১৮ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৫:৫৯

স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীতে উল্টো বিপদ

করোনা প্রতিরোধে মানুষের ব্যবহৃত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীতে উল্টো বিপদের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ব্যবহার করা গ্লাভস, মাস্ক, পিপিই, স্যানিটাইজারের বোতল, ডিটারজেন্ট ও ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহৃত উপাদান মানুষকে নতুন করে ভয়াবহ ঝুঁকিতে ফেলছে। এগুলো যেখানে সেখানে ফেলার কারণে তা পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বর্জ্যগুলো গৃহস্থালি বর্জ্যরে সাথে যাচ্ছে। এতে নতুন আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের মতে, কীটনাশক যেমন মাটির ক্ষতি করে, এগুলোও তেমনি। এসবের অতিরিক্ত ব্যবহার ফসল উৎপাদন ব্যাহত করবে। উদ্ভিদের বন্ধু পোকার জন্যও এগুলো ক্ষতিকর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তদের সৃষ্ট বর্জ্য ছাড়াও নগরবাসীর ব্যবহৃত সুরক্ষাসামগ্রী থেকেও প্রতিদিনই ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। পথেঘাটে যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে ব্যবহৃত গ্লাভস, মাস্ক ও স্যানিটাইজারের বোতল। সাধারণ বর্জ্য থেকে এগুলো আলাদা না করলে তা পরিবেশের সাথে মিশে গিয়ে নতুন করে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়বে; যাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন। তাই জীবন রক্ষায় আলাদাভাবে এ বর্জ্যগুলো সিল করা কনটেইনারে সংগ্রহ করে অন্তত মাটির ১০ ফুট নিচে পুঁতে ফেলা প্রয়োজন।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন এসডোর জরিপ অনুযায়ী, করোনা মহামারীর মধ্যে রাজধানীতে প্রতি মাসে সার্জিক্যাল মাস্ক থেকে ৪৪৭ টন, পলিথিন গ্লাভস থেকে ৬০২ টন, সার্জিক্যাল গ্লাভস থেকে ১৩১৪ টন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল থেকে ২৭০ টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এসব বর্জ্যরে বড় অংশই বাসাবাড়ি থেকে আসছে। এ ছাড়া ফেসশিল্ড, গগলস, পিপিই, সাধারণ মাস্ক থেকেও উল্লেযোগ্য বর্জ্য তৈরি হচ্ছে।

সংস্থাটি জানায়, সাধারণ ছুটির প্রথম মাসে দেশে ব্যবহত সার্জিক্যাল মাস্ক বর্জ্যরে ২৮.২ শতাংশ, পলিথিন হ্যান্ড গ্লাভস বর্জ্যরে ১৯.৮ শতাংশ, সার্জিক্যাল গ্লাভস বর্জ্যরে ৪৬.৩ শতাংশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল বর্জ্যরে ৩০ শতাংশ ঢাকাতেই উৎপন্ন হয়েছে।

এসডোর সাধারণ সম্পাদক ড. হোসেন শাহরিয়ার বলেন, বিরাজমান অবস্থা খুবই বিপজ্জনক বিভিন্ন বাড়িতে যারা আক্রান্ত আছেন, তাদের বর্জ্যগুলোও গৃহস্থালি বর্জ্যরে সাথে চলে যাচ্ছে। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তার মতে, খোলা জায়গায়, নর্দমা, রাস্তাঘাট, নদীতে এ বর্জ্যগুলো ছড়িয়ে পড়লে অন্য প্রাণীও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেবে। তাতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। তিনি জানান, সাধারণ বর্জ্য থেকে এগুলো আলাদা না করলে পরিবেশে চলে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক এক পরিচালকের মতে, ১০ কোটি মানুষ যদি দিনে একটি করেও মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করে, তাহলে ১০ কোটি বর্জ্য হচ্ছে। এ বর্জ্যগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। হাসপাতালের ক্লিনারদের মতো ফুল পিপিই পরে এগুলো সংগ্রহ করা উচিত। কারণ আমরা এখনো নিশ্চিত না কিভাবে জীবাণুটি ছড়াচ্ছে। তবে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এগুলোকে মেডিক্যাল বর্জ্য হিসেবে ধরতে হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/509168/