১৬ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৫

ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপ লাইন নির্মাণের শুরুতেই হোঁচট: সরাসরি তেল সরবরাহ

 

ঢাকা-চট্টগ্রাম সরাসরি তেল সরবরাহের লক্ষ্যে পাইপলাইন নির্মাণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বারবার তাগাদা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ করতে পারেনি কার্যাদেশ পাওয়া কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। এর ফলে পাইপলাইন নির্মাণের মূল কাজও পিছিয়ে যাচ্ছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি তেল পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের ‘সম্ভাব্যতা যাচাই প্রস্তাব’ তৈরি করে ২০১৫ সালের ২২ জুন জ্বালানি বিভাগে দেয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। ওই বছরের অক্টোবরে প্রকল্পটির সময়সীমা নির্ধারণ করে পরামর্শক নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় বিপিসিকে। ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইআইএলকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন জমা দিতে বললেও তারা প্রতিবেদনটি এখনও জমা দেয়নি। এরপর গত ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না করে উল্টো আরও সময় চেয়েছে ঠিকাদার কোম্পানি ইআইএল। এ অবস্থায় আগামী ২৩ মার্চের মধ্যে জরিপ ফলাফল জমা দেওয়ার নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিপিসি’র পরিচালক (পরিচালন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, এই প্রকল্পটি আমাদের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত একটি প্রকল্প। কিন্তু সময়মত প্রতিবেদন না পেলে মূল কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২৩ মার্চের মধ্যে জরিপ ফলাফলসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে ইআইএলকে। তা না হলে কোম্পানিটিকে দেওয়া কার্যাদেশ বাতিল করা হবে।

বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নৌপথে পরিবহন হয়। এ খাতে ট্রানজিট লসসহ বিপিসির ব্যয় হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তা ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে ট্যাংকার ঢাকায় আসতে সময় লাগে প্রায় ২৮ থেকে ৩৬ ঘণ্টা। এ ছাড়া তেল পরিবহনের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক চুরিরও অভিযোগ রয়েছে। এই সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

বিপিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বেসরকারি খাতের ৩০ হাজার ট্যাঙ্কলরি এবং শতাধিক রেলওয়ে ওয়াগন দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। নদীপথেও বিপুল সংখ্যক নৌযানের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এর ফলে হরতাল-অবরোধ বা অন্য কোনো রাজনৈতিক কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে জ্বালানি তেল পরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও সংকট তৈরি হয়। এভাবে দীর্ঘমেয়াদে তেল পরিবহন করা অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুলও। পাইপলাইনটি নির্মিত হলে এ সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি বার্ষিক অন্তত ১৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি তেল সরবরাহে পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য হবে ২৫০ কিলোমিটার। পাইপলাইনটি দিয়ে মূলত পতেঙ্গার জ্বালানি তেল ডিপো থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত ডিজেল সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিপিসির তত্ত্বাবধানে এই পাইপলাইন নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সম্ভাব্যতা যাচাই কাজই শেষ হয়নি।

এদিকে এই প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত আরেকটি প্রকল্পের অধীনে বিমানের জ্বালানি তেল সরবরাহে শীতলক্ষ্যা নদীর কাঞ্চন ব্রিজ থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আরো একটি পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বিমানের জ্বালানি তেল জেট ফুয়েল পরিবহন করা হবে। এর প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা।

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/last-page/2017/03/16/182664.html