৩১ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৩৮

হাহাকার শুরু পরিবহন শ্রমিকদের পরিবারে

মালিক এবং নেতারা ফোনও ধরছেন না; চাঁদাবাজির এত টাকা গেল কোথায়?

হাহাকার শুরু হয়ে গেছে পরিবহন শ্রমিকদের পরিবারে। চুলা জ্বলছে না তাদের। প্রায় অর্ধকোটি শ্রমিকের পরিবারে না খেয়ে দিন কাটানোর পালা শুরু হয়েছে। মালিক-শ্রমিকদের নামে এই সেক্টরে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি হলেও দুঃসময়ে শ্রমিক নেতাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাহায্য চাইবেন এমন কারো সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করতে পারছেন না শ্রমিকরা। এমনকি নেতারা তাদের মোবাইল বন্ধ করে রেখেছেন। শ্রমিকদের এই দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানো তো দূরে থাক ফোনেও কেউ খোঁজ খবর নিচ্ছেন না।

করোনায় যেসব সেক্টরে বড় ধরনের আঘাত এসেছে তার মধ্যে অন্যতম হলোÑ পরিবহন। দেশের সব গণ পরিবহন এখন বন্ধ রয়েছে। সেই সাথে প্রাইভেট পরিবহন ও পণ্য পরিবহন শ্রমিকদেরও অধিকাংশ এখন বেকার। আপতত কোনো কাজ নেই তাদের। আরো কতদিন পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ থাকতে পারে তার নিশ্চয়তা এখনো কারো কাছে নেই। ফলে পরিবহন শ্রমিকরা এখন দিশেহারা। প্রাইভেট কিছু পরিবহনের শ্রমিক মাসিক বেতনে কাজ করলেও অধিকাংশ শ্রমিক দিন মজুরের মতো কাজ করেন। কাজ করলে টাকা, আর কাজ না থাকলে টাকা নেই। ফলে কাজ না থাকলে ওই শ্রমিক ও তাদের পরিবারের না খেয়েই দিন কাটে। আক্কাস নামে এক পরিবহন শ্রমিক জানান, তিনি ডেমরা এলাকায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকেন। ৮ নম্বর রুটের গাড়িতে কাজ করেন। স্বাভাবিক সময়ে যেদিন কাজ করেন সেদিন টাকা পান। আর কাজে না গেলে কোনো টাকা নেই। তিনি বলেন, গণ পরিবহন বন্ধের ঘোষণা আসা থেকেই তার বাস বন্ধ। ঘরে যে চাল-তরকারি ছিল তা দিয়ে দু’দিন কোনোরকম চলেছে। এখন আর চলছে না। কারো কাছ থেকে ধার নেবেন সে রকমও কেউ নেই। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এখন না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে।

আবিদুর রহমান নামে এক পরিবহন শ্রমিক দৈনিক বাংলা থেকে বাসাবো হিউম্যানহলার চালান। তিনি জানালেন, রোজ হিসেবে গাড়ি চালান। নির্ধারিত বেতন থাকলে ভিন্ন কথা থাকত। মাস গেলে বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকত। গাড়ি চলুক কি, না চলুক তা মালিক বুঝত। এখনতো পরিস্থিতি ভিন্ন। কাজ নেই তো টাকা নেই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কিভাবে চলবেন সেই দুশ্চিন্তায়।

একাধিক পরিবহন শ্রমিক বলেন, অধিকাংশ শ্রমিকরা দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। তাদের কোনো পুঁজি নেই। দিনে যা আয় করেন দিনেই তা শেষ হয়ে যায়। পরদিন খেতে হলে তাদের কাজে যেতে হয়। পরিবহন শ্রমিকরা বলেন, তাদের কল্যাণের নামে সারা বছর কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। পরিবহন শ্রমিকদের কল্যাণের নামে এই চাঁদা উত্তোলন হলেও দুর্দিনে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এখান থেকে কেউ কোনোরূপ সাহায্য পেয়েছেন বলে তাদের জানা নেই। শ্রমিক আক্কাস বলেন, অসুস্থ হয়ে বাসায় পড়ে থাকলেও কোনো নেতা খোঁজ নিয়ে দু’চার টাকা দিয়েছেন এমন নজির নেই। এমনকি যার গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করে দেন, সেই মালিকও কোনোদিন খোঁজ নেন না। এই সেক্টরের শ্রমিকরা সব সময়ই অবহেলিত। তারা শুধু সবসময় ব্যবহারই হয়ে থাকেন।

শ্রমিকরা জানান, এই দুর্দিনে অধিকাংশ মালিক এবং শ্রমিক নেতারা তাদের মোবাইল বন্ধ করে বসে আছেন। শ্রমিকরা সাহায্য চাওয়াতো দূরে থাক, নেতাদের সাথে কথা বলবেন সেই সুযোগও নেই। গতকাল বেশ কয়েকজন শ্রমিক নেতাকে ফোন দেয়া হলেও আসলেই তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি ফেডারেশনেরও শীর্ষ নেতাদের ফোন দিয়ে মোবাইল সচল পাওয়া যায়নি। শ্রমিক নেতা আলী রেজা নয়া দিগন্তকে বলেন, শ্রমিকরা এখন না খেয়ে আছে। কেউ তাদের দু’টাকা দিয়ে সহায়তা করছে না। মালিকরা ফোন পর্যন্ত ধরছেন না। আলী রেজা বলেন, সিলেট রুটের কিছু মালিক শ্রমিকদের কিছু সহায়তা করছেন। এর বাইরে আর কোনো মালিক শ্রমিকদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না। এমনকি কোনো সংগঠনও খোঁজ-খবর নিচ্ছে না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/492357