বেড়াতে শাকিল তিন দিন আগে মুন্সীগঞ্জ গিয়েছিল। তিনি কেরানীগঞ্জ বোনের সাথে থাকতেন। নাসিমা বলেন, রোববার রাতে মুন্সীগঞ্জ থেকে রওনা দেয়। তিনি জানান, টিভিতে সকালে জানতে পারেন লঞ্চটি ডুবে গেছে। তিনি ভাইকে ফোন দেন। কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ভাইয়ের খোঁজে বুড়িগঙ্গার তীরে তীরে তিনি আহাজারি করে ছুটছেন। যাকেই পাচ্ছেন ভাইয়ের কথা জিজ্ঞাস করছিলেন।

সিদ্দিক নামে এক যুবক নৌকা নিয়ে বুড়িগঙ্গায় তার মামা মিলনকে খুঁজছেন। তার মামাও এই লঞ্চে ছিল। গতকাল বিকেলেও তার খোঁজ মেলেনি। সিদ্দিক বলেন, আমার মামা এই লঞ্চে ছিল তার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/511900/