১১ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার, ২:২৪

অপ্রত্যাশিত গতিতে ছড়াচ্ছে করোনা

স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে ভারতে; করোনার জেরে ব্রিটেনে দাঙ্গার শঙ্কা; দ্বিতীয় ঢেউয়ের উচ্চঝুঁকিতে ১৫ দেশ; ইতালিতে কবরের জায়গাসঙ্কট

বিশ্ব থেকে করোনাভাইরাসের মহামারীর বিদায় নিতে ঢের বাকি। এটি অপ্রত্যাশিত গতিতে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি এখনো শেষ হয়নি। বায়োটেকনোলজি ইনোভেশন অর্গানাইজেশনের আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে মঙ্গলবার রেকর্ড করা এক ভিডিওবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগের ইনস্টিটিউটের পরিচালক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি এসব কথা বলেন।

ফাউচি বলেন, ‘এখন আমরা এমন কিছু দেখছি যা আমার সবচেয়ে খারাপ দুঃস্বপ্ন হয়ে এসেছে। চার মাসের ব্যবধানে এটি বিশ্বকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ইবোলা ভীতিজনক ছিল, তবে ইবোলা কখনোই সহজে সংক্রামিত হতে পারে না। ইবোলার প্রাদুর্ভাব সবসময় একেবারেই স্থানীয় হয়। অনেকেই এইডসকে হুমকি মনে করে না কারণ এটা নির্ভর করেÑ আপনি কে, আপনি কোথায় আছেন এবং আপনি কোথায় থাকেনÑএ বিষয়গুলোর ওপর।’

ফাউচি জানান, ‘কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে শ্বসনতন্ত্রের সংক্রমণ ও খুবই উচ্চমাত্রায় ছড়ানো দেখা যাচ্ছে। রোগীদের ওপর কোভিড-১৯ এর দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানার বাকি। ভাইরাসটি নিয়ে এখনো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা নেই বলে বিজ্ঞানীরা জানেন না সেরে ওঠা রোগীদের ছয় মাস পর কী হবে।’

তিনি জানান, ‘কোভিড-১৯ রোগীদের কারো উপসর্গ নেই আবার কারো তীব্র অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে যা মৃত্যুর কারণও হচ্ছে। ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এমনকি কম বয়সীদেরও স্ট্রোক হচ্ছে। আবার শিশুদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। কোথায় এর শেষ হবে? আমরা এখনো এর শুরুতে আছি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লড়াইয়ে টিকার অপেক্ষায় আছি। পুরো বিশ্বের জন্য আমাদের বিলিয়ন-বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে।’ খবর এএফপি, বিবিসি, সিএনএন, সিএনএন, রয়টার্স, ব্লুমবার্গ, ডন, আল জাজিরা, গার্ডিয়ান, এনডিটিভি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, পার্সটুডে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, হিন্দুস্তান টাইমস ও ওয়ার্ল্ডোমিটারসের।

করোনা বর্জ্যে বাড়ছে সাগরের দূষণ : করোনাভাইরাসের কারণে মারাত্মকভাবে বাড়ছে সাগরের দূষণ। ফ্রান্সভিত্তিক একদল পরিবেশ সংরক্ষণবাদী এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তারা জানিয়েছেন, আগের প্লাস্টিক বর্জ্যরে দূষণের সাথে যুক্ত হয়েছে করোনায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজারের বোতল। যা সাগরের তলদেশে জেলিফিশের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। কোভিড বর্জ্য ডিসপোজাল কাপ এবং অ্যালুমিনিয়াম ক্যানের সাথে মিশে ভূমধ্যসাগরে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ সূত্র মতে ২০১৮ সালে ১৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিকের বর্জ্য প্রতি বছর সাগরে যাচ্ছে। যার মধ্যে প্রতি বছর শুধু ভূমধ্যসাগরে যায় ৫ লাখ ৭০ হাজার টন প্লাস্টিক। প্রতি মিনিটে প্রায় ৩৩ হাজার ৮০০ প্লাস্টিকের বোতল সাগরে যায়।

হজ বাতিলের সিদ্ধান্তে অটল ইন্দোনেশিয়া : হজ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে না ইন্দোনেশিয়া। সৌদি আরব সীমিত পরিসরে হজ আয়োজনের পরিকল্পনা করলেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না ইন্দোনেশিয়া। হজ বাতিলের বিষয়ে ইন্দোনেশিয়ার ধর্মমন্ত্রী জানান, এ পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা মেনে হজ পালন করা সরকারের জন্য অসম্ভব একটা ব্যাপার। আমরা এখন হজের জন্য ছুটলে ভাইরাস ছড়াবে খুব সহজে। এ পরিস্থিতিতে হজ সম্ভব না। হজের জন্য যে কোটাপদ্ধতি আছে সেই কোটায় এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ২১ হাজার মানুষ হজ করতে যেতে পারতেন।

পাকিস্তানে ফের লকডাউন দিতে বলল ডব্লিউএইচও : লকডাউন পরিস্থিতি শিথিল করার পর পাকিস্তানে লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এমন অবস্থায় দেশটিতে আবার লকডাউনের মতো পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশজুড়ে লকডাউন দেয়ার পরিবর্তে পাকিস্তানের পাঁচটি রাজ্যে নড়বড়ে পর্যায়ের লকডাউন দেয় পাকিস্তান সরকার। সে লকডাউনের বিধিনিষেধও গত সপ্তাহে উঠিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয় তারা। আর এসব ঘটনাপ্রবাহে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০২ জন। মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ২৫৫ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৩৬ হাজার ৩০৮ জন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, পাকিস্তানে পর্যাপ্ত পরিমাণ টেস্ট হচ্ছে না। টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো হলে আক্রান্ত আরো বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে ভারতে : ভারতে মঙ্গলবার করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে। এ দিকে দেশটির ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা পড়েছে এক বিশাল সঙ্কটে। হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার মতো অবস্থা নেই। অনেক রোগী পাঁচ-ছয় হাসপাতাল ঘুরে শেষে হাসপাতালের দরজায় মারা যাচ্ছেন। ভেতরে ভর্তি করানো যাচ্ছে না তাদের। নয়াদিল্লি এবং বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) সাধারণ ওয়ার্ডে মারাত্মক শয্যাসঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোনো বেড ফাঁকা না থাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করানো যাচ্ছে না। এ সঙ্কট দ্রুত মোকাবেলা প্রয়োজন।’ দিল্লিতে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে দ্বিগুণ। দিল্লি এখন করোনা সংক্রমিত শীর্ষ রাজ্যগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। প্রথম মহারাষ্ট্র, দ্বিতীয় তামিলনাড়ু। আক্রান্তের সংখ্যায় চীনের উহান শহরকে ছাড়িয়ে গেছে শিল্প ও বিনোদন রাজধানী মুম্বাই। দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারের সহকারী মুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়া বলেছেন, ‘আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আরো সাড়ে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তাই আমাদের হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত আরো ৮০ হাজার বেড প্রয়োজন।’

কানাডায় কমছে না মৃত্যু : কানাডায় করোনাভাইরাস অর্থাৎ কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়ে এখন দাঁড়াল ৭ হাজার ৮৯৭ জনে। আক্রান্ত ৯৬ হাজার ৬৫৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫৫ হাজার ৫৭২ জন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও কানাডায় কমতি নেই। কোভিড-১৯ এ এই মৃত্যু কুইবেকের মন্ট্রিয়ল এবং অন্টারিও’র টরন্টো শহরেই বেশি। তবে অর্ধেকের চেয়ে বেশি কুইবেক প্রদেশে। কানাডার বৃহত্তর দুটি শহর টরন্টো এবং মন্ট্রিয়লে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। দেখা যাচ্ছে, টরন্টোর পার্কগুলোতে লোকজনে গিজগিজ করছে। কোথাও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। কানাডার বিভিন্ন পার্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, পার্কগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য গোল গোল বৃত্তাকার করে দেয়া হবে।

ইতালিতে কবরের জায়গাসঙ্কটে মুসলিমরা : করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ইতালি। দেশটিতে অন্য জনগোষ্ঠীর মতো মারণ এ ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছে অনেক মুসলিম। কিন্তু কবরের জায়গাসঙ্কট তাদের শোককে যেন বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। শহর অঞ্চলের সমাধিস্থানগুলোতে মুসলিমদের জন্য কোনো অংশ বরাদ্দ নেই। ইমাম ও মুসলিম কমিউনিটির নেতারা কর্তৃপক্ষের কাছে আরো বেশি ইসলামিক কবরস্থানের জায়গা চাচ্ছেন। ইতালিতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪.৩ শতাংশ। তাদের ৫৬ শতাংশই বিদেশী নাগরিকত্বধারী, যাদের অনেকেই এসেছেন উত্তর আফ্রিকা বা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে।

উপসর্গহীন ব্যক্তির মাধ্যমেও করোনা ছড়ায় : নোভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ নেই, এমন কারো মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঘটনা ‘খুবই বিরল’ গত সোমবার এমনটাই জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু সংস্থাটির বক্তব্যের সাথে বিশ্বের অনেক অনেক বিজ্ঞানীই একমত হতে পারেননি। ফলে এ নিয়ে সৃষ্টি হয় তর্ক-বিতর্ক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে সংস্থাটি নতুন ব্যাখ্যায় জানিয়েছে, উপসর্গহীন ব্যক্তির মাধ্যমেও করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। সোমবার সংস্থার ইমার্জিং ডিজিজ বিভাগের প্রধান মারিয়া ভন কেরকোভ বলেছিলেন উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীদের থেকে করোনা সংক্রমণের হার খুব কম। তবে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি মডেলিং গবেষণার তথ্য উপসর্গহীন আক্রান্তদের কাছ থেকে ৪০ শতাংশ সংক্রমণ ছড়ানোর কথা স্বীকার করেছেন।

করোনা থেকে রক্ষা পেতে ন্যাবারোর পরামর্শ: ভ্যাকসিন না পাওয়া গেলে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরার পথ আরো দীর্ঘ ও কঠিন হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশি বেশি করে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ও অ্যান্টিবডির পরীক্ষা করতে হবে। কন্ট্যাক্ট-ট্রেসিংয়ের প্রক্রিয়া আরো জোরদার করতে হবে। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের গ্লোবাল হেলথের অধ্যাপক ড. ডেভিড ন্যাবারোর পরামর্শ, করোনাভাইরাসের ক্রমাগত হুমকি থেকে রক্ষা পেতে সব দেশকে নিজেদের জনগণকে রক্ষা করার মতো অবস্থায় যেতে হবে।

অ্যান্টার্কটিকায় গবেষণা কমাচ্ছে নিউজিল্যান্ড: অ্যান্টার্কটিকাকে করোনাভাইরাসমুক্ত রাখতে আসন্ন মৌসুমে সেখানে গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউজিল্যান্ডের সরকারি গবেষণা সংস্থা। অ্যান্টার্কটিকা নিউজিল্যান্ড জানিয়েছে, চলতি বছরের অক্টোবর থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত তারা অ্যান্টার্কটিকায় মোট ৩৬টি গবেষণার পরিকল্পনা করলেও এখন ওই প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২৩টিকেই বাদ দেয়া হচ্ছে। কেবলমাত্র দীর্ঘমেয়াদি বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, জরুরি কার্যক্রম ও পরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট কাজগুলোই চলবে। কোভিড-১৯ থেকে অ্যান্টার্কটিকাকে মুক্ত রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

রক্তের গ্রুপের সাথে করোনার যোগসূত্র : করোনা আক্রান্ত রোগীদের জিনের গঠন বিন্যাস বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক জেনেটিক টেস্টিং জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ২৩অ্যান্ডমি জানিয়েছে, জিন এবং রক্তের গ্রুপের সাথে ভাইরাসের সম্পর্ক রয়েছে। সংক্রমণ কতটা ছড়াবে বা কোন ব্যক্তির শরীরে ছড়াবে সেটা নাকি অনেকটাই নির্ভর করে এ রক্তের গ্রুপের ওপরে। সাড়ে সাত লাখ কোভিড রোগীর ডিএনএ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ‘ও’ রক্তের গ্রুপ যাদের আছে, তাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়াবার ঝুঁকি কম। আর ‘এ’ রক্তের গ্রুপ যাদের, তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। ‘এ’ গ্রুপের মধ্যেই নাকি করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে।

সংক্রমণের ৪০ শতাংশই ছড়াচ্ছে উপসর্গহীনরা : যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলেছে, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ উপসর্গহীন হতে পারে। সংস্থাটির ধারণা, করোনা সংক্রমণের ৪০ শতাংশ মানুষ অসুস্থ হওয়ার আগেই ছড়াচ্ছে। এর অর্থ হলো তারা প্রাক-উপসর্গহীন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জেন্সিস প্রোগ্রামের নির্বাহী পরিচালক ড. মাইক রায়ানও বলেছেন, করোনাভাইরাসে সম্ভাব্য উপসর্গহীন সংক্রমণ সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু অজানা। আমি নিশ্চিত যে এটি ঘটছে। প্রশ্ন হলো কতটা। এ বিষয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব পেতে হবে, অনেক অজানা রয়ে গেছে।

আরো আগেই সংক্রমণ শুরুর কথা অস্বীকার চীনের : ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের আগেই চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে বেইজিং। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের নতুন এক গবেষণায় উঠে আসে, ২০১৯ সালের আগস্টের শেষ দিক থেকেই উহানে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। হাসপাতালে কার পার্কিংয়ের স্যাটেলাইট ইমেজ ও ইন্টারনেটে তথ্য সার্চের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন হার্ভার্ড ও বোস্টন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। তবে গবেষকদের এমন বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে চীন। মঙ্গলবার এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নারী মুখপাত্র হুয়া চুনিং গবেষণার ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বলেন, রাস্তায় যান চলাচল থেকে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া একেবারেই অবান্তর।

হার্ড ইমিউনিটি অর্জন টিকার ওপর নির্ভরশীল: আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চীন নোভেল করোনাভাইরাসের একটি ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির শীর্ষ রেসপিরেটরি বিশেষজ্ঞ ঝং ন্যানশান। ন্যানশান বলেছেন, ‘কোনো ধরনের প্রতিরোধ না থাকলে ব্যাপক মৃত্যু ছাড়া হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব নয়। হার্ড ইমিউনিটি অর্জন টিকা আসা ছাড়া চিন্তা করা ঠিক হবে না। প্রাকৃতিক ইমিউনিটি অর্জনের জন্য একটি দেশের কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষকে নোভেল করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে হবে। আর এটি হলে ৩ থেকে ৪ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। এখনো এর একমাত্র সমাধান গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগ। হার্ড ইমিউনিটি এখনো ভ্যাকসিন তৈরির ওপর নির্ভর করছে।’

লকডাউন না মানায় তিন বাহিনীর প্রধান বরখাস্ত : নোভেল করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় আরোপিত লকডাউন অমান্য করায় আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান দেশটির পুলিশপ্রধান আরমান সার্গসিয়ান, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এডওয়ার্ড মারতিরোসিয়ান এবং সামরিক বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফকে বরখাস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে তারা বাজে উদাহরণ তৈরি করেছেন। ছেলের বিয়ে অনুষ্ঠানে বিশাল পার্টির আয়োজন করেছেন সেনাপ্রধান, যখন দেশটিতে এ ধরনের সামাজিক সমাবেশ নিষিদ্ধ।

পেরুতে করোনায় আক্রান্ত ২ লাখ পেরিয়েছে : দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখন দুই লাখের ওপরে। সংক্রমণের দিক থেকে দেশটি বিশ্বে অষ্টম সর্বোচ্চ স্থানে উঠে এসেছে। ফলে দেশটিকে করোনাভাইরাসের আরেকটি ভরকেন্দ্র হিসেবে দেখা দিয়েছে। পেরুর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানায়। মঙ্গলবার কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ৭৩৮ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৩ হাজার ৭৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবারে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার বেড়ে গেছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনাভাইরাসে নতুন করে ১৬৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

অসতর্কতায় মৃত্যুর দায় নেবে না উগান্ডার সরকার : উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইউয়েরি মুসেভিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে তার যতটুকু দায়িত্ব তা তিনি করেছেন। এবার অসতর্কতার কারণে মানুষ মরতে শুরু করলে তার দায় তিনি নেবেন না। প্রেসিডেন্ট মুসেভিনি বলেছেন, তার নির্দেশনা মানার ফলেই কেউ এখনো মারা যায়নি। কয়েকজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে মাত্র। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও দেশটির শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যাচ্ছে না এবং সবাই মাস্কও পরছে না। তার সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনারোগীদের চিকিৎসায় ৯ হাজার শয্যার হাসপাতালের পরিকল্পনা করছে। তবে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ৩০ হাজার শয্যার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।

করোনার জেরে দাঙ্গার শঙ্কা ব্রিটেনে : করোনাভাইরাসে সৃষ্ট মহামারীর প্রভাবে ব্রিটেনে এই গ্রীষ্মে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ সরকারের শীর্ষ পরামর্শদাতা ও কেইল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক মনোবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক ক্লিফোর্ড স্টট। তিনি বলেন, ‘কোভিড -১৯ এর কারণে ব্রিটেনে ব্যাপক কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে। চলমান বেকারত্ব এবং জাতিগত ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এসব কারণ ‘সঙ্ঘাত’ বাড়াতে পারে। লকডাউনের কারণে দারিদ্র্য এবং সম্রদ্ধ অঞ্চলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে।

আদালতের নির্দেশে তথ্য দিচ্ছে ব্রাজিল : সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আবারো ওয়েবসাইটে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করল ব্রাজিলের সরকার। তিনটি রাজনৈতিক দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এ আদেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক অ্যালেক্সান্দ্রে ডি মোরাইস। এর পরপরই ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য ফিরিয়ে আনে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে, গত সপ্তাহে শুধু দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিল ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে দাবি করে আর বিস্তারিত তথ্য দেয়া হবে না বলে জানিয়েছিল তারা।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের উচ্চঝুঁকিতে ১৫টি দেশ : বিশ্বের ৪৫টি বড় অর্থনীতির দেশের ওপরে সমীক্ষা চালিয়েছে ভারতের সিকিউরিটিজ রিসার্চ ফার্ম নমুরা। সমীক্ষায় নমুরা বলেছে, অর্থনীতির বড় অংশ খুলে দেয়া হয়েছেÑ এমন ১৭টি দেশে সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ আসার লক্ষণ নেই। ১৩টি দেশের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সেকেন্ড ওয়েভের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এ দেশগুলোর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলক কম। তবে ১৫টি দেশের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছেÑ সেকেন্ড ওয়েভের ঝুঁকি প্রবল, আর এসব দেশের তালিকায় ভারতও রয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/507490