১৪ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:৪১

এক শতাংশ রাস্তা সয়েলিংয়ে ১২৩৮ কোটি টাকা ব্যয়: প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৩৮ লাখ টাকা

 

বর্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে গ্রামীণ কাঁচা রাস্তাগুলো বেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৃষ্টিপাতে এসব রাস্তা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতি বছরই এসব রাস্তা সংস্কারে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। গ্রামীণ মোট রাস্তার মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ অংশ ইটের সয়েলিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার জন্য এক হাজার ২৩৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাব থেকে জানা গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতাত্তোরকালে গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (ইউএসএইড) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) আওতায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি বা কাবিখার মাধ্যমে ১৯৭৫-৭৬ সাল থেকে গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। এ ছাড়া ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ইজিপিপি নামে একটি কর্মসূচি চালু রয়েছে। এই দু’টি কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার কিলোমিটার মাটির রাস্তা তৈরি করেছে।
কিন্তু বর্ষা মওসুমে এইসব মাটির রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তাগুলো। ফলে প্রতি বছর ক্ষয় হয়ে যাওয়া রাস্তা মেরামতে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ পরিস্থিতিতে রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য বিদ্যমান মাটির রাস্তার ওপর এইচবিবি (হেরিং বোন বন্ড) বা ইট বিছানো রাস্তা করার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এতে প্রতি কিলোমিটার রাস্তাগুলোকে এইচবিবি করতে ব্যয় হবে ৩৮ লাখ টাকা।
প্রকল্পের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলছে, গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত এইচবিবি রাস্তা না থাকার কারণে সহজ যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দুর্যোগের সময় মানুষ স্বল্পতম সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছতে পারে না। কৃষি ও সামাজিক খাতে উন্নয়নকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতে সময় সাশ্রয়, কৃষিপণ্যের দ্রুত বাজারজাতকরণ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর যাতায়াতের সমতা বৃদ্ধি করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, দেশের ৬৪টি জেলার ৪৮৯টি উপজেলার মোট ৩ হাজার ১৪৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার মাটির রাস্তা করার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২৩৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা, যার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে। মোট ২ লাখ ৯৫ হাজার কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে যে অংশ এইচবিবি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ফলে ২ লাখ ৯১ হাজার ৮৫০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রাস্তা এখনো মাটির থাকবে। শুধু এইচবিবি বা ইটের সয়েলিং করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এতে প্রতি কিলোমিটার সয়েলিং এ ব্যয় হচ্ছে ৩৮ লাখ টাকা। একনেকে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন প্রকৌশলী জানান, এখন ইটের দাম বেড়েছে। এই এইচবিবি হলো ইটের সয়েলিং। মাটির রাস্তায় দু’টি পর্বে ইট বিছানো হবে। এতে প্রচুর ইটের ব্যবহার হয়।

www.dailynayadiganta.com/detail/news/203469