১২ নভেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭:৩৫

ঘূর্ণিঝড়ে ২০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ২০ লাখের বেশি মানুষকে ঘরছাড়া করে কুমিল্লা দিয়ে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ থেকে। আহত অথবা নিহতের সংখ্যা কমিয়ে দিতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়টির গতি কমিয়ে দিয়েছে এই বনটি। ক্ষয়ক্ষতিও কমিয়েছে এই অরণ্য।

এ বছ মৌসুমি বায়ু শেষ হওয়ার পর এটা বঙ্গোপসাগরের প্রথম ঝড়। দৃশ্যত আন্দামান সাগরের উত্তর দিকে উৎপত্তি হলেও এর আদিটা ছিল ফিলিপিন সাগরে। চলতি বছরের গত ২৪ অক্টোবর ফিলিপিন সাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি করে এবং ৩০ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘মাতমো’তে পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক আবহাওয়া কেন্দ্রগুলো বুলবুলকে মাতমো হিসেবেই অভিহিত করে আসছে, তারা বুলবুল লিখছে না। বুলবুল নাম দিয়েছে পাকিস্তান বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের তীরের দেশ বলে।

৩১ অক্টোবর ‘মাতমো’ ভিয়েতনাম উপকূলে আঘাত হেনে ওই দিনই নি¤œচাপে রূপ নিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়। পরে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের স্থলভাগের ওপর দিয়ে ১৮০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে এর অবশিষ্টাংশ মিয়ানমার হয়ে আন্দামান সাগরে এসে পড়ে এবং ৪ নভেম্বর উত্তর আন্দামান সাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি করে এবং কয়েক ঘণ্টা পরই এটা আরো ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নেয়। ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস এটাকে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ঘোষণা করে এবং ৯ নভেম্বর রাতে সুন্দরবন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ঘূর্ণিঝড়ের শুরুর আঘাতটা প্রতিহত করে সুন্দরবন। পরে খুলনা, সাতক্ষীরা হয়ে আরো উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে এটা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ত্রিপুরার দিকে চলে যায়।

ঝড়ে প্রধানত. কুড়েঘর, খড় নির্মিত ঘর, গোলপাতার ঘরের মতো কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে অস্থায়ী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র পাকা স্কুলগুলোতে। আগে থেকে আবহাওয়ার খবর প্রচার, স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠে নেমে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার কারণে আহত ও নিহতের সংখ্যা একেবারেই কম। যেখানে ১৯৭০ সালে ভোলা ঝড়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত, ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম ঝড়ে দেড় লাখের বেশি মানুষ নিহত হয় সেখানে বুলবুলের আঘাতে খুব কম মানুষই নিহত হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে হয়েছে লাখের বেশি মানুষকে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর এ মাসে কি আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আসতে পারে? এমন প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেকেই এ বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের স্পষ্ট কোনো জবাব নেই। তবে তাদের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, নভেম্বর মাসে কম করে হলেও দুইটি নি¤œচাপ হতে পারে। এর একটি নি¤œচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সৃষ্টি। আরেকটি নি¤œচাপ কি হবে? সামনের দিনগুলো বলে দেবে এর উত্তর। কিন্তু আন্দামান সাগরের পানির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। এ তাপমাত্রায় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। এ তাপমাত্রায় সামান্য কিছু চাপ থাকলে আরেকটি নি¤œচাপ হতেও পারে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/455412/