১৮ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৫:৫৪

তাদের টার্গেট সরকারি কর্মকর্তারা

প্রথমে তারা সরকারি কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয় জানে। তারপর ফোন নম্বর কিংবা মোবাইল নম্বর জেনে নেয়। এরপর খোঁজখবর নেয় কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না। অভিযোগ থাকলে তাদের কাছে কাজটা সহজ হয়। এরপর নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ফোন দেয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলে তা পত্রিকায় প্রকাশের হুমকি দিয়ে দাবি করে মোটা অঙ্কের টাকা। অনেকে ভয়ে এই টাকা দিয়ে দেন। তবে কখনোই তারা ওই কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয় না। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই তারা অর্থ হাতিয়ে নেয়।

ভুক্তভোগীরা বলেন, এই চক্রটি বছরের পর বছর সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এভাবে অর্থ হাতিয়ে এলেও তারা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাঝে কয়েকজন গ্রেফতার হলেও সব সদস্যকে কখনোই আইনের আওতায় আনা যায়নি। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো সক্রিয় আছে।

সম্প্রতি তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেনÑ তার প্রকৌশলী ভাইয়ের কাছে এক ব্যক্তি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে। একটি জাতীয় দৈনিকের একজন সাংবাদিকের নাম ব্যবহার করে ফোনটি করা হয়। ওই কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় যোগাযোগ করে জানতে পারেন অপরাধী যে নামটি ব্যবহার করেছে ওই সাংবাদিক এমন কাউকে ফোন করেননি। এই চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের একেকজন সাংবাদিকের নাম একেক সময় ব্যবহার করে থাকে। সে ক্ষেত্রে তারা প্রভাবশালী ও বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রগুলোকে টার্গেট করে। ওই সব পত্রিকার নাম ব্যবহার করে প্রতারক চক্রটি। পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত নিউজে যে নামগুলো ছাপা হয় সেই নামের দু-একটি মুখস্থ করে ওই নামই ব্যবহার করে থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই চক্রটি নানাভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয় এবং মোবাইল ও টিঅ্যান্ডটি নম্বর সংগ্রহ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ব্যপারে খোঁজখবর নেয় তাদের কোনো দুর্বলতা আছে কি না। থাকলে ওই দুর্বলতাকে পুঁজি করে নিউজ প্রকাশের হুমকি দেয়। আর নিউজ প্রকাশ না করার অনুরোধ করলে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। এভাবেই তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। যেসব কর্মকর্তার ব্যক্তিজীবন বা চাকরিজীবনে কোনো সমস্যা রয়েছে সেসব কর্মকর্তা কোনো তর্ক ছাড়াই অর্থ দিয়ে দেন প্রতারকদের। এ ক্ষেত্রে প্রতারকরা মোবাইল ফোনে অনলাইনে অর্থ পাঠাতে বলে। কখনোই তারা স্বশরীরে উপস্থিত হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক বলেন, প্রতারকচক্রটি একবার তার নাম ব্যবহার করায় তিনি ওই চক্রটিকে ধরার জন্য অনেক কৌশল করেন। এমনকি, পুলিশেরও সহায়তা চান। কিন্তু ধরতে পারেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এরূপ একটি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে শিবলু লস্কর (৪০)। এর আগে একবার সে গ্রেফতার হয়েছিল। ছাড়া পেয়ে ওই আগের পেশাতেই ফিরে যায়। তার বাবার নাম সাইদ লস্কর। বাসা গেন্ডারিয়া স্কুলের কাছে। এর অন্যতম সহযোগী এস এম জাহিদ ওরফে জনি। থাকে কেরানীগঞ্জে। আর খন্দকার সোহেল নামের অপর একজনের বাসা স্বামীবাগ এলাকায়। এদের মূল আস্তানা হলো গেন্ডারিয়ার মামার মাজার থেকে ঠিক উল্টো দিকে বুড়িগঙ্গার নদীর ওপারে আলো কোল্ড স্টোরের পাশের বালুর মাঠ। নিরিবিলি এই স্থানটিতে তারা জড়ো হয়ে কর্মকর্তাদেরকে ফোন করে। আর মোবাইলে কেউ টাকা পাঠালে ওপারে বসেই তা ক্যাশ করে নেয়। ওখানে জাহিদের একটি হেরোইন স্পট রয়েছে, যেখানে তারা হেরোইনসহ নানা মাদকদ্রব্য সেবন করে। ওয়াইজঘাট এলাকায় জনির সম্বন্ধী জাহাঙ্গীরের পুরনো মোবাইল কেনাবেচার দোকান আছে। ওই দোকানের চোরাই মোবাইলের সিমগুলো সংগ্রহ করে তারা কর্মকর্তাদেরকে ফোন করে।

সংশ্লিøষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি ফরাশগঞ্জের কাঠপট্টিতে ব্রিজের পাশে তারা নতুন একটি আস্তানা গেড়েছে। সেখানেও তারা আড্ডা দেয়। মানুষকে হুমকি-ধমকির পাশাপাশি তারা নতুন একটি কৌশল শুরু করেছে। তা হলো কোনো নাম করা সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে চিকিৎসার জন্য অর্থ দাবি করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে তিনিসহ আরো অনেককে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন সময় অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের কাছে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই তারা ভুয়া।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/509212