১৮ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ৯:৫৫

চাল মাছ মুরগি সবজি অস্বস্তি সব বাজারেই

বাজারে থরে থরে পণ্য সাজানো। কোনোটিরই দাম কমছে না। সুযোগ পেলেই কোনো-না-কোনো অজুহাত দেখিয়ে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। চাল, ডাল, মাছ, মুরগি, সবজি সব বাজারেরই একই অবস্থা। স্বস্তি নেই কোনো বাজারেই। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে মোটা-সরু সব চালের। সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। একবার বেড়ে গেলে সে দাম আর কমছে না। বাড়তি দাম রাখার জন্য পাইকাররা দুষেন খুচরা বিক্রেতাদের। আর খুচরাওয়ালাদের আঙুল পাইকারদের প্রতি। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে বচসা লেগে আছে বছরের পর বছর। বাজার ব্যবস্থাপনায় সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ভোক্তাদের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশে বর্তমানে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তবুও চালকল মালিকেরা কয়েক দফায় দাম বাড়িয়েছেন। রাজধানীর পাইকারি চালের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা চালের দর বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং সরু ও মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে গড়ে ২০০ টাকা। বাজারে বর্তমানে মিনিকেট চালের বস্তা ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, গুটি ও স্বর্ণা ১ হাজার ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, পারিজা ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা, লতা ও বিআর-২৮ চাল ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের দাম আবারো বাড়তির দিকে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহেই বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। খুচরা বাজারে ৫০ টাকার নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। এ ছাড়া স্বর্ণা চাল ৪২ টাকা, পারিজা ৪২ থেকে ৪৪ টাকা উন্নত মানের মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, বিআর আটাশ চাল ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৫৩ থেকে ৫৬ টাকা, হাস্কি নাজির ৪২ টাকা, বাসমতি ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, কাটারিভোগ ৭৪ থেকে ৭৬ টাকা এবং পোলাও চাল ১০০ (পুরনো), নতুন ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায়, কালো বেগুনের দাম ১০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সাদা বেগুন ৭০ টাকায়, প্রতি কেজি শিম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, টেমেটো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, করলা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুরমুখি ৬০ টাকা, আলু ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং পেঁপে ২৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লেবু হালি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, প্রতি আঁটি শাক ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি পণ্যের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। কেজি প্রতি দেশী মসুর ডাল (দেশী) ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, মুগ ডাল (দেশী) ১১০ টাকা, ভারতীয় মুগ ডাল ৯৫ টাকা, মাষকলাই ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা এবং ছোলা ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৯৫ থেকে ১০২ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল কেজি প্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে দেশী পেঁয়াজ কেজি প্রতি ২৮ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ২২ টাকা, দেশী রসুন ১০০ টাকা, ভারতীয় রসুন ২১০ টাকা এবং চীনা রসুন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী আদা ১২০ টাকা, চীনের আদা ৮০ টাকা, ক্যারালা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সরবরাহ বেশ ভালো থাকলেও দাম অত্যধিক। আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ টাকা ১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রকার ভেদে চিংড়ি ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায়, ইলিশ কেজি প্রতি (মাঝারি) ১৪০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা।
গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের মতো বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে। খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। মুরগির বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা, লেয়ার মুরগি ১৮০ টাকা, দেশী মুরগি প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, পাকিস্তানি লাল মুরগি কেজি প্রতি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

www.dailynayadiganta.com/detail/news/204431