২২ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ১২:২৬

ঢাকা সিটির নির্বাচন

ইবনে নূরুল হুদা : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি পুনঃনির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বিতর্কের বিষয়টি অমিমাংশিতই রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয় না এমন অভিযোগের মধ্যেই অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমাদের দেশের অতীতের নির্বাচনগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করলেও এখন তা হয়ে উঠেছে আতঙ্কের অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে। ফলে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচনগুলোতে যে জনমতের প্রতিফলন ঘটছে না তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য থেকে। তার ভাষায়, তারা (ইসি) বরিশাল, খুলনা ও গাজীপুর সিটির পুনরাবৃত্তি চান না। ফলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে, অতীতে জাতিকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারেনি তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ থাকছে না বরং অতীত বৃত্তেই আবদ্ধ থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নির্বাচনী তফসিলে ইষৎ পরিবর্তন হলেও নির্বাচনে সকল কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। নির্বাচনে ইভিএম-এর ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। তবে বিতর্কটা শুধুই যন্ত্র কেন্দ্রিক নয় বরং যন্ত্রচালকদের নিয়েই অভিযোগটা জোরালো। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেকটা জোর করেই ইভিএম চালু করেছিল বর্তমান নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তা শুধুমাত্র সরকার পক্ষ ছাড়া আর কোন পক্ষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। সম্প্রতি একজন নির্বাচন কমিশনার ইভিএমে পদ্ধতিতে কারচুপি সম্ভব বলে মন্তব্য করায় এই ভোটিং মেশিন নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তার এই বক্তব্য বিরোধী দলগুলোর ইভিএম বিরোধী দাবির যথার্থতাই প্রমাণ করে। তারপরও নির্বাচন কমিশন আসন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তে অটল থাকা রহস্যজনকই মনে করছেন আত্মসচেতন মানুষ।

আমাদের দেশের নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ একেবারে অভিনব নয়। আর এই কারচুপি শুধু বর্তমান তথা নূরুল হুদা কমিশনের সময়েই হয়েছে এমন নয়; বরং এর আগে কাজী রকিব কমিশন ঢাকার দুই ও চট্টগ্রামে নির্বাচনের নামে মহা কেলেঙ্কারীর জন্ম দিয়েছিল। এই কমিশনই ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের দেশে ভোটারবিহীন নির্বাচনের আয়োজন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত রকিব কমিশনের হাত ধরেই ভোট চুরির মহাযজ্ঞটা শুরু হয়েছিল বলে প্রবল জনশ্রুতি রয়েছে। বর্তমান কমিশন শুধুই তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে মাত্র। ফলে জনমনে এমন আস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, আমাদের নির্বাচন কমিশনগুলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না দিতে পারলেও কারচুপির নির্বাচনের নতুন নতুন মডেল উপহার দিয়েছে। এমনকি তা বিশ্ব রেকর্ড করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

একমাত্র গৃহপালিত বিরোধীদল ছাড়া সকল বিরোধী দল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের বিরোধিতা করলেও ঢাকা দুই সিটি নির্বাচনের পুরো ভোটই গ্রহণ হবে যন্ত্রে; এমনটিই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযোগ রয়েছে তারা সরকারি এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও নির্বাচনে ডিজিটাল কারচুপি করার জন্যই বিরোধীদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠাকে উপেক্ষা করেই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বলা হচ্ছে ইভিএমে যথেষ্ট সুযোগ থাকবে ভোটের ফলাফলকে ম্যানিপুলেট করার। কিন্তু এতসব অভিযোগের পর ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে ‘ইভিএম’ ব্যবহারের সিদ্ধান্তে ইসি অটল রয়েছে। যা আসন্ন নির্বাচনকে অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে জনমতের প্রতিফলন ঘটছে না এমন অভিযোগ শুধু দেশে নয় বরং আন্তর্জাতিক মহলেও জোরালো ভিত্তি পেয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে বিরোধী প্রার্থীরা যেভাবে অভিযোগ করা শুরু করছেন তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, সরকারি দলের লোকেরা বিরোধী প্রার্থীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে এবং ইতোমধ্যেই একজন বিরোধী কমিশনার প্রার্থীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আর আমাদের নিকট-অতীত স্মৃতি মোটেই সুখকর নয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গাজীপুরের নির্বাচন প্রসঙ্গ টানছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তো ‘মিড নাইট ইলেকশন’ হিসেবেই স্বীকৃতি পেয়েছে। যদিও নির্বাচনগুলোতে ভোট কারচুপি ও অনিয়ম সকল নির্বাচন কমিশনই অস্বীকার করে এসেছে।

সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বেশ জোর দিয়েই বলেছেন যে, নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার করা গেলে আগের রাতে ভোটের বাক্স ভর্তি করার সুযোগ থাকবে না। মনে রাখতে হবে যে, আমাদের দেশে ভোট কারচুপির অভিযোগ একেবারে অভিনব নয়। কিন্তু নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করার অভিযোগ অভিনবই বলতে হবে। কারণ, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে এমন অভিযোগ কখনো শোনা যায়নি। মূলত আগের রাতে বাক্সভর্তির অভিনব ফিৎনা এই কমিশনই আমদানী করেছে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাম্প্রতিক বক্তব্য সে কথাকেই স্পষ্ট করে তুলেছে।

ইভিএম নিয়ে কমিশনের পক্ষে অনেক ইতিবাচক কথা হলেও বাস্তবতা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। যে দেশগুলোতে ইভিএম আবিষ্কৃত হয়েছে, সেসব অধিকাংশ দেশই ‘ইভিএম’ তালাক দেয়া শুরু করেছে অনেক আগেই। ইভিএম-এ কিভাবে ভোট জালিয়াতি হয় তা আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা অনেকেই হাতে কলমে দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে ইভিএম-এর চিন্তা কমিশনকে বাদ দিতে হবে বলেই মনে করছেন আত্মসচেতন ও গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ।

তারপরও শাসকদল ও নির্বাচন কমিশন ইভিএমের পক্ষে ওকালতি। অবশ্য ইভিএম-পদ্ধতি নিয়ে বির্তক হতো না, যদি ডিজিটাল কারচুপির ভয় না থাকত। মানুষের তৈরি প্রযুক্তি ক্ষমতাসীন দল যেভাবে চাইবেন সেভাবেই অপারেট হবে এটাই স্বাভাবিক। তার নমুনা তো আমরা বিগত নির্বাচনগুলোতে প্রত্যক্ষ করেছি। গত ১২ ডিসেম্বরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সব কমিশনারের আশু অপসারণ ও নির্বাচন কমিশনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি করেছে। এতে বলা হয়েছে, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যেভাবে একের পর এক কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছে তা অভূতপূর্ব ও পুরো জাতির জন্য বিব্রতকর। আর বিরোধী দলের মতামত, উদ্বেগ-উৎকন্ঠাকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে অটল থেকে কমিশন তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।

মূলত ২০১৩ সালে সিটি নির্বাচনে বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটে কেবল দু’টি করে কেন্দ্রে ইভিএম দিয়ে নির্বাচন হয়। রাজশাহী সিটির টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে ইভিএমে ত্রুটিপূণ নির্বাচন হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে যে, সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচন কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালুর মাধ্যমে আগামীতে সকল নির্বাচনে বড় ধরনের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পথে এগোচ্ছে। শামসুল হুদা কমিশন ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করলে ভোট গণনায় ত্রুটি ধরা পড়েছিল। বর্তমান কমিশন পুরনো ইভিএম পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ইভিএমে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৪১ নম্বর কেন্দ্রে তা ব্যবহার করে। কিন্তু সেখানেও ত্রুটি দেখা দেয়। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণে ত্রুটির ফলে ভোটাররা ভোগান্তিতে পড়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনগুলো নিয়ে সফটওয়ার প্রোগ্রামাররা বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলো বিদ্বেষমূলক প্রোগ্রামিংয়ের জন্য ঝুঁঁকিপূর্ণ এবং যেকোনো মুহূর্তে হ্যাকাররা মেশিনটিকে হ্যাক করে ভোট গণনাকে খুব সহজেই টেম্পারিং করতে পারে। যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে ব্যালট পেপারে ভোট গণনার সময়সাপেক্ষ হলেও ভোটারদের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা আছে। কারণ উচ্চপ্রযুক্তি সর্বদাই হ্যাকারদের আক্রমণ দ্বারা ভেদ্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

জার্মানি, আমেরিকা, ভারতসহ অনেক দেশে ইভিএম মেশিন নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় এই মেশিন ব্যবহার বন্ধ; আবার কোথাও সংস্কার করা হয়েছে। আমেরিকার অনেক স্টেট ইভিএমের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। আবার কিছু স্টেটে ইভিএমের পাশাপাশি ম্যানুয়াল পদ্ধতিও চালু আছে। জার্মান আদালত ২০০৯ সালে এক রায়ে বলেছেন, ইভিএম মেশিন খুব সহজেই টেম্পারিং করা সম্ভব। এতে ভোট পুনরায় গণনার সুযোগ নেই। তাই জার্মান আদালত ওই মেশিন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনগুলোতে কিভাবে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট কারসাজি হয়েছে, তার সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যে এই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। ফলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, কিভাবে অপরাধীরা ইভিএম ‘হ্যাক’ করে অনায়াসে ভোট চুরি করতে সক্ষম। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া, স্যান দিয়াগো, মিশিগান ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘রিটার্ন ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং’ ব্যবহার করে ইভিএমের অপব্যবহার করার বাস্তবতা প্রমাণ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের সামনে তারা দেখিয়েছেন কিভাবে একটা ‘ভাইরাস’ ব্যবহারের মাধ্যমে ইভিএম মেশিনে হ্যাকাররা ভোটের ফলাফল সহজেই ‘ম্যানিপুলেট’ করতে পারে।

সকল পক্ষের ঐক্যমত ছাড়াই এই মুহূর্তে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব করাটা দূরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ ইভিএম নিয়ে বিশ্বজুড়ে যখন হতাশা ও সমালোচনার ঝড় বইছে তখন এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা গণতন্ত্র ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়। আসলে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন একটি কমিশন। তাই এই কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে যখন জনমনে প্রশ্ন ওঠা সত্যিই দুঃখজনক। মূলত ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে ইভিএমের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেখানকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সময় ইভিএম বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালে যখন ইভিএম ব্যবহারের কথা উঠেছিল তখনো রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতা করেছিল। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য মতে, ইভিএম দিয়ে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেয়া যেমন সম্ভব, ঠিক তেমনিভাবে এক টিপে ৫০টি ভোট দেয়ার সুযোগও রয়েছে।

শুধু তাই নয়, বিদেশের মাটিতে বসেও ইভিএম ‘হ্যাক’ করা যায় এবং একটি ইভিএম হ্যাকিং করতে এক মিনিটের বেশি সময় লাগে না। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ইভিএমের চেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা বেশি জরুরি। কিন্তু এ বিষয়ে ইসিকে মোটেই ইতিবাচক মনে হচ্ছে না। অতীতের নির্বাচনগুলোতে সরকারি দলের মহড়ার কারণে বিরোধী দলের প্রার্থী এজেন্টরা কেন্দ্রে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এ অবস্থা এবারো বিদ্যমান থাকলে ইভিএমের জটিলতা আরো বাড়বে। ক্ষমতাসীন দলের অতি উৎসাহী মাসলম্যানরা বিরোধী প্রার্থীর ভোটারদের ইভিএমের বাটনে হাত দিতে দেবে না, বলবে আপনার কষ্ট করার দরকার নেই, আমরাই বাটন চেপে ভোট দিয়ে দিচ্ছি।

আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশনগুলো ব্যর্থতার অশুভ বৃত্ত থেকে কোনভাবেই বেড়িয়ে আসার চেষ্টা তো করছেই না বরং যতই দিন যাচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে প্রায় সকল বিরোধী দলের অনাস্থা থাকলেও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। কিন্তু কশিমনকে একথা মনে রাখা উচিত যে, সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব প্রযু্িক্তর বিপ্লব ঘটানো নয় বরং জাতিকে অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও আস্থাভাজন নির্বাচন উপহার দেয়া।

তাই নির্বাচন কমিশনকে সেই সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে। একজন নির্বাচন কমিশনার সম্প্রতি ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট কারচুপি সম্ভব বলে মন্তব্য করার পরও কমিশন আগের অবস্থানেই রয়েছে। ফলে আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ-সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আর তা নিরসনের দায়িত্ব নির্বাচনের কমিশনেরই। জাতি এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির কাছে দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ আশা করে।

http://dailysangram.info/post/404221