১২ জুন ২০২০, শুক্রবার, ২:৫০

৬৩ হাজার ৮৫১ কোটি টাকাই ব্যয় হবে ঋণের সুদ পরিশোধে

প্রতি বছরই বেড়ে যাচ্ছে ঋণ পরিশোধের ব্যয়। বলা চলে, ঋণের ভারে জর্জারিত হয়ে পড়েছে জাতীয় বাজেট। বাজেটের আকার বড় হচ্ছে। বাড়ছে সরকারের ব্যয়। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে ঘাটতি বাজেট। আর এ ঘাটতি মেটাতে নিতে হচ্ছে ঋণ। এতে প্রতি বছরই ঋণ বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে ঋণের সুদ। আবার এ সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে ঋণ নিয়ে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের প্রায় বেশির ভাগ অর্থাৎ ৬৩ হাজার ৮০৯ কোটি টাকাই বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধে। এ সুদব্যয় অনুন্নয়ন বাজেটের একক খাত হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা পরিশোধ ব্যয় হলো একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরেও বাজেটে সুদব্যয় একক খাত হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত ছিল। চলতি অর্থবছর বাজেটে ৫৭ হাজার ৭০ কোটি টাকাই বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। পরে সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সুদব্যয়ও বেড়ে সংশোধিত বাজেটে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সরকারের রাজস্ব ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু যে হারে ব্যয় বাড়ছে সেই হারে আয় বাড়ছে না। এতে ঘাটতি বাজেট বাড়ছে। আর ঘাটতি বাজেট বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। উচ্চ সুদে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পাশাপাশি ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে সুদব্যয়। এটা অব্যাহত থাকলে সামনে সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা ও সুদ পরিশোধেই বাজেটের সমুদয় অর্থ ব্যয় করতে হবে। সঙ্কুচিত হয়ে যাবে উন্নয়ন বাজেট।

আগামী অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার সামগ্রিক বাজেটের মধ্যে অনুন্নয়ন বাজেট ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। এ অনুন্নয়ন বাজেটের মধ্যে শুধু ঋণের সুদ ও সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা এবং পেনশন পরিশোধেই ব্যয় হবে প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। যা সামগ্রিক বাজেটের ২৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর মধ্যে বিভিন্ন ঋণের সুদ পরিশোধ করা হবে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ঋণের সুদ পরিশোধেই ব্যয় বাড়ছে প্রায় ১১ শতাংশ। অপর দিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হবে ৬৬ হাজার ৩ কোটি টাকা এবং পেনশন পরিশোধ করতে হবে ২৭ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই সরকার বাজেটের আকার বাড়াচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আয় বাড়াতে পাড়ছে না। এ কারণে ঋণনির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে বাজেট বাস্তবায়নে। ঋণনির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সুদব্যয়। যেমন, গত ৫ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদব্যয় বেড়েছে প্রায় শতভাগের বেশি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে সুদব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। ৫ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে হয়েছে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। এ ঘাটতি মেটাতে ইতোমধ্যে সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ অর্থাৎ ৪৭ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের বিশাল অঙ্কের অর্থাৎ ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ঘাটতি বাজেট দেয়া হয়েছে প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমদানি-রফতানিতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে যে ক্ষত দেখা দিয়েছে তা সারতে দীর্ঘ দিন লেগে যেতে পারে। ফলে আগামী অর্থবছরের বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন থেকে কঠিনতর হতে পারে। আর এটা হলে সরকারের ব্যয় ঠিক রাখতে আগামী অর্থবছর শেষে ব্যাংক ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা ছেড়ে যেতে পারে। এতে সুদব্যয় আরো বেড়ে যাবে। এটা কমাতে না পারলে সুদব্যয় পরিশোধেই বাজেটের বেশির ভাগ ব্যয় হয়ে যাবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/507746/