৩ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ১:২৭

ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার এত কম কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় নিম্ন পাসের হার অব্যাহত রয়েছে। ২০১৯-২০ শিক্ষা বর্ষে অনার্সে ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান, কলা, ব্যবসায় প্রশান ও সমন্বিত ‘ঘ’ ইউনিট মিলে চারটি ইউনিটে গড় পাসের হার ১৭ দশমিক ১০ ভাগ। অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ৮২ দশমিক ৯০ ভাগ পাস নম্বরই তুলতে পারেনি। অথচ এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষা বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ তিনটি ইউনিটে গড় পাসের হার ছিল ১২ দশমিক ৬৭। অর্থাৎ গত বছর ভর্তি পরীক্ষায় ৮৭ দশমিক ৩৩ ভাগ শিক্ষার্থী পাস নম্বর তুলতে পারেনি। ২০১৬-২০১৭ শিক্ষা বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ‘ক’, ‘খ’ ‘গ’ ও ‘ঘ’ ইউনিটে গড় পাসের হার ছিল মাত্র ১০। ওই বছর ৯০ ভাগ পরীক্ষার্থী পাস নম্বর তুলতে ব্যর্থ হয়।
গত কয়েক বছর ধরে এসএসসি ও এইচএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় ব্যাপক পাসের হার ও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জিপিএ ৫ পাওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় এসব জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর ব্যাপকহারে পাস নম্বরও তুলতে না পারায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় শিক্ষার মান। দেশজুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এ বিষয়টি।

গত ১৭ জুলাই প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। এ পরীক্ষায় ১০ বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পায় ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী।
গত ৬ মে প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন।

অপর দিকে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ‘ক’ ইউনিটে পাসের হার ১৫ দশমিক ৯৩ ভাগ, ‘খ’ ইউনিটে ২৩ দশমিক ৭২ ভাগ, ‘গ’ ইউনিটে ১৫ দশমিক ৪৯ ভাগ এবং ‘ঘ’ ইউনিটে পাসের হার ১৩ দশমিক ২৬ ভাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাসের মধ্য দিয়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষার মানের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে বলে মনে করেন শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ, গবেষকসহ অনেকে। তাদের মতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘ দিন ধরে যে অরাজকতা বিরাজ করছে এবং বারবার যে খোলস উন্মুক্ত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে তা ফুটে উঠেছে।

২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি বিভাগে ভর্তির জন্য মাত্র দুজন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। এ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। একইভাবে গোটা দেশবাসী হতবাক হয়ে যায় ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী পাস নম্বর তুলতে না পারায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের এ ফলাফলে প্রশ্ন দেখা দেয় হাজার হাজার জিপিএ ৫, গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মান এবং যোগ্যতা নিয়ে। সেই সাথে প্রশ্নের মুখোমুখি হয় দেশের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা। এ নিয়ে ঝড় বইতে শুরু হয় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষার মান নিয়ে।

২০১১ সাল থেকে টানা কয়েক বছর পর্যন্ত এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ ৫ এর বন্যা বয়ে যায়। পাসের বন্যা, বিপুুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জিপিএ ৫ পাওয়ার পর শিক্ষার মান নিয়ে কয়েক বছর বেশ আলোচনা চলছিল। বিভিন্ন মহলে বাড়ছিল উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। অবশেষে ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় পাস এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তি বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু শিক্ষার মান বাড়েনি বরং অনেকের মতে এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। জিপিএ ৫, গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েও দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং তাদের মা-বাবার আর্তি গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত খবরের শিরোনাম হয়েছে। গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েও ভর্তি হতে হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাধারণমানের কোনো কলেজে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, তাদের মা-বাবা এবং পরিবারের মাঝে নেমে আসে অস্থিরতা। জিপিএ ৫ পেয়েও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ই উত্তীর্ণ হতে না পেরে পরিবার, আত্মীয় স্বজন এবং সমাজের কাছে চূড়ান্ত বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে। জিপিএ ৫ পাওয়া নিয়ে গৌরব করার পর ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে না পারায় তারা আর কারো কাছে মুখ দেখাতে পারছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী পাস নম্বর তুলতে পারেনি ২০১৪ সালের ভর্তি পরীক্ষায়। ওই বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৭০ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ পায়। একইভাবে ২০১৩ সালে ৫৬, ২০১২ সালে ৫৫ এবং ২০১১ সালে ৫৩ ভাগ জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা পাস নম্বর তুলতে পারেনি ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায়।

http://www.dailynayadiganta.com/education/453236/