২৬ মার্চ ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৩:৪৮

কমিউনিটি সংক্রমণের কথা প্রথম স্বীকার

করোনায় আরো ১ জনের মৃত্যু

এই প্রথম সরকারিভাবে স্বীকার করা হয়েছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কমিউনিটি সংক্রমণ সীমিত আকারে শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে অনলাইন ব্রিফিংয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এ কথা বলেন।

কমিউনিটি সংক্রমণের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা দু’টি ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করছিলাম। এখন পর্যন্ত সেখানে সংক্রমিত হওয়ার উৎস সম্পর্কে জানা যায়নি। সে কারণে সীমিতভাবে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে থাকতে পারে বলে আমরা মনে করছি। কিন্তু কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলার আগে বিস্তারিত তথ্যের বিশ্লেষণ করতে হবে। কারণ এসব তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দিতে হবে।

তিনি প্রশ্নের জবাবে বলেন, যে এলাকাটির কথা আমরা বলছি, সেখানে লিমিটেড স্কেলে লোকাল ট্রান্সমিশন (সীমিত পরিসরে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ হতে পারে) হয়ে থাকতে পারে ভেবে আমরা ওই এলাকাটিকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে (লকডাউন) রোগটিতে প্রতিরোধ করার কার্যক্রম নিয়েছি। এখন পর্যন্ত এটা দেশব্যাপী ট্রান্সমিশন হয়েছে, এমন কোনো পরিস্থিতি এখনো হয়নি।

কমিউনিটি সংক্রমণ প্রশ্নে এর আগে আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা কমিউনিটি সংক্রমণের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে কোনো সংক্রমক রোগের বিস্তার ঘটে গেলে এবং তার তার উৎস সম্পর্কে জানা না থাকলে তখন এটা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে যার মাধ্যমে ঘটে তিনি মনে করে থাকেন তিনি সুস্থ, তার কোনো অসুখ নেই। এটা হতে পারে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করতে গেলে অথবা অন্য কোনো ভিড়ের মধ্যে গেলে। তবে কোভিড-১৯ সংক্রমণের মতো ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির পূর্ব-ইতিহাস পাওয়া যায়। বিদেশফেরত সংক্রমিতদের অথবা কোনো সংক্রমিত বিদেশীর সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হলে তাকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলা যাবে না।

এ দিকে সারা দেশে হোম কোয়ারেন্টিনে আছে ৩০ হাজার ৪২৩ জন। হোম কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্তি পেয়েছেন (এদের মধ্যে করোনাভাইরাস নেই) ১২ হাজার ৮৩৯ জন। দেশে মোট কোয়ারেন্টিনে ছিলেন ৪৩ হাজার ২৬২ জন।

এ দিকে করোনা সম্পর্কিত তথ্য জানতে আইইডিসিআরে হটলাইনে ফোন করে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন এমন অনেকেই ফোনে নয়া দিগন্তকে তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। গতকাল ধানমন্ডি থেকে ষাটোর্ধ্ব একজন ব্যবসায়ী জানান, তিনি কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় হটলাইনে কথা বলতে পেরেছেন। তার জ্বর রয়েছে। একই সাথে গলাব্যথা, শুকনো কাশি রয়েছে। বুকের বাম দিকে চাপ অনুভব করছেন। তিনি কোনো বিদেশফেরত লোকের সংস্পর্শে আসেননি এসব কথা হটলাইনে শুনে ওপার থেকে তাকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন বলে লাইনটি কেটে দেন। এখন তিনি কী করবেন জানতে চেয়ে নয়া দিগন্তে ফোন দিয়েছেন। গতকাল এমন ভুক্তভোগী যারা ফোন করেছেন আইইডিসিআরের হটলাইন প্রসঙ্গে তাদের সবার বক্তব্য একই রকম। সবাই আইইডিসিআর থেকে পরামর্শ চান। কারণ স্থানীয় চিকিৎসকদের পাওয়া যাচ্ছে না। হাঁচি-কাশি রয়েছে জানতে পেরে চিকিৎসকরা আইইডিসিআরে যেতে বলেন। সে কারণে সাধারণ ফ্লু’র এ সময়ে সর্দি-হাঁচি-কাশির রোগীরা বেশ বেকায়দায় আছেন। তারা বেশ উদ্বিগ্ন। তাদের উদ্বেগ দূর করার ব্যবস্থা করা উচিত।

করোনায় আরো ১ জনের মৃত্যু : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে গতকাল একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫-এ। গতকাল সন্দেহভাজন ৮২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করানোর পর নতুন রোগী শনাক্ত না হওয়ায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৯ জনেই স্থির রয়েছে। এ দিকে করোনা সতর্কতায় মেহেরপুর জেলা ও মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার একটি গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। রাজশাহী ও ঘিওরে করোনা পরীক্ষার আগে একই লক্ষণে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা অনেক স্থানে জলকামান দিয়ে জীবাণুনাশক ছিটানো শুরু করেছেন। মানুষকে সতর্ক করতে প্রচারণা চালাচ্ছেন সেনাসদস্যরা। করোনা সন্দেহে বরিশালে পিতাসহ এক পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক, সেনাসদস্য ও পুলিশের তৎপরতায় গতকাল দুই হাজারের বেশি প্রবাসী ও তাদের স্বজনকে হোম ও প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত বিদেশফেরত ১৭,১৬১ জন প্রবাসীকে হোম বা প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো সম্ভব হয়নি। তাদের খোঁজে কাজ করছেন জেলা প্রশাসক ও গোয়েন্দারা। কয়েকটি স্থানে কোয়ারেন্টিনে না এলে নিরুদ্দেশ প্রবাসীদের পাসপোর্ট বাতিল করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে কর
্তৃপক্ষ। এ ছাড়া কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীদের বাড়িতে বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

নতুন কেউ আক্রান্ত হয়নি : গতকাল বুধবার দুপুরে করোনা অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, সর্বশেষ মৃত ব্যক্তির বয়স ছিল ৬৫। তিনি উত্তরার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একজনের মৃত্যু হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আর কোনো করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়নি। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত ৩৯ জন।

অধ্যাপক ফ্লোরা জানান, মৃত ব্যক্তি একজন পুরুষ। তার ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের সমস্যা ছিল। তিনি দেশের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছিলেন গত ১৮ মার্চ থেকে। তার অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে গত ২১ মার্চ রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আনা হয়। অবশেষে আজ (বুধবার) সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

অনলাইন ব্রিফিংয়ে তার সাথে ছিলেন আইইডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মককর্তা ড. এ এস এম আলমগীর। অধ্যাপক সেব্রিনা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরে ৮২ জনের নমুনা (কোভিড-১৯) পরীক্ষা করা হয়। কারো দেহে এই ভাইরাস পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে আছেন ৪৭ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনেও আছেন ৩৭ জন।

অধ্যাপক সেব্রিনা বলেন, এ পর্যন্ত আইইডিসিআরে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়েছে মোট ৭৯৪ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় আরো দুইজন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন। তাদের দেহে পরপর দু’বার পরীক্ষার পর ভাইরাস পাওয়া যায়নি। এটা নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন সাতজন।

অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, কিছুদিনের মধ্যে আইইডিসিআর ছাড়াও আরো কয়েকটি স্থানে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানো যাবে। এগুলো ঢাকার শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রামে ট্রপিক্যাল মেডিসিন ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সমাজে সংক্রমণ) ছড়াচ্ছে না। তবে একটি স্থানে এমন হয়েছিল। সেখানে সংক্রমণ বেশি ছিল। আমরা সে স্থানটি লকডাউন করে যাদের মধ্যে করোনা ছড়াতে পারে তাদের নমুনা এনে পরীক্ষা করেছি। পরীক্ষায় পজিটিভের হার কম ছিল। কিন্তু পরে দেখা যায় সেখানকার দু’জন বিদেশফেরত দু’জনের সংস্পর্শে এসেছিলেন।

অধ্যাপক ফ্লোরা জানান, আইইডিসিআরে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৭৩০ জন কল করেছিলেন। সব কলই ছিল কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কল। তিনি বলেন, আইইডিসিআরে মোট ১৭টি নম্বর আছে। তবে দুইটি নম্বরে কল করার জন্য আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ দুটি হান্টিং নম্বর। এখানে কল করলে যে নম্বর খালি থাকবে সেখানে চলে যাবে, এটা সহজ হবে সবার জন্য। এ দু’টি নাম্বার হলোÑ ০১৬৫৫ এবং ০১৯৪৪৩৩৩২২২।

মেহেরপুর জেলা লকডাউন

মেহেরপুর সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মেহেরপুরকে লকডাউন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে মেহেরপুর জেলার সব দোকানপাট, প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জরুরি পরিষেবা ও হাসপাতাল, খাবারের দোকান, মুদি দোকান, ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা রয়েছে। সড়ক ও বাজারগুলোতে লোকসমাগম না থাকায় চলছে সুনসান নীরবতা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যত্রতত্র ঘোরাফেরা না করে সবাইকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো জরুরি ছাড়া যত্রতত্র ঘোরাফেরা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এ দিকে জেলা প্রশাসন থেকে আরো জানানো হয়েছে, যেকোনো সময় সেনাবাহিনী টহল শুরু করবে। সেনাবাহিনী প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে সহায়তা করবে। সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কারো গুজবে কান না দিয়ে যথাসম্ভব বাড়িতে অবস্থান করার আহ্বান জানান তিনি। মেহেরপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন উপজেলার নি¤œআয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে এনজিওগুলোকে তাদের এককালীন, মাসিক ও সাপ্তাহিক সব ধরনের ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

বগুড়ায় প্রচারণায় সেনা সদস্যরা

বগুড়া অফিস জানায়, করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করেছে সেনাসদস্যরা। সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করতে বুধবার সকাল থেকে বগুড়া শহর ও সব উপজেলায় এ প্রচারণা চালান তারা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে কার্যক্রমে তারা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের সাতমাথা দিয়ে যাতায়াতকালে দেখা গেছে হ্যান্ডমাইকে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূল প্রচারণা করছেন সেনাসদস্যরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও প্রতিরোধসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বগুড়া জেলা পুলিশ বেলা ৩টায় শহরের সাতমাথা এলাকা জলকামানের সাহায্যে জীবাণুমুক্ত করতে জীবাণুনাশক স্প্রে শুরু করেছে। পুলিশ সুপার আলী আশরাফ এর উদ্বোধন করেন।

গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, মালয়েশিয়াফেরত এক ব্যক্তিকে গাজীপুর জেলা কারাগারে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। চেক জালিয়াতির একটি মামলায় তাকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়।

গাজীপুর জেলা কারাগারের সিনিয়র সুপার নেছার আহমেদ জানান, টঙ্গী (পূর্ব) থানার চেক জালিয়াতির একটি মামলায় গ্রেফতার হওয়া এক ব্যক্তিকে কারাগারের ভেতরে একটি সেলে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তিনি সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে গ্রেফতার হন। গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো: খায়রুজ্জামান জানান, গাজীপুরে এ পর্যন্ত ৫৭৯ জন প্রবাসী হোম কোয়রেন্টিনে এবং ৪৭ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯১ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বুধবার দুপুর পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হলো এক হাজার ১৩৩ জন প্রবাসীকে। আর নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ায় হোম কোয়ারেন্টিন থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে ৩৪৭ জনকে। বর্তমানে ৭৮৬ জন প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান এ তথ্য জানান। এ দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসড়কে বুধবার ভোর ৪টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ছিল তীব্র যানজট।

আদমদীঘি (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় বিদেশফেরত ৮০ জন পুরুষ ও নারীকে করোনাভাইরাস হোম কোয়ারেন্টিনে পর্যবেক্ষণে রাখা হলেও ৩২ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৪৮ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে উপজেলায় বিদেশফেরত সব প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা শুরু করা হয়।

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতন ও জনগণকে সতর্ক করতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় ৭৪ জন বিদেশফেরত প্রবাসীর বাড়ি চিহ্নিত করে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। যারা বিদেশ থেকে ফিরেছেন তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকার জনসাধারণকে সতর্ক করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নড়াইলে ভারতফেরত ৪ জনকে জরিমানা

নড়াইল সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নড়াইলে ৩২১ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। এ দিকে ভারতফেরত এক ব্যক্তিকে চার হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কালিয়া শহরের ছোটকালিয়া এলাকার মুরাদ (৩৪) নামে এক ব্যক্তিকে এ জরিমানা করা হয়। মুরাদ সম্প্রতি ভারত থেকে এসে কালিয়া শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছিল। এ ছাড়া মুরাদকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। এ দিকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত নড়াইলে ৩২১ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ জন নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে লোহাগড়া উপজেলায় দু’জন, কালিয়ায় ছয় এবং সদরে ১৫ জন। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বেশির ভাগই প্রবাসী।

রংপরে রাস্তায় ব্লিচিং পাউডার ছিটাচ্ছে পুলিশ

রংপুর অফিস জানান, রংপুর মহানগরীর রাস্তাঘাট এবং জনসমাগম এলাকাকে করোনা ভাইরাস মুক্ত রাখতে জলকামান দিয়ে ব্লিচিং পাউডার ও স্যাভলন ছিটাচ্ছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নগরীর কাচারীবাজার থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। পরে সিটি করপোরেশন, সুপার মার্কেট মোড়, পায়রাচত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, প্রেস ক্লাব, গ্রান্ড হোটেল মোড়, শাপলা চত্বর, খামার মোড়, লালবাগসহ প্রধানসড়কের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের জলকামান গাড়ি দিয়ে দিয়ে স্যাভলনের সাথে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে তা স্প্রে করা হয়।

শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী গতকাল বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩৫৫ জন প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: আব্দুর রশিদ বাসসকে জানিয়েছেন, জেলায় ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরা ৫৫ জন প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৮ জন হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় এসেছেন ও ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ করায় ৩৩ জনকে অবমুক্ত করা হয়েছে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত সাড়া প্রদান ও বিদেশ ফেরত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টিন মেনে চলার বিষয়টি আরো বেশি কার্যকর করার লক্ষ্যে রাজশাহী জেলা পুলিশে ‘স্পেশাল রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে। এ টিমের সদস্য সংখ্যা ৩০ জন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা এ টিমের কার্যক্রম মনিটরিং করবেন।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বরিশাল বিভাগের দুই হাজার ৪৭২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ২৩৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে আনা হয়েছে। এর আগেও ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে আনা হয়েছিল ২৩৮ জনকে। বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা: বাসুদেব কুমার দাস এ তথ্য জানিয়েছেন। অপর দিকে বিভাগে গত ১০ মার্চ থেথকে এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন শেষ করেছেন ৬৯৭ জন এবং গত ২৪ ঘণ্টায় শেষ কথরেছেন ১৬৩ জন। বাসুদেব কুমার জানান, কোয়ারেন্টিনে থাকা বেশির ভাগই প্রবাসী।

খুমেক হাসপাতালে করোনা সন্দেহে প্রথম ভর্তি পিতাসহ পুলিশ

খুলনা ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমিত সন্দেহে একজন পুলিশ সদস্য ও তার পিতাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা আইসোলেশান ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনের ওই কনস্টেবলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার সেবায় নিয়োজিত থাকায় বাবাকেও হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। তারা মাগুরা সদর উপজেলার কাপাশাটি গ্রামের বাসিন্দা। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, গত মঙ্গলবার রাতে ওই পুলিশ কনস্টেবলকে তার বাবা করোনা আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

রংপুর অফিস জানায়, রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন বিদেশফেরত আরো ৩৯৬ জন। এ নিয়ে এই বিভাগে মোট হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন দুই হাজার ২৪ জন। এরমধ্যে সব চেয়ে বেশি গেছেন পঞ্চগড় জেলায়। রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ও করোনাবিষয়ক ফোকাল পারসন জেড এম সিদ্দিকী নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এই বিভাগের আট জেলায় মোট দুই হাজার ৫৮০ জন হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন। এর মধ্যে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ৫৫৮ জনকে। এখন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন দুই হাজার ২৪ জন।

ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে বিদেশফেরত ১৮১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এদের মধ্যে নতুন করে ১০ জনকে গত ২৪ ঘণ্টায় নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এ দিকে গতকাল বুধবার দুপুর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান, খাবার ও ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। এ-সংক্রান্ত প্রচারণা শুনে শহরে লোকজনের উপস্থিতি কমে এসেছে। হাটবাজারেও ক্রেতাদের আগের মতো ভিড় নেই। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না কেউই।

কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের কাউখালীতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ৪২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদা খাতুন রেখা জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সচেতনার অংশ হিসেবে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে ও তাদের প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে এবং সময় কাটানোর জন্য বই বিতরণ করছেন।

শিবচরের একজনের মৃত্যু

শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুরের শিবচরে একজন মারা গেছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তি শিবচরের ইতালি ফেরত এক প্রবাসীর বাবা। ওই ব্যক্তি ঢাকায় আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার বয়স ৬৫ বছরের বেশি বলে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার শশাংক চন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন। ওই ব্যক্তি ইতঃপূর্বে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল তিনি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে মারা যান। সেই পরিবারের (ইতালি প্রবাসী) শাশুড়িসহ আটজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন।

এ দিকে গত ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার মাদারীপুর জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের সমন্বয় শিবচর পৌরসভার দু’টি ওয়ার্ড, পাঁচ্চর ইউনিয়নের দ্’ুটি গ্রাম ও দক্ষিণ বহেরাতলা ইউনিয়নের দু’টি গ্রামে কনটেইনমেন্ট ঘোষণা করে এলাকার মানুষদের চলাচল সীমিত করা হয়। মাদারীপুর জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছে ৩২৩ জন, আইসোলেশনে আছে তিনজন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছে তিনজন।

রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষার আগেই নারীর মৃত্যু

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পরীক্ষার আগেই জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড়ি পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে তার মৃত্যু হয়। ওই নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এর আগেই তার মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতালে কিট না থাকায় এখনো তার করোনা পরীক্ষা করা যায়নি। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৪৬ বছর বয়সী ওই নারীর বাড়ি রাজশাহীর কাটাখালি এলাকায়। গত ২০ মার্চ তিনি জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রামেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ২২ মার্চ আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত পৌনে ১টার দিকে তিনি মারা যান।

আইসিইউর ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এই রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিল কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার স্বজনরাও বলতে পারছেন না তিনি ভাইরাস বহনকারী কারো সংস্পর্শে গিয়েছেন কি-না। এটা নিয়ে তারা একটু শঙ্কায় আছেন।

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বিদেশফেরত ৫৫১ জনের মধ্যে ৩৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার অনুরোধ করা হলেও তা মানছেন না অনেকেই। উপজেলার অরুয়াইল এবং পাকশিমুল ইউনিয়নের বিদেশফেরত দুইজন হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের কাতারফেরত সেলিম মিয়াকে (৩৫) ১০ হাজার টাকা এবং পাকশিমুল ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার মো: জাহাঙ্গীরকে ১০ হাজার টাকা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনসহ বিদেশফেরত ৫৪০ জন বাংলাদেশীর মধ্যে ১৯৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ৯৭ জনের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে। বাকিদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য খুঁজছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বুধবার কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান জানান, বিদেশফেরত যাদেরকে পাচ্ছি তাদেরকেই হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পাবনা সংবাদদাতা জানান, পাবনায় এখন পর্যন্ত কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে এ পর্যন্ত জেলায় মোট ৬৮৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় তিনহাজার ৩০০ জন বিদেশ থেকে এলেও তারা কোথায় আছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ।

জেলা প্রশাসক বলেন, পাবনায় এখন পর্যন্ত কোনো করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। যে একজনকে করোনা সন্দেহে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল তার নেগেটিভ ফলাফল এসেছে। তবে গতকাল পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে ৬৮৮ জনকে পাঠানো হয়েছে।

করোনা সন্দেহে যুবককে বরিশাল মেডিক্যালে

পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর বাউফলে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে ২৫ বছরের এক যুবককে গত মঙ্গলবার রাত ১০টায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। ওই যুবকের বাড়ি বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদি গ্রামে। তিনি সাত দিন আগে ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন। এরপর তিনি গায়ে জ্বর, কাশি ও মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন। গত সোমবার সকালে ওই অবস্থায় তিনি দাশপাড়া শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যান। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে গত মঙ্গলবার সকালে তাকে বাউফল হাসপাতালে আনা হয়। এ ঘটনার পর ওই যুবক তার এ অবস্থা বুঝতে পেরে তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে দাসপাড়ার কোর্টপাড় শ্বশুর বাড়িতে চলে যান। ঘটনাটি এলাকার মানুষের মধ্য ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে নোমানকে উদ্ধার করে রাতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৫৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে কুমিল্লায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২১ জন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই প্রবাসী। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ইতোমধ্যে এসব প্রবাসীরা বাংলাদেশে এসেছেন।

শিবগঞ্জ (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা ১৭৫ জন ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তবে কোয়ারেন্টিনে থাকা করোনাভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে বুড়িগঞ্জ ইউপির বেলভুজা গ্রামের মো: বুদা মিয়ার ছেলে শাহিনুর রহমান (দুবাইফেরত) প্রবাসীর বাড়িতে টানিয়ে দেয়া হয়েছে লাল পতাকা। শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তারক নাথ কুন্ডু জানান, বর্তমানে তারা সবাই সুস্থ রয়েছেন। এরপরও তাদের ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

আত্মগোপনকারী প্রবাসীদের পাসপোর্ট বাতিলের ঘোষণা

মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জে বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টিন না মানা আত্মগোপনকারী প্রবাসীদের পাসপোর্ট বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস গত মঙ্গলবার রাতে এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন। এতে বলা হয়, বুধবারের মধ্যে জেলার পলাতক প্রবাসীরা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ না করলে তাদের পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হবে। জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, মানিকগঞ্জের বিদেশফেরত এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে বাইরে ঘোরাঘুরির অভিযোগে ১০ জনকে বিভিন্ন অঙ্কে জরিমানা করা হয়েছে। এ দিকে করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনকে সহায়তার জন্য মানিকগঞ্জে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাড়তি যানবাহন : ফেরিঘাটে ভোগান্তি

মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা আরো জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ১০ দিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার হিড়িক পড়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে। দূরপাল্লার যানবাহনের চাপ কম থাকলেও পাটুরিয়ামুখী লোকাল বাস ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির চাপ রয়েছে বেশি। ফলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করছে ধীর গতিতে।

বাড়তি যানবাহনের চাপে নাজেহাল অবস্থা পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। যানবাহনের চেয়ে যাত্রীর চাপ বেশি। নদী পারাপারের জন্য ফেরিঘাট এলাকায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সাধারণ যাত্রী, যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির জন্য নদী পারাপারে বেশি ভোগান্তিতে পণ্যবাহী ট্রাক চালকেরা।

ঘিওরে এক গ্রাম লকডাউন : ২৮ জন হোম কোয়ারেন্টিনে

ঘিওর সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের বাইলজুরী গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুর পর মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক ব্যক্তিকে দাফন করার পর একটি গ্রামকে লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ছাড়া ওই গ্রামের ছয়টি পরিবারের ২৮ জন সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইরিন আক্তার বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আলমগীর হোসেন (৪৯) নামের এক ব্যক্তি মঙ্গলবার রাতে করোনা উপসর্গ (ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশি) নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যান। গতকাল বুধবার খুব সকালে তার লাশ গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বাইলজুরী গ্রামে আনা হয় এবং পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তার দাফন করেন।

আলমগীরের ভাই আব্দুল মালেক জানান, ঢাকার মেট্রোপলিটন মেডিক্যাল সেন্টারে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করতেন আলমগীর হোসেন (৪৯)। সপ্তাহ খানেক আগে তিনি সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হন। হাসপাতাল থেকে তাকে ছুটি দিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়। এরপর থেকে তিনি বাসাতেই ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। এলাকা থেকে সকালে এমন তথ্য জানার পর সেখানে গিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় পর পুরো বাইলজুরী গ্রাম লকডাউন করা হয়। এ ছাড়া তরিঘরি করে মৃত ব্যক্তির পরিবার ও আত্মীয়স্বজন যারা মৃতদেহ দাফন করেছেন তাদের ছয়টি পরিবারের ২৮ জন্য সদস্যকে শনাক্ত করে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

নওগাঁয় ৮৬১ জন বিদেশফেরতের হদিস নেই

নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, নওগাঁয় গত ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১৩৫ জন প্রবাসী বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা গেছে ১ হাজার ২৭৪ জন বিদেশফেরত ব্যক্তির। বাকি ৮৬১ জন বিদেশফেরত ব্যক্তি কোথায়, কিভাবে আছেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে কোনো তথ্য নেই। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সিভিল সার্জন আ ম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘গোয়েন্দা তালিকায় নওগাঁর ঠিকানা ব্যবহারকারী বিদেশফেরত ব্যক্তির সংখ্যা দুই হাজারের বেশি।

রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সকল প্রকার বাস চলাচল, মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে খোলা রয়েছে ওষুধ ও কিছু মুদিদোকান। তবে চলাচল করছে রিকশা, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও মাহেন্দ্র পরিবহন।

অপর দিকে বুধবার সকাল থেকে জেলা শহরসহ জেলার অন্যান্য উপজেলা শহরে সেনাবাহিনীর টহলের ফলে গত দুই দিন আগে চাল, ডালসহ নিত্য পণ্যের বাড়তি মূল্য আজ থেকে কমতে শুরু করেছে।

কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কিশোরগঞ্জে নতুন করে ১১১ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এই ১১১ জনকে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই সময়ে ৯২ জন তাদের কোয়ারেন্টিন সমাপ্ত করেছেন। এ নিয়ে কিশোরগঞ্জে মোট কোয়ারেন্টিনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬২ জনে। তাদের মধ্যে মোট ৩৪৯ জন তাদের কোয়ারেন্টিন সমাপ্ত করেছেন। সে হিসাবে বর্তমানে জেলায় মোট ৪১৩ জন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৭ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে এবং বাকি ৩৮৬ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তাদের সবাই বিদেশফেরত। 

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/491165/