২০ মে ২০২০, বুধবার, ৩:২৭

ফার্মের মুরগি ১৮০ টাকা অস্থিরতা পেঁয়াজেও

করোনার শুরুতে ১০০ টাকায় নেমে আসা ফার্মের মুরগির কেজি এখন ১৮০ টাকা। অস্থিরতা দেখা দিয়েছে পেঁয়াজের বাজারেও। বিক্রেতাদের দাবি, যে করোনার কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম পড়ে গিয়েছিল, এখন অস্বাভাবিক বেড়েছে সেই করোনার প্রভাবেই। তারা জানান, গত ১০ দিনে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৬০ টাকা। করোনার কারণে অনেক ফার্ম বাচ্চা উৎপাদন না করায় দাম বাড়ছে জানিয়ে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ঈদের আগে দাম আরো বাড়বে। আর পেঁয়াজের অস্থিরতার পেছনে করোনার পাশাপাশি ভারত থেকে আসা-না আসার দোদুল্যমানতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাদা রঙের পোলট্রি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা দুই দিন আগে ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। লাল রঙের লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। অথচ দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে পোলট্রি মুরগির চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যায়। করোনার আগে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পোলট্রি করোনার শুরুতে ১১০ টাকায় নেমে আসে। তবে রোজার শুরুতে কিছুটা দাম বাড়ে। এতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে পোলট্রি মুরগি। ওই সময় লেয়ার মুরগি বিক্রি হয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে পোলট্রি মুরগির দাম যে হারে বাড়ছে তাতে ঈদের আগে হয়তো কেজি ২০০ টাকা হয়ে যাবে। কারণ এখন গরু ও খাসির গোশতের অনেক দাম। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে গরু ও খাসির গোশত কিনে খাওয়া সম্ভব না। ফলে ঈদের দুই-তিন দিন আগে পোলট্রি মুরগির চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। এর আগে বেশ কিছুদিন এ দাম স্থির থাকার পর চলতি মাসের ৮ তারিখে এক লাফে পোলট্রির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা হয়ে যায়। এরপর ১২ মে কিছুটা দাম কমে ১৪০ টাকায় নামে। তবে ১৫ মে আবার দাম বেড়ে কেজি ১৭০ টাকায় পৌঁছে যায়। এখন তা আরো বেড়ে ১৮০ টাকা ছুঁয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে পোলট্রি মুরগির দাম ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, কম দামে ব্রয়লার খাওয়ার দিন শেষ। এখন দিন যত যাচ্ছে, পাইকারিতে দাম তত বাড়ছে। ঈদের আগে পর্যন্ত এভাবে দাম বাড়তেই থাকবে। হয়তো ঈদের পর চাহিদা কমলে দাম কিছুটা কমতে পারে। ঈদের আগে দাম কমার সম্ভাবনা খুবই কম। তারা জানান, কিছু দিন আগেও পাইকাররা জোর করে ব্রয়লার মুরগি ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এখন ফার্ম থেকে মুরগি কম আসছে।

হঠাৎ পোলট্রি মুরগির অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ হিসেবে উৎপাদকরা জানিয়েছেন, করোনার শুরুতে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যায়। এতে ফার্ম মালিকরা লোকসানে কম দামে মুরগি বিক্রি করেন। যে কারণে তারা নতুন বাচ্চা উৎপাদনে যাননি। আগের যে বাচ্চা ছিল এখন সেই বাচ্চা বড় করে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কমেছে। তারা জানান, করোনার কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম ব্যাপক হারে কমে যায়। ফার্ম থেকে লোকসানে মুরগি বিক্রি করতে হয়েছে। ফার্মে ব্রয়লার মুরগির কেজি ৬০ টাকাতেও বিক্রি করতে হয়েছে। এখন ফার্মে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। আর বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা পিস, যা এক সময় ১০ টাকায় নেমেছিল।

এ দিকে রোজার মধ্যে কিছু দিন কমার পর ঈদ সামনে রেখে আবার বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা বা ১৩ শতাংশ। আর পাইকারিতে বেড়েছে চার টাকা বা ১১ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা দেশী পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, যা দু’দিন আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর রোজা শুরু হওয়ার আগে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে রোজার মধ্যে হুট করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকা পর্যন্ত ওঠে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ কাছাকাছি চলে আসায় পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। অনেকে ঈদের জন্য কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন। তা ছাড়া বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ কম রয়েছে। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়া-কমার খেলা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত রফতানি বন্ধ করলে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর সরকারের নানামুখী তৎপরতায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও তা আর ১০০ টাকার নিচে নামেনি।

তবে গত মার্চের শুরুতে রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর দেশের বাজারে দফায় দফায় কমতে থাকে পেঁয়াজের দাম। কয়েক দফা কমে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে আবার বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। ৪০ টাকার পেঁয়াজ এক লাফে ৮০ টাকায় উঠে যায়। এ পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে ভোক্তা অধিদফতর ও র্যাব। পেঁয়াজের বাজারে চলে একের পর এক অভিযান। এতে আবারো দফায় দফায় দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকায় নেমে আসে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/503119