২০ মে ২০২০, বুধবার, ৩:২৯

যে যেভাবে পারছে শহর ছাড়ছে

কখনো পায়ে হেঁটে, গোপনে নদী পার হয়ে, কখনো রোগী হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে, আবার গণমাধ্যমকর্মী সেজেও অনেকে ছুটছেন গ্রামের উদ্দেশ্যে। পথে পথে বাধা অতিক্রম করছেন এভাবে নানা উপায়ে। সব বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে শহর ছাড়ছেন অনেকে। ঈদ করতে যাচ্ছেন। রাজধানী থেকে বের হওয়ার রাস্তাগুলো গতকাল দিনভর ছিল সরগরম। এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। তারা আশপাশের গাড়িগুলো ছেড়ে দিচ্ছেন বলে এই অভিযোগ।

রাজধানী থেকে বের হওয়ার সকল পথ কার্যত সিল করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এর ভেতরেও ফাঁকফোকর দিয়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন। আর এভাবে যেতে মানুষ অনেক অসাধু পন্থা অবলম্বন করছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল সকাল থেকেই পোস্তগোলার বুড়িগঙ্গা সেতু ও নয়া বাজারের বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু দিয়ে দূর পাল্লার যানবাহন আটকে দেয়া হচ্ছে।

পোস্তগোলা এলাকার বাসিন্দা মনিরুল জানান, যারা সিঙ্গেল আছেন তারা ওপারে বাড়ি এ কথা বলে পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হচ্ছেন। আর যাদের সাথে নারী ও শিশুরা রয়েছে এবং ওপাড়ে বাড়ি বলে পার পারবেন না, এমন মানুষেরা শ্মশানঘাট ও মুন্সীখোলা ঘাটসহ কয়েকটি চোরাইপথ দিয়ে ট্রলারযোগে বুড়িগঙ্গা পার হচ্ছেন। এরপর হাসনাবাদের ভেতর দিয়ে সিএনজি বা অটোরিকশায় তারা আব্দুল্লাহপুর যাচ্ছেন। সেখান থেকে তারা নানা উপায়ে তারা মাওয়া পর্যন্ত যাচ্ছেন। এরপর সেখান থেকে ঝুঁিক নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের আড়ালে তারা পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন।

এ দিকে বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার জন্য যে গাড়ি ব্রিজের কাছে জড়ো হয় তাতে ভোরেই পোস্তাগোলা এবং নয়াবাজারে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। এই গাড়িগুলোর ভেতর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু গাড়ি ছেড়ে দেয়। আমিনবাজারেও একই অবস্থা। ব্রিজ পার হওয়ার অপেক্ষায় শতশত গাড়ি। গাবতলী পার হয়ে গাড়ি পৌঁছে গেছে টেকনিক্যাল পর্যন্ত। এরমধ্যে কিছু গাড়ি পুলিশ ঘুরিয়ে দিচ্ছে, কিছু গাড়ি যেতে দিচ্ছে। আবার কিছু গাড়ি পার হওয়ার আশা নিয়ে অপেক্ষা করছে। পায়ে হেঁটে অনেকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যারা যেতে পারছে না তারা ব্রিজ থেকে নেমে নদী পার হয়ে ওপার গিয়ে আমিন বাজার দিয়ে গাড়িতে উঠছে আরিচা বা পাটুরিয়া যাওয়ার জন্য। সেখানে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য জানান, মানুষ খুবই ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে। কে কিভাবে যাবে তার নিশ্চয়তা নেই কিন্তু তারপরেও সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছে।
উত্তরার আব্দুল্লাহপুরেও গতকাল গ্রামমুখী গাড়ির ভিড় ছিল। এতে ওই এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। পুলিশ আব্দুল্লাহপুরে দূর পাল্লার প্রাইভেট গাড়িগুলো আটকে দেয়।

এ দিকে কোথাও কোথাও কিছু গাড়ি ছাড়ারও অভিযোগ মিলেছে। বিশেষ করে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদীসহ আশপাশের গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

গতকালও শিমুলিয়া ঘাট এবং পাটুরিয়া ঘাটে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। তারা ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ চেষ্টা করছে এক এলাকার মানুষ যাতে অন্য এলাকায় না যায়। এ বিষয়ে আইজিপির কড়া নির্দেশ রয়েছে। কোনোভাবেই ছাড় না দেয়ার ব্যাপারে আইজিপি নির্দেশ দিয়েছেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে ঢাকায় প্রবেশ ও বাইরের গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে

সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গত কয়েক দিনের তুলনায় গতকাল ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ অনেকটা কম ছিল। তবে ঢাকা থেকে বিপুল ব্যক্তিগত যানবাহন প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহন বের হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় পুলিশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁওয়ের মেঘনাঘাট ও সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় দু’টি চেকপোস্ট বসিয়ে ব্যক্তিগত যানবাহন প্রাইভেট কার মাইক্রোবাস সিএনজি মোটরসাইকেলে চড়ে যেসব যাত্রী ঢাকায় প্রবেশের চেষ্টা করছেন এবং যারা ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন সেসব গাড়ি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ঢাকায় প্রবেশের বা বাইরে হওয়ার জন্য যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে এসব যানবাহন ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম জানান, ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঢাকায় যাতে কোনো যানবাহন ব্যক্তিগত গাড়ি প্রাইভেট কারে করে কেউ ঢাকায় প্রবেশ বা ঢাকা থেকে বের হতে না পারে সেই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া যেসব গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করছে তাদেরকে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসাসহ যৌক্তিক কারণ যেসব যাত্রীরা দেখাতে পারছেন তাদেরকে ঢাকায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/503127/