১২ জুন ২০২০, শুক্রবার, ২:৪৮

বড় ধরনের খাদ্যসঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিটেনের অর্থনীতি; ফ্রান্সে করোনা আক্রান্ত ফের বাড়ছে; অবহেলা করায় ইতালি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা; ইরানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ

বড় ধরনের খাদ্যসঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ব। অন্তত গত ৫০ বছরের মধ্যে খাদ্যসঙ্কটের এত বড় নজির দেখা যায়নি। আসন্ন এ বিপর্যয় মোকাবেলায় প্রতিটি দেশের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে এসব কথা বলেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

গুতেরেস বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে দরিদ্রদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ এর ফলে আসন্ন অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তাদের মৌলিক পুষ্টির চাহিদা নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। ভয়াবহ খাদ্যসঙ্কটের ফলে লাখ লাখ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে। এখনই সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। যেসব দেশে প্রচুর খাদ্যশস্য রয়েছে যেসব দেশেও খাদ্যসরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। মহামারীর প্রভাবে এ বছর বিশ্বের প্রায় ৫ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়ার ঝুঁকিতে আছে। যেসব শিশু পুষ্টির অভাবের শিকার হবে তাদের মধ্যে এর প্রভাব সারা জীবন থাকবে।

বিশ্বের নাজুক খাদ্যব্যবস্থা সংস্কারের জন্য তিন দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন গুতেরেস। সেগুলো হলো : ১. সবচেয়ে সঙ্কটপূর্ণ এলাকাগুলোকে খাদ্যসহায়তার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া, খাদ্যসরবরাহ শৃঙ্খলকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে উদ্বুদ্ধ করা। ২. সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থাকে দৃঢ় করা, যেন শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতিনারী এবং খাদ্যঝুঁকিতে থাকা অন্য মানুষরা পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়। ৩. ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করা, যেন মহামারী থেকে মুক্ত হওয়ার পর স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশগতভাবে টেকসই খাদ্যব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দেয়া যায়।

‘খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির ক্ষেত্রে কোভিড ১৯-এর প্রভাব’ সম্পর্কিত জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারীর কারণে এ বছর প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের ঝুঁঁকিতে আছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব আরো ভয়াবহ হবে।

জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থার প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ম্যাক্সিমা টরেটো বলেন, বিশ্ব খাদ্যব্যবস্থা এমন ধরনের হুমকিতে আছে, যা সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেখা যায়নি। মহামারী ও লকডাউনের কারণে মানুষের চাষাবাদ, খাদ্যক্রয় ও বিক্রির সক্ষমতা ব্যাহত হয়েছে। টরেটো সাবধান করে বলেন, ‘আমাদের সতর্ক হতে হবে। আমরা যে খাদ্যসঙ্কটগুলো দেখেছি, তার চেয়ে এটি অনেকখানি আলাদা।’ খবর এএফপি, বিবিসি, জি নিউজ, আরব টাইমস, সিএনএন, ইউএন নিউজ, সিএনবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, এনডিটিভি, ডিডব্লিউ, নিউ ইয়র্ক টাইমস, হিন্দুস্তান টাইমস, সিনহুয়া ও ওয়ার্ল্ডোমিটারসের।

জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ভার্চুয়াল অধিবেশন : বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ার কারণে ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো এ বছর জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। গত বুধবার এ আন্তর্জাতিক সংস্থার সভাপতি এমন ঘোষণা দেন। জাতিসঙ্ঘের সদস্য দেশগুলোর কাছে নাইজেরিয়ার তিজানি মুহাম্মাদ বন্দের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত আগামী ২২ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর এ অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে, যাতে বিশ্বনেতাদের আগে থেকে রেকর্ডকৃত ভাষণ সম্প্রচার করা হবে। সদস্য দেশগুলোকে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের একটি ভাষণ অধিবেশন শুরুর কমপক্ষে পাঁচ দিন আগে অবশ্যই জাতিসঙ্ঘে পাঠাতে হবে।

ফ্রান্সে করোনা আক্রান্ত ফের বাড়ছে : করোনাভাইরাস এখন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেছে ফ্রান্স। তারপরও বুধবার থেকে দেশটিতে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ২৩ জন মারা গেছেন ও আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪৫ জন। ফ্রান্সে লকডাউন শিথিল করার পর গত ১৫ দিনে ফ্রান্সে গড়ে প্রতিদিন ৫৩ জন করে মারা গেছেন। আর গড়ে প্রতিদিন আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩৯ জন করে। যদিও রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার ৫০০ জনের নিচে আক্রান্ত হয়েছিল। বুধবার সেটা বেড়ে হয়েছে ৫৪৫। এ দিকে দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর প্যারিসের বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার আগামী ২৫ জুন থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ।

পরবর্তী মহামারীর প্রস্তুতির ডাক ইউরোপে : করোনা মহামারীতে ইউরোপের দিশাহারা অবস্থার বাস্তবতায় আত্মসমালোচনার পথে হাঁটলেন জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম ও ডেনমার্কের নেতারা। ভুলত্রুটি শুধরে ভবিষ্যতে মহামারীর জন্য আরো ভালো প্রস্তুতির ডাক দিয়েছেন তারা। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনকে লেখা এক যৌথ চিঠিতে মহামারী মোকাবেলার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরো সক্রিয় ভূমিকার দাবি করেছে ছয় দেশ। ইউরোপীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ দফতরের হাতে আরো ক্ষমতা তুলে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঞ্জেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ অন্য নেতারা।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিটেনের অর্থনীতি: নোভেল করোনাভাইরাসটির প্রভাবে বিশ্বে অর্থনীতির দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে ব্রিটেন। বুধবার এ সতর্কবার্তা দিয়েছে ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)। ওইসিডির জরিপে জানা যায়, ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি মহামারীটি দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাজ্যে আঘাত হানে তাহলে দেশটির অর্থনীতি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

এক দিনে আক্রান্ত ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি ব্রাজিলে : গত এক দিনে করোনাভাইরাসে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে। বুধবার ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩০০ জনের। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর মিছিলে গত মাস থেকে এগিয়ে রয়েছে ব্রাজিল। এর পরের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের।

সঙ্কটকেই পরিবর্তনের টার্নিং পয়েন্ট ভাবছেন মোদি : করোনার হানা, পঙ্গপালের উপদ্রব, ভূমিকম্পের বিধ্বংসী আশঙ্কা, বন্যা-সাইক্লোন, অর্থনীতির বিপর্যয় এবং লাদাখে চীনের উৎপাতের মধ্যেও সুযোগ খুঁজছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) ৯৫তম বার্ষিক প্ল্যানারি সেশনে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসজনিত সঙ্কটকেই আমাদের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে নিতে হবে। এ সঙ্কটের মুহূর্তকেই সুযোগে পরিবর্তন করে ফেলতে হবে।

অনাহারে মরল এক হাজার কবুতর : করোনাভাইরাসের কারণে আফগানিস্তানের বালখ প্রদেশে বিখ্যাত মাজার-ই-শরিফ মসজিদ বন্ধ থাকায় অনাহারে এক হাজারের অধিক কবুতরের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিকে লকডাউন শুরু হওয়ার আগে মসজিদটি কবুতরের ঝাঁকের জন্য দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত ছিল। মুসল্লিরা কবুতরগুলোর জন্য নিয়মিত খাবার নিয়ে আসতেন। মসজিদের হেড অব কালচারাল অ্যাফেয়ার্স কাইয়ুম আনসারি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৩০টি কবুতর মারা যায়। সাম্প্রতিক সপ্তাহে এক হাজারেরও অধিক কবুতর অনাহারে মারা গেছে।

নাইজেরিয়ায় বেড়েছে শিশুশ্রম : নাইজেরিয়াতে একাধারে লকডাউন শিথিল, অন্য দিকে স্কুল বন্ধ রাখায় শিশুশ্রম বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পরিজনদের সহায়তা দেয়ার জন্য শিশুদের হকার, ক্লিনার এবং এমনকি পথে পথে ভিক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। নাইজেরিয়াতে ২০০৩ সাল থেকে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে; তবে নাইজেরিয়াসহ আফ্রিকার বহু দেশে শিশুশ্রম এখনো ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক শ্রম দফতরের সমীক্ষা অনুযায়ী, নাইজেরিয়াতে ১০ লাখ ৫০ হাজার শিশু শিশুশ্রমে নিয়োজিত, যা পশ্চিম আফ্রিকায় সর্ববৃহৎ সংখ্যা।

ঋতুর পরিবর্তন সংক্রমণে প্রভাব ফেলছে না : গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরিবিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান বলেছেন, ঋতুর পরিবর্তন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে কোনো প্রভাব ফেলছে না। আমাদের কাছে খুব অল্পই প্রমাণ আছে যে ঋতু পরিবর্তনের কারণে করোনার সংক্রমণ প্রভাবিত হচ্ছে।

কাজ শুরুর দাবিতে রাশিয়ায় বিক্ষোভ : রাশিয়ায় দীর্ঘ সময় লকডাউনের জেরে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। লকডাউনের জেরে রেস্তোরাঁ ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক দুরবস্থা চরমে পৌঁছেছে। কাজ হারিয়েছেন বহু শেফ। লকডাউন শিথিল হওয়ায় তাই এবার কাজ শুরুর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন রুশ শেফরা। বিক্ষোভে অংশ নেয়া শেফরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে আর কিছুই নেই। প্রায় নগ্ন হয়ে যাওয়ার মতোই অবস্থা।

কুয়েতে প্রবেশে কোয়ারেন্টিন খরচ রাখার প্রস্তাব : ছুটিতে থাকা প্রবাসীদের কুয়েতে প্রবেশ করতে হলে পিসিআর পরীক্ষার সনদ দেখাতে হবে। একই সাথে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের খরচও তাকে বহন করতে হবে। গত বুধবার দেশটির স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বিতভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগের জন্য সর্বোচ্চ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

জনসনের করোনা টিকার পরীক্ষা জুলাইয়ে : নোভেল করোনাভাইরাসের জন্য তৈরি ভ্যাকসিন আগামী সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছিল মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন বা জেঅ্যান্ডজে। সে সময়টা এগিয়ে এনে জনসন অ্যান্ড জনসন জানিয়েছে, মানবশরীরে করোনার ভ্যাকসিনের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করছে এ খ্যাতনামা ওষুধ প্রস্তুকারক সংস্থা। আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকেই কাজ শুরু করতে যাচ্ছে তারা। এরই মধ্যে মার্কিন সরকারের সাথে চুক্তি হয়েছে কোম্পানিটির।

মেক্সিকোতে মৃত্যু ১৫ হাজার ছাড়াল : করোনায় মেক্সিকোতে মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি হিসাবে শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে এ ভাইরাসে নতুন করে ৭০৮ জনের মৃত্যু হয়। শেষ একদিনে মেক্সিকোতে নতুন করে রেকর্ড ৪ হাজার ৮৩৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

অবহেলা করায় ইতালি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা : করোনার প্রকোপে বিধ্বস্ত হয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৩৫ হাজার ৭ শ’ ৬৩ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৩৪ হাজার ১১৪ জন। এ পর্যন্ত ভাইরাসটি থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৯ জন। এ বিপুল মৃত্যুর মিছিল ও আক্রান্তের সংখ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দেশটির জনগণ। মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কার্যত পরিত্যাগ করেছিল। ইতালিতে কর্তৃপক্ষ যেভাবে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলা করেছে, তা নিয়ে এক আইনি লড়াই শুরু করেছেন ভাইরাসে মারা যাওয়া কিছু রোগীর আত্মীয়স্বজনরা। দেশটির বারগামো শহরে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু পৌঁছতে পারে ২ লাখে : হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের প্রধান আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ আশিষ ঝাঁ বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে করোনায়। আমরা যদি সংক্রমণ আর বাড়তে না দিই এমনকি সেটিকে স্থিতিশীল রাখিও মৃত্যুর সংখ্যা দুই লাখ হতে পারে সেপ্টেম্বরের কোনো এক সময়ে। মহামারীটি সেপ্টেম্বরেও শেষ হবে না। আমি সত্যিই চিন্তিত সামনের সপ্তাহগুলো এবং মাসগুলোতে আমরা কোথায় যাচ্ছি। টেস্ট সংখ্যা ও কন্টাক্ট ট্রেসিং বাড়িয়ে এবং মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায় কড়াকড়ি করে এটিকে রোধ করা উচিত।

সংক্রমণের মাত্রা জানতে আরো গবেষণা প্রয়োজন : উপসর্গহীন ব্যক্তির মাধ্যমে সংক্রমণের মাত্রা জানতে আমাদের আরো গবেষণা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস। তিনি বলেছেন, এ নিয়ে গবেষণা এখনো চলছে। এখনো করোনাভাইরাস নিয়ে অনেক কিছুই তাদের অজানা। নতুন এ ভাইরাস নিয়ে এখনো অনেক কিছু শেখার আছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকেই আমরা বলে আসছি উপসর্গবিহীন ব্যক্তিরাও করোনা সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তবে এর মাত্রা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আরো গবেষণা প্রয়োজন। এত দিন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, তাদের আইসোলেশনে পাঠানো এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিকে ট্রেসিং করে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো সংক্রমণ থামানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ঠিক এ কাজগুলো করে অনেক দেশই সংক্রমণ থামাতে ও নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন কোভিড রোগী : স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকার আশঙ্কা জানিয়ে বিক্ষোভ আয়োজনের তীব্র সমালোচনা করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের আটক করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় যে ধরনের গণস্বাস্থ্যবিষয়ক বিধিনিষেধ জারি রয়েছে, তার মধ্যে বিক্ষোভকারীদের এমন আচরণ দ্বিচারিতার শামিল। অস্ট্রেলিয়ায় যদি করোনার ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে, তার জন্য বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীরা দায়ী থাকবে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বর্ণবাদবিরোধী মিছিলে অংশ নিয়েছিল কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। ওই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া এক ব্যক্তির শরীরে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

করোনা বিস্তারে প্রি-সিম্পটমেটিক ও অ্যাসিম্পটমেটিক : যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক চিকিৎসাবিজ্ঞানী ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলছেন, ‘আক্রান্তদের ২৫ থেকে ৪৫ শতাংশের মধ্যে তো করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রমাণ রয়েছে। কোনো ধরনের উপসর্গ থাক আর না থাক একজন আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা একজন সুস্থ মানুষের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটতে পারে।’ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর উপসর্গগুলো প্রকাশিত হওয়ার মাঝের সময়কালকে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড। সর্বনি¤œ ৪ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত এ সময়টি হলো প্রি-সিম্পটমেটিক পিরিয়ড বা লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার আগের সময়কাল। প্রি-সিম্পটমেটিক ট্রান্সমিশন হচ্ছে, ভাইরাসটি দেহে প্রবেশ করলেও মানুষটি অসুস্থ হননি কিংবা অসুস্থ হওয়ার কোনো লক্ষণও তার মধ্যে নেই। কিন্তু পরে যেকোনো সময় তার মধ্যে উপসর্গ দেখা দেবে। দ্বিতীয়ত অ্যাসিম্পটমেটিক ট্রান্সমিশন হলো, এমন কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া যার দেহে রোগটির কোনো লক্ষণ উপস্থিত নেই। এ ক্ষেত্রে এসব রোগীর দেহে শুধু আপাতত নয় কখনোই ভাইরাসটির বা রোগটির উপসর্গ দেখা দেবে না। তারাও অপরকে সংক্রমিত করেন।

অক্সফোর্ডের টিকা উৎপাদনের কাজ ভারতে : অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির করোনা টিকা উৎপাদনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছে ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ‘অ্যাস্ট্রা জেনিকা’। সংস্থাটির কার্যনির্বাহী প্রধান পাস্কাল সরিওট এ তথ্য জানিয়েছেন। উৎপাদনের গতি বাড়াতে ভারতের টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে অ্যাস্ট্রা জেনিকা। সে অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই এ টিকা উৎপাদনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছে সিরাম ইনস্টিটিউট। গত মঙ্গলবার সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনাওয়ালা জানান, এটি উৎপাদনের জন্য ১০ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই উৎপাদন কাজ শুরু হবে।

ইরানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ : করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ লেগেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে। এপ্রিলের মাঝামাঝি লকডাউন শিথিলের পর থেকেই নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর আগে গত ৩০ মার্চ প্রথম দফা সংক্রমণের শীর্ষচূড়ায় উঠে ক্রমেই কমে আসছিল আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্লেষকরা বলছেন, লকডাউন শিথিল, মাস্ক পরায় অনীহা ও শারীরিক দূরত্ব বজায়ে কিছুটা অবহেলার কারণেই নতুন সংক্রমণের ধাক্কা লেগেছে। গত বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৯৩৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৯০ জন। আর মারা গেছেন ৮ হাজার ৫০৬ জন। এখনো করোনারোগী রয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার। বুধবার ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১১ জন আক্রান্ত এবং ৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আগের দিন আক্রান্ত ছিল ২ হাজার ৯৫ জন এবং মারা গেছেন ৭৪ জন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/507762/