১৮ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ১১:০৬

থামছে না ধর্ষণ

গত বছর রাজধানীতে ৪৯৮টি মামলা

রাজধানীর বংশালে প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই শিশুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের ঝাউবাড়ি এলাকায় আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী পান বিক্রেতা সিদ্দিকের (৫০) বিরুদ্ধে। স¤প্রতি রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে এক দুর্বৃত্ত। এতে উত্তাল হয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আইন-শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় ধরা পড়ে ধর্ষক। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পর পর কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে খোদ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০১৭ সালে দেশে ৮১৮টি ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও ২০১৮ সালে তা কিছুটা কমে ৭৩২ এ নেমে আসে। কিন্তু ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ধর্ষনে শিকার হয়েছে ১৪১৩জন।

অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ঢাকা মহানগরের ৫০টি থানা এলাকায় ধর্ষণ ও গণধর্ষণের অভিযোগে ৪৯৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের মামলার সংখ্যা ৩৭টি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এটা একটি মানসিক ব্যাধি। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, এটি প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার সময় হয়েছে। ইভটিজিংবিরোধী আন্দোলনের মতো সবাইকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। সামাজিকভাবে ঘৃনা ও বয়কট করতে হবে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ধর্ষণ-গণধর্ষণের ঘটনা কমানোর জন্য সমাজে নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে। ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের সাজা নিশ্চিত করতে হবে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় গণধর্ষণের মামলা হয় ৮৫৬টি। এ সময়ে ধর্ষণের মামলা হয় ৪ হাজার ৫৮৫টি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ঢাকায় করা মামলার মধ্যে বেশির ভাগই ধর্ষণসংক্রান্ত।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, যথাযথ তদন্ত ও বিচার না হওয়াতেই অনেক সময় পার পেয়ে যায় ধর্ষকরা। আবার বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়াও সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। কুমিল্লায় তনু ধর্ষণ ও হত্যার স্মৃতি এখনো দগদগ করছে।

সা¤প্রতিককালে দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে দ্রæততম সময়ের মধ্যে আদালতে সোপর্দ এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত সম্পন্ন করে মামলার দ্রæত নিষ্পত্তির মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

বংশালে ৭ বছরের শিশু ধর্ষণ
শিশুটির মা সাংবাদিকদের বলেন, গত বুধবার বিকেলে বাসায় কেউ না থাকায় বাড়িওলার নাতি রায়হান (১৭) শিশুটিক ধর্ষণ করে। এ সময় সে অন্য বাসায় প্রাইভেট পড়াতে গিয়েছিল। শিশুর বাবা একটি দোকানে চাকরি করে। সেও দোকানে ছিল। শিশুটি বাসায় একাই ছিল।

তিনি আরো বলেন, বাসা ফাকা পেয়ে রায়হান শিশুটিকে ধর্ষণ করে। পরে বাসায় ফিরলে শিশুটি ধর্ষণের কথা বলে। বাড়িওয়ালার কাছে গেলে সে এবং তার মেয়ে বিভিন্ন অজুহাতে পুলিশ এবং হাসপাতালে যেতে দেয়নি। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে মেয়ের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বংশাল থানার ওসি শহিন ফকির দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, হাসপাতাল থেকে সংবাদ পেয়েছি। থানায় কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবুও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।

কেরাণীগঞ্জে শিশু ধর্ষণের অভিযোগ
অন্যদিকে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের ঝাউবাড়ি এলাকায় আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠছে প্রতিবেশী পান বিক্রেতা সিদ্দিকের (৫০) বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাত ৭টায় ওই শিশুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

জানা যায়, তারা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ঝাউবাড়ি এলাকায় থাকে। শিশুটি স্থানীয় একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। তার বাবা দিনমজুর। শিশুটির মায়ের অভিযোগ, গত রোববার ১২ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ির পাশের পান বিক্রেতা সিদ্দিক তার মেয়েকে ডেকে নিয়ে যান। পরে তিনি পানের ডালা দিয়ে তাকে দোকানীর বাড়িতে পাঠায়। এরপর তিনি পিছু নিয়ে বাসায় গিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন।

তিনি বলেন, বাসায় ফিরে মেয়ে ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি। পরে সে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বিষয়টি মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন। এ ঘটনা কেউ না জানে এ ভয়ে তারা কোথাও অভিযোগ করেননি। কিন্তু মেয়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় শিশুটিকে রাতে হাসপাতালে নিয়ে আসেন বলেও জানান তিনি।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৭টায় ওই শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ধর্ষণের অভিযোগ করা হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/261639/