১৪ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:০৬

একটি অর্থবহ দুর্নীতিমুক্ত সমাজের সন্ধানে

গত মাসে আমার বাসায় নিয়মিত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এই সংযোগ পাবার কথা ছিল আরো আট বছর আগে। কিন্তু তা না দিয়ে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি অস্থায়ী সংযোগ দিয়েছিল এবং তার বিপরীতে প্রতিমাসে কমার্শিয়াল রেইটে বিল করে আসছিল। ফলে আমাকে/আমার পূর্বসূরিকে প্রতিমাসে ৭/৮ হাজার টাকা গচ্চা দিতে হয়েছিল যা ফেরত পাবার এখন আর কোনও উপায় নেই।
বলা বাহুল্য এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন সংযোগের জন্য কয়েক বছর আগে ডেসকো/ডেসা একটা নতুন শর্ত জুড়ে দেয় আর সেটা হচ্ছে সৌর প্যানেল স্থাপন। প্রায় দু’লাখ টাকা ব্যয়ে সৌর প্যানেল স্থাপন করে শর্ত পূরণ এবং তার সাথে একটি বাল্ব সংযোজন করে নতুন সংযোগটি পেলাম। কিন্তু সৌর প্যানেলের মহিমা এখনো বুঝতে পারিনি। একজন সেদিন বললেন, ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর ব্যবসা বৃদ্ধির জন্যই শর্তটি জুড়ে দেয়া হয়েছে ফলে প্যানেল তৈরির তার ফ্যাক্টরিটির বিক্রি ও মুনাফা বৃদ্ধির পথ খুলে গেছে। ২০০৯ সালের আরেকটি ঘটনাও এখানে প্রণিধানযোগ্য। তখন পুরাতন বাল্ব নিয়ে তিন কোটি ব্যয় সাশ্রয়ী বাল্ব সরকারিভাবে দেয়া হয়েছিল। কয়েকমাস পর দেখা গেল সেই বাল্বের কার্যকারিতা আর নেই। এভাবে দলীয় বাল্ব কোম্পানিদের জাতে উঠায়ে দেয়া হলো। হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গত কয়েক বছরে উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু শীতকালেও দৈনিক যে হারে বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়েছে তাতে আদৗ বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা বোঝা মুশকিল। দুর্নীতিতে সারাদেশ এমনভাবে ছেয়ে গেছে যে, আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে দুর্নীতিমুক্ত কোনও স্থান পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের জাঁদরেল বিভাগীয় কমিশনার আবদুল আউয়ালের কথা অনেকেরই হয়তো মনে আছে। একজন সৎ, দক্ষ, কর্মঠ ও ধর্মভীরু কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। অবসর নেয়ার পূর্বে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তার বিভাগীয় কমিশনার থাকাকালে আমারো চট্টগ্রামে পোস্টিং ছিল। বিভিন্ন কাজে আমাকে প্রায়ই তার চেম্বারে যেতে হতো তার সাথে একটা হৃদ্যতার সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল। বলা বাহুল্য, আমাদের উভয়ের গ্রামের বাড়ি ছিল বৃহত্তর নোয়াখালীতে। নোয়াখালীতে আরেকজন আব্দুল আউয়াল ছিলেন। তিনি সমাজসেবামূলক কাজ করতেন। তার একটি এনজিও ছিল এবং একটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানও তিনি পরিচালনা করতেন। জেলা ও বিভাগে এমন কোনো অফিসার ছিলেন না যার সাথে তিনি যোগাযোগ রাখতেন না। তার কথা না শুনলে তিনি বদলির তদবিরও করতেন। একবার আমি একটা কাজে বিভাগীয় কমিশনারের চেম্বারে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর আউয়াল সাহেবও এসে ঢুকলেন। কমিশনার আউয়াল সাহেব তাকে মিতা বলে ডাকলেন। আমার কাজটা রেখে কমিশনার সাহেব তার মিতার দিকে নজর দেন এবং আমাকে কিছুক্ষণ বসার পরামর্শ দেন। জনাব আউয়াল নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে কমিশনার সাহেবের কাছে বিরাট একটা অভিযোগ করলেন এবং তাকে অবিলম্বে নোয়াখালী থেকে বদলি করে রাঙ্গামাটি দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। কমিশনার সাহেব তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বললেন। আউয়াল সাহেব করিৎকর্মা লোক ছিলেন। তিনি সাথে সাথেই তার কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ থেকে টাইপ করা একটি অভিযোগপত্র কমিশনার সাহেবের হাতে দিয়ে বললেন, “এই নিন স্যার, আমি নিয়েই এসেছি।” কমিশনার আউয়াল সাহেব খুশি হলেন এবং মনোযোগ দিয়ে চিঠিটা পড়ে আমাকে বললেন পড়। আমিও চিঠিটা পড়লাম। কমিশনার সাহেব তখন মুচকি হাসছিলেন। আমি চিঠিটা ফেরত দেয়ার পর কমিশনার সাহেব চিঠিটা আউয়াল সাহেবের হাতে দিয়ে বললেন, এ চিঠিটা আপনি রেখে দিন এটা আমার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টকে লেখা আপনার অভিযোগপত্র। ডিসি’র বিরুদ্ধে অভিযোগটা আমাকে দিয়ে যান।
আউয়াল সাহেবের চেহারা তখন লাল হয়ে গিয়েছিল। তিনি মাথা নিচু করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। আসলে আউয়াল সাহেবের কাছে দু’টি অভিযোগপত্র ছিল। একটি ছিল জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারকে লেখা, আরেকটি ছিল বিভাগীয় কমিশনারের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে লেখা পত্র, জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্রটি ঝুলির মধ্যেই রয়ে গিয়েছিল। কমিশনার আউয়াল সাহেব যখন তাকে এ কথাটি স্মরণ করিয়ে দিলেন তখন ভদ্রলোক মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলেন। সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে যারা পাবলিক রিলেশন্স করেছেন, বিভিন্ন সেবা কার্যক্রমের সাথে জড়িত রয়েছেন, আমাদের সমাজে একটা শ্রেণীর মানুষ আছে যারা স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বোঝেন না, স্বার্থে আঘাত পড়লে করতে পারেন না এমন কোনো কাজ নেই, মানুষের ছিদ্রান্বেষণ তাদের কাজ, প্রতিদ্বন্দ্বী অথবা অপছন্দের লোকদের পেছনে তারা লেগেই থাকেন। অভিযোগই তাদের কাজ।
সেনা সমর্থিত কেয়ার টেকার সরকারের আমলে দেশে ইমারজেন্সি ঘোষণার পর যৌথবাহিনী বিভিন্ন জেলায়-উপজেলায় অভিযোগ বাক্স স্থাপন করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও অভিযোগ কেন্দ্র খুলেছে। যৌথবাহিনীর অভিযোগ বাক্সে কত অভিযোগ পড়েছিল সেটা জানা না গেলেও দুদকের বাক্সে বিশ হাজার অভিযোগপত্র জমা পড়েছিল বলে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশই মারামরি, ঝগড়াঝাঁটি, জমি-জমা, আর্থিক লেনদেন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, প্রতারণা ইত্যাদি সংক্রান্ত অভিযোগ বলে জানা গেছে। সারা দেশে তখন একটা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। কার অভিযোগে কাকে ধরা হয়, কে অপদস্ত হন এ নিয়ে সর্বত্র ভীতি- নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছিল। এক্ষেত্রে নোয়াখালীর আউয়ালের ন্যায় ব্যক্তিরা খুব ভালো অবস্থানে ছিলেন বলে মনে হয়। তার কথাই এজন্য আমার প্রথমেই মনে পড়লো।
সরকার দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছেন বলে মাঝে-মধ্যে ঘোষণা করা হয় এজন্য দেশের মানুষ খুশি। শুধু সরকারি দুর্নীতি নয়Ñ বেসরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমন আশাবাদ দেশব্যাপী একটা সন্তুষ্টির সৃষ্টি করেছে বলে মনে হয়। অনেকেই ভুলে গিয়েছিলেন যে, জনপ্রশাসনের মতো আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেও দুর্নীতি রয়েছে। রাজনৈতিক দুর্নীতির উপরও এখন আঘাত আসা দরকার। একসময় সিংহভাগ মানুষ মনে করতো যে, অসৎ ও মিথ্যাবাদী না হলে রাজনীতি করা যায় না, সৎলোক যারা ঘুষ খান না বা দেন না, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেন না, তারা জনগণ তথা ভোটারদেরও খাওয়াতে পারেন না। কাজেই তাদের ভোট দিয়ে লাভ নেই। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সাধারণ মানুষের এই ধারণা এবং সমাজের বদ্ধমূল সংস্কৃতির যদি পরিবর্তন ঘটাতে পারে তাহলে যে কোনো সরকার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সাবেক সরকার যৌথবাহিনীর সহায়তায় দুর্র্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এবং মুনাফাখোরদের সম্পর্কে অভিযোগ আহ্বান করে তাদের ধরেছেন, অনেকে ধরা পড়েননি, যারা ধরা পড়েছেন তাদের সবাই যে দুর্র্নীতিবাজ এবং দেশ ও সমাজের শত্রু তা অনেকের মতো আমিও বিশ্বাস করিনি। তবে আমি এটা বিশ্বাস করি যে, ফোঁড়া কেটে পুঁজ বের করতে গেলে বদরক্তের সাথে কিছু ভালো রক্তও বের হয় এবং এ রক্তটুকু স্যাক্রিফাইস না করলে শরীর সুস্থ হয় না। অবশ্য এ রক্তপাত সহনশীল পর্যায়ে থাকা বাঞ্ছনীয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেশকিছু সংস্কারমূলক কাজে হাত দিয়েছিলেন। এ কাজগুলো করতে সময়ের প্রয়োজন সন্দেহ নেই এবং সময়কে সামনে রেখেই সংস্কারের পরিমাণ নির্ণয় করা দরকার বলে অনেকে মনে করতেন। আমরা নিশ্চয়ই একসাথে সব সমস্যার সমাধান করতে পারবো না। আবার যে সমস্যার সমাধান না হলে নির্বাচন অর্থবহ হবে না এবং গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকতা পাবে না সেই সমস্যা আগামীদিনের জন্য জিইয়ে রাখাও অনেকে সমীচীন বলে মনে করেন না। এক্ষেত্রে চাহিদার সাথে সামর্থ্যরে সামঞ্জস্য বিধান করা জরুরি। আমরা এর কোনোটিই করতে পারিনি।
আমি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের কথা বলছিলাম। দুর্নীতি, আমাদের সমাজ দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজ করছে। এটা সাম্প্রতিক কোনও প্রোপঞ্চ নয়। দীর্ঘদিনের, এমনকি শতাব্দীর সমস্যা, দেশপ্রেমের সমস্যা। এ সমস্যা একসাথে সমাধান করা যাবে না। সরকার কাজটি শুরু করেছেন, চলমান প্রক্রিয়ার হিসেবে তা অব্যাহত থাকা দরকার। এ ব্যাপারে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, দুর্নীতি দমন প্রক্রিয়া শুরুতে যে প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ সরকারি পদক্ষেপকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিল তা আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে যায়। রাজনৈতিক দুর্র্নীতিবাজ এবং চোরাচালানী, মজুতদার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর মানুষ আশা করেছিল যে, জিনিসপত্রের দাম কমবে এবং তাদের জীবনযাত্রা সহজতর হবে; কিন্তু তা হয়নি। চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য কমেনি বরং বেড়েছে। দেশব্যাপী ইউরিয়া সংকট, ডিজেলের অভাবে বোরো জমিতে পানি সেচের সমস্যা আগামী ফসলকে অনিশ্চিত করে তোলে। কয়েক বছরের বাম্পার ফলনের পর এর ফলে বোরো উৎপাদন হ্রাস পায় এবং দেশে খাদ্য সংকট প্রকট হয়ে উঠে। ইতোমধ্যে গ্রামাঞ্চলে মোটা চাল ৪২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এতে মানুষ উদ্বিগ্ন ওয়ে ওঠে। বিডিআর’র বাজার এবং এমএস চাল অপারেশনে চাল বিক্রির পরিমাণ ও মেয়াদ বৃদ্ধি বাজারের উপর অনুকূল প্রভাব সৃষ্টি করেছে সন্দেহ নেই। কিন্তু দুর্নীতি ও মুজতদার বিরোধী অভিযান কেন বাজারের ওপর কেন প্রভাব বিস্তার করেছে তা খতিয়ে দেখা দরকার ছিল কিন্তু কেউ দেখেনি। এতে কোন অশুভ শক্তির কারসাজি অবশ্য ছিল। আমি উদ্বিগ্ন এই জন্য যে নোয়াখালীর আউয়ালের মত অনেক টাউট আছেন সমাজসেবকের ছদ্মবেশে নিজের স্বার্থ হাসিলে সর্বদা লিপ্ত থাকে এবং সুশীলের নাম ভাঙ্গিয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করতে পারে।
আসলে দুর্নীতি অপচয়ের দুষ্টচক্রের একটা অংশ। অদক্ষতা, নি¤œমানের শাসন, প্রযুক্তির অনুন্নয়ন এবং দুর্নীতির মিথস্ক্রিয়ার ফলে অপচয়ের সৃষ্টি হয়।
অকার্যকর ব্যবস্থাপনা, পেশাদারিত্বের অভাবে ট্রেড ইউনিয়নের অনুৎপাদনশীল জঙ্গি কর্মচারী, নিষ্ঠাবর্জিত আমলা, নিম্নমানের কর্মপরিবেশ, নিম্নমানের নিয়োগ অদক্ষতার জন্য দায়ী। আবার অদক্ষতা থেকে দুর্নীতি জন্ম নেয়। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি নির্বিশেষে কায়েমী স্বার্থ, অকার্যকর নজরদারি ব্যবস্থা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতার অভাব, কর্মচারীদের নি¤œ বেতন অথবা উচ্চ বেতনেও অসন্তুষ্টি, অহেতুক প্রভাবের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের অতি সংরক্ষণ, মুনাফাখোরী ও অতিলোভ প্রভৃতি দুর্নীতির প্রধান কারণ। পরিবেশও দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। পারিবারিক শিক্ষা-সংস্কৃতিও দুর্নীতির সহায়ক হতে পারে। আবার সংরক্ষিত আমলাতন্ত্র, স্বচ্ছতার অভাব, সরকারী খাতের ব্যাপকতা, অবাস্তব ও সেকেলে সার্ভিস কাঠামো এবং ক্যারিয়ার পরিকল্পনা অকার্যকর আইন-শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রয়োগের অভাব প্রভৃতি নিম্নমানের শাসনের জন্ম দেয়। নিম্নমানের ও অকার্যকর শাসনের ফলে অপচয় এবং দুর্নীতির পথ প্রশস্ত হয়। দুর্নীতি রোধ করতে হলে এই দুষ্ট চক্রের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে আঘাত হানতে হবে। অন্যথায় দু’চারশ’ লোকের শাস্তি সাময়িক উপশম হয়তো দিতে পারবে, স্থায়ী কোনও সমাধান নয়। এ জন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। দুর্নীতি এখন উন্নত অনুন্নত সকল দেশের সমস্যা। জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক কোনটাই দুর্নীতিমুক্ত নয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, চারিত্রিক ও অর্থনৈতিক দুর্নীতি সাধারণ মানুষের সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে।
সম্ভবতঃ এ কারণেই কয়েক বছর আগে সেনাসমর্থিত কেয়ারটেকার সরকারের আমলে ভারতীয় একটি টিভি চ্যানেলে টক শো’তে অংশগ্রহণকারী একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আক্ষেপ করে সে দেশে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনের জন্য বাংলাদেশ মডেলের প্রশাসন কামনা করেছেন। দুর্নীতি দমনের জন্য বিদেশ থেকে আমাদের মডেল আমদানি অথবা পরামর্শ ধার করার প্রয়োজন খুব একটা নেই। তবে তাদের অনুসৃত পদ্ধতি থেকে কিছুটা শিক্ষা আমরা গ্রহণ করতে পারি।
দুনিয়ার অনেক দেশই দুর্নীতি রোধের চেষ্টা করছে। যদিও নগর রাষ্ট্র এই অঞ্চলে সিঙ্গাপুরকে অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম দুর্নীতিপরায়ণ বলে মনে করেন। তাদের সাফল্যের পেছনে দুর্নীতিবিরোধী কৌশলের বৈশিষ্ট্যগুলো ঐ দেশের সরকারের ভাষায় নি¤œরূপ :
1) Commitment by political leaders towards elimination of corruption both within and outside the public bureaucracy.
2) Adoption of comprehensive anti-corruption measurs designed to reduce both the opportunities and the need for corruption.
3) Creation and maintenance of an uncorrupted anti- corruption agency which has honest and competent personnel to investigate corruption cases and to enforce the anti-corruption laws.
4) One of the governments approaches to combating corruption is to reduce the incentive for corruption by raising the remuneration package of its officials in line with private sector salaries.
দুর্নীতি দমনে রাজনীতিকদের যে অঙ্গীকার প্রয়োজন আমাদের দেশের অনেক রাজনীতিকেরই তা নেই। আর থাকবেই বা কেমন করে? ১৪/১৫টা দুর্নীতির মামলা মাথায় নিয়ে যদি কেউ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী অথবা সরকারের শীর্ষ পদে আসীন হতে পারেন কিংবা উচ্চ আদালতের বিচারকের আসনে বসে ভাল ভাল মানুষদের জেল-জরিমানা-ফাঁসি দিতে পারেন তাহলে তাদের অঙ্গীকারের প্রশ্ন উঠবেই বা কেমন করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দু’জন মন্ত্রী এবং দল হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াত এদেশে সততা নিষ্ঠার একটি রোলমডেল স্থাপন করেছিল। কিন্তু পুরস্কারের পরিবর্তে যখন তারা তিরষ্কার এবং শাস্তি পেলেন রাজনীতিকরা তো তখন টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করলেন না। কাজেই দুর্নীতি মুক্ত সমাজ ও দেশ কায়েমের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকারই শুধু কাম্য নয় এ জন্য প্রয়োজন গণপ্রতিরোধও। জনগণের মধ্যে যদি জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও কৃতকর্মের জন্য আখেরাতের ভয় থাকে এবং তারা দুর্নীতিবাজদের সর্বস্তরে বর্জন করার মানসিকতা গড়ে তোলেন তাহলে দুর্নীতিবাজরা সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না কিংবা দুর্নীতি করে বিশ্বের সেরা ধনীদের অন্তর্ভুক্তও হতে পারে না। ধর্মীয় অনুশাসনের অনুশীলনই শুধু এর নিশ্চয়তা দিতে পারে।
http://www.dailysangram.com/post/275569-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%AC%E0%A6%B9-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87