১৬ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৭

বিমানে ভ্রমণের ব্যয় বাড়ছে

 

বিমানযাত্রীদের ভ্রমণ খরচ বাড়ছে। অতিরিক্ত এই খরচ বিমানযাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা হবে দু'ভাবে। 'বিমানবন্দর ফি' এবং 'যাত্রী নিরাপত্তা ফি'। ফি দুটি আদায় করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এতে আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীকে দেড় হাজার আর সার্কভুক্ত দেশগুলোর বাইরে অন্য দেশের বিমানযাত্রীদের প্রায় তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে। এই বাড়তি অর্থ টিকিট বিক্রির সময় যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করবে এয়ারলাইন্সগুলো, যা পরে সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি যাত্রীপ্রতি ১০ ডলার, এর বাইরে অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি ২০ ডলার ও অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে যাত্রী নিরাপত্তা ফি যাত্রীপ্রতি সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য ২০ ডলার, এর বাইরের দেশগুলোর জন্য ১৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের জন্য যাত্রী নিরাপত্তা ফি ১০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী ১৯ মার্চ বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দেশীয় বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

যাত্রীদের কাছ থেকে এসব ফি আদায়ের প্রস্তাব দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বেবিচকের পরিচালনা পর্ষদের ২২৫তম সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন পায়। পরিচালনা পর্ষদের সভায় পাকিস্তান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে আদায় করা নিরাপত্তা ফি ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি'র চিত্র তুলে ধরা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, বিশ্বের সব বিমানবন্দরেই যাত্রী উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ফি নেওয়া হয়। বৈঠকে আরও জানানো হয়, পাকিস্তানে যাত্রীপ্রতি নিরাপত্তা ফি ১০ ডলার ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ১০ ডলার, ভারতে যাত্রীপ্রতি নিরাপত্তা ফি ১৫ ডলার ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ৫ দশমিক ১৮ ডলার, যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রীপ্রতি নিরাপত্তা ফি ৫ ডলার ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ৪ দশমিক ৫ ডলার, যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দরে যাত্রীপ্রতি নিরাপত্তা ফি ৬ পাউন্ড আদায় করা হয়। এসব বিষয় পর্যালোচনা করে নতুন ফি নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

বেবিচকের পরিচালনা পর্ষদের ওই সভায় উপস্থাপন করা কর্মপত্রে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রদত্ত সেবার ওপর ভিত্তি করে বিমানবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ফি, যেমন যাত্রী সার্ভিস ফি, নিরাপত্তা ফি, বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি আদায় করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ফি আদায় করে যে অর্থের সংস্থান হয়, তা দিয়ে বিমান বন্দরগুলোর

বিভিন্ন সেবার বিপরীতে ব্যয় হওয়া খরচ মেটানো হয়।

বিমান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে প্রায় ৬.২৫ মিলিয়নের বেশি যাত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিমান পরিবহন সেবা গ্রহণ করেছেন। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা প্রায় ৭ মিলিয়ন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ৮ মিলিয়নে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য ২০১৯ সালে বাড়তি যাত্রীর জন্য নতুন টার্মিনাল ভবনের প্রয়োজন হবে।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক জানান, বিশ্বের প্রায় সব বিমানবন্দরে যাত্রীদের কাছ থেকে নিরাপত্তা ও উন্নয়ন ফি আদায় করা হয়। সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব ক'টি বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান রেড লাইনকে প্রায় শতকোটি টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেক বেড়েছে। তবে যাত্রীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে, এ ধরনের ফি নির্ধারণ করা হবে না। দেশের যাত্রীদের ক্ষেত্রে সবর্ে্বাচ্চ ১০০ থেকে ২৫০ টাকা বাড়তি ব্যয় হতে পারে।

বিমান সংশ্লিষ্টরা জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। আর বিমানবন্দরে নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি কিনতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ব্যয় হবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও বিমানবন্দরে আধুনিক রাডার স্থাপনে ব্যয় হবে প্রায় হাজার কোটি টাকা। নিরাপত্তা ও যাত্রী উন্নয়ন ফি নেওয়া হলে এ কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা এ অর্থ এসব কাজে ব্যয় করা যাবে।

http://bangla.samakal.net/2017/03/16/277602