২৮ মার্চ ২০২০, শনিবার, ১২:৫০

বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় পুলিশের লাঠিপেটা ও হেনস্তায় ক্ষোভ

পুলিশ বলছে বিচ্ছিন্ন ঘটনা

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বাড়তে থাকায় এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য রাস্তায় পুলিশ এবং সেনাবাহিনী কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাস্ক না পরা বা বাইরে বের হওয়ার জন্য পুলিশের লাঠিপেটা, কান ধরে থাকার ছবি স্থানীয় গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।

সাধারণ মানুষের সাথে পুলিশের এ ধরনের আচরণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একজন মুদি দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, গতকাল তিনি পুলিশের মার খেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দোকানের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ টহলরত পুলিশ আমার দিকে তেড়ে আসে, আমাকে বলে বাইরে বের হয়েছিস কেন? এ কথা বলেই আমাকে মারতে থাকে। তারা আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই মারে।

তিনি বলেন ‘আমি দোকানে যাচ্ছি দোকান খোলার জন্য সেটা তো অন্যায় না। এখন আমার কাছে জানতে চেয়ে উত্তর তাদের মনমতো না হলে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু কিছু না শুনেই মারা শুরু করে। এ কেমন কথা।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো দু’জন এমন ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সামাজিক দূরত্ব রাখা বা মানুষকে নিয়ম-কানুনের মধ্যে রাখার জন্য যেটা করছে সেটার অবশ্যই ভালো দিকে আছে। কিন্তু অনেকে আছেন যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন। তাদের কাছে আগে শুনতে হবে, দরকার পড়লে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তারা দেখতে চাইতে পারেন, কিন্তু এভাবে কথা না শুনেই মারা বা হেনস্তা করা কাম্য নয়।

ফেরদৌস জাহান (ছদ্মনাম) নামে একজন নারী একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। সব সরকারি- বেসরকারি অফিস বন্ধের ঘোষণা হলেও ব্যাংকগুলোকে সীমিত আকারে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেছে কর্তৃপক্ষ। ফেরদৌস জাহান বলেন, তাকে অফিস করতে হচ্ছে। কিন্তু তিনি ভয় পাচ্ছেন রাস্তায় যেভাবে পুলিশ পেটাচ্ছে তাতে করে তিনি বের হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা যদি হেনস্তার শিকার হন।

তার প্রশ্নÑ যেমন আমার মত যারা অফিস করতে বাধ্য, তাদেরকে রাস্তাঘাটে যদি পুলিশ পেটায় বা হেনস্তা করে তাহলে তার দায়ভার নেবে কে? তিনি খুব ক্ষোভের সাথে বলছিলেন, ‘এই পেটুয়া বাহিনীর হাত থেকে নিস্তার পেতে কোন নম্বরে কল দিতে হবে সেটাও জানতে চাথই।’

পুলিশ কী বলছে?
পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) সোহেল রানা বলেন, বল প্রয়োগের ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে হয়ে থাকতে পারে। তবে পুলিশ সেটা একেবারেই প্রশ্রয় দিচ্ছে না। সারা দেশে মাঠপর্যায়ে যেসব পুলিশ সদস্য কাজ করছেন তাদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যাতে সম্মানিত নাগরিকদের সাথে বিনয়ের সাথে পেশাদার আচরণ করা হয়, তাদেরকে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি এবং সচেতনতা সম্পর্কে বোঝানো হয়। তারপরেও পুলিশের কোন কোন সদস্য এ ঘটনা ঘটাচ্ছেন। আমরা ওই সব এলাকার ইউনিট কমান্ডারদের বলেছি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তিনি বলেন, পুলিশের দু’একজন সদস্যের এ ধরনের আচরণ বাংলাদেশ পুলিশকে প্রতিনিধিত্ব করে না।

পুলিশ বলছে, দেশের এ জরুরি পরিস্থিতিতে নাগরিকদের সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে এবং সরকারের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হচ্ছেন এবং যেগুলো সরকারের নির্দেশের আওতামুক্ত তাদের ব্যাপারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেয়া নির্দেশনা মেনে চলছেন পুলিশ সদস্যরা এবং এতে করে কোনো নাগরিকের সমস্যা হওয়ার কথা না।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/491608