১৮ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ১০:১৮

বিনামূল্যের বই ছাপা নিয়ে যা হচ্ছে-

২০১৮ শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যের বই ছাপা নিয়ে হোঁচট খাচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বিশ্বব্যাংকের ক্লিয়ারেন্স না পাওয়া, মাধ্যমিক ও কারিগরি এবং ব্রেইল বইয়ের চাহিদা না পাওয়ায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। আর এ কারণে নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরও টেন্ডার আহ্বান করতে পারছে না এনসিটিবি। এতে আগামী শিক্ষাবর্ষের বই সময়মতো ছাপা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।অন্যদিকে আন্তর্জাতিক টেন্ডারসহ দরপত্রে কোনো পরিবর্তন আনা হলে তা মুদ্রণ শিল্প সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে করতে হবে। অন্যথায় যেকোনো জটিলতার জন্য এনসিটিবি দায়ী থাকবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুদ্রণ শিল্প মালিকরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যে পাঠ্যবই মুদ্রণের জন্য সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা (টেএপি) গ্রহণ করেও সে মতে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বই ছাপানোর প্রথমদিকের গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ দরপত্র নির্দেশনা প্রণয়ন ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা। এই দুটি কাজই আটকে গেছে বিশ্বব্যাংকের ছাড়পত্র ও বইয়ের চাহিদা না পাওয়ায়। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রাথমিকের বই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল বইয়ের চাহিদা মাউশি এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বইয়ের চাহিদা সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর দেয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে চাহিদাপত্র দেয়ার জন্য কয়েক দফা চিঠি দেয়া হলেও এ পর্যন্ত পুরো চাহিদা পাওয়া যায়নি। এক দফা সময় বাড়িয়ে প্রাথমিকে ১০ কোটি ২৭ লাখ বইয়ের চাহিদা পাওয়া গেছে বলে জানান উৎপাদন নিয়ন্ত্রক প্রফেসর আব্দুল মাজিদ। তিনি বলেন, এরপরও কাজ শুরু করতে পারছি না বিশ্বব্যাংকের ছাড়পত্রের জন্য। তিনি বলেন, চলতি মাসের ৮ তারিখ এই ছাড়পত্র দেয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত আমরা সেটি পাইনি। এ জন্য টেন্ডার আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে পারছি না। অন্যদিকে সারা দেশে কারিগরিসহ মাধ্যমিক পর্যায়ে বইয়ের চাহিদা দেয়ার কথা মাউশির। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশের ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মধ্যে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, খুলনা, সিলেট চারটি চাহিদাপত্র পেয়েছে এনসিটিবি। বাকি ৫টির চাহিদা কবে নাগাদ দেবে তাও সঠিকভাবে বলছে পারছে না মাউশি। মাউশির উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) একেএম মোস্তফা কামাল বলেন, ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এনসিটিবিকে বইয়ের চাহিদা দেয়ার কথা। কিন্তু ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম চলে। ভর্তি শেষ হলেও সংখ্যার নিরূপণ করে চাহিদা দিতে একটু দেরি হচ্ছে। এনসিটিবির প্রধান বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোশতাক আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, এই সমস্যার কথা তারা মন্ত্রণালয়ের দরপত্র নির্দেশনা প্রণয়ন কমিটির বৈঠকে কেন বলেনি। তিনি বলেন, তাদের চাহিদা না পাওয়ায় পুরো শিডিউল উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে। কোনো কাজ শুরু করতে পারছি না। একই সমস্যা করছে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর। বারবার তাগিদ দেয়ার পরও তারা ব্রেইল বইয়ের চাহিদা দেয়নি।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, সময়মতো কাজ শুরু করতে না পারলে শেষের দিকে বইয়ের মান ও ভুলের সংশোধনের দিকে নজর দেয়া যায় না। ওই সময় শুধু নির্দিষ্ট সময় বই পৌঁছানো নিয়ে এনসিটিবি, প্রিন্টার্সসহ সবাই ব্যস্ত হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, গত বছরের বিল এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। একটি বিল না দিয়ে আরেকটি টেন্ডার করা তো অপরাধ। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে বিল দিতে হবে। না হলে ২ ভাগ হারে লভ্যাংশ দিতে হবে। কোনোটাই করছে না এনসিটিবি। তিনি বলেন, এনসিটিবির ফান্ডের টাকা থেকে আমাদের বিল দিতে পারে। কিন্তু সেটি না করে তারা এই টাকা এফডিআর করে লভাংশ খাচ্ছে। বছরের শুরুতেই কাজের হোঁচট খাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রতি বছর এই ধরনের ঝামেলা করে। এবারও সেটি শুরু করছে। তাদের কারণে সরকারকে আন্তর্জাতিক টেন্ডার করতে হচ্ছে। এতে দেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে। দেশীয় সম্ভাবনাময় একটি শিল্প হুমকির মুখে পড়ছে। তিনি বলেন, আমাদের দাবি, অবিলম্বে আন্তর্জাতিক টেন্ডার বাতিল ও বিশ্বব্যাংকের খবরদারি বন্ধ করতে হবে। মাত্র ৯% টাকার জন্য বিশ্বব্যাংকের কোনো খবরদারি আমরা চাই না।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=57778&cat=3/-