১৭ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৪:৩৭

কোনো উদ্যোগেই দাম কমছে না পিয়াজের

মিয়ানমার থেকে পিয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। আমদানি হচ্ছে মিসর থেকেও। বাজারের চাহিদা মেটাতে পিয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ মেঘনা, সিটি ও এস আলমের মতো কোম্পানি। খোলাবাজারে ৪৫ টাকা দরে পিয়াজ বিক্রি করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। রাজধানীর পাইকারি বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ। ফলে, কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। বাজারে সরবরাহের ঘাটতি না থাকলে দাম না কমায় অস্বস্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বাজারে নতুন পিয়াজ না আসা পর্যন্ত দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।


ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতের পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার সংবাদে গত ২৯শে সেপ্টেম্বর সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যাওয়া দেশের পিয়াজের দাম এখনো ১০০ টাকার উপরে রয়েছে। তাদের দাবি, গত ১৫ দিন পিয়াজের দাম অনেকটাই স্থির রয়েছে। যেটুকু ওঠানামা করেছে সেটা মার্কেট ও মানভেদে। এখনো ভালো মানের দেশি পিয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে মিয়ানমার থেকে আসা পিয়াজের কেজি পাইকারি বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৬০ টাকা। মিসর থেকে আসা পিয়াজ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। আর দেশী পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি।

কাওরানবাজারে দেখা যায়, পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৯৫ টাকা, ভারতীয় পিয়াজ ৮৫ টাকা এবং মিয়ানমারের পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।
আর খুচরা বাজারে পাইকারির চেয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে এখনো সরবরাহ সংকট রয়েছে। তাই দাম কমেনি।

এর আগে সরকার অন্য দেশ থেকে আমদানি বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপে গত সপ্তাহে কিছুটা দাম কমেছিল পিয়াজের দাম। এখন মিয়ানমার থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় আবারো সরবরাহ ঘাটতিতে দাম বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গত রোববার থেকে ফের পিয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। গতকালও খুচরায় এক কেজি দেশি পিয়াজ কিনতে ১০০ থেকে ১১০ টাকা দিতে হয়েছে। প্রতি কেজি ভারতীয় পিয়াজও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে মিয়ানমারের পিয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেও মিয়ানমার ও মিসর থেকে পিয়াজ আসছে। তবে মিয়ানমার থেকে যে পিয়াজ আসছে তার বড় একটি অংশ নষ্ট। যে কারণে ভালো মানের পিয়াজের দাম কমছে না। তারা জানান, এখন পিয়াজার দাম বেশি হলেও কিছুদিনের মধ্যে কমে যাবে। কারণ নভেম্বরের শুরু থেকেই নতুন দেশী পিয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। আর নতুন পিয়াজ এলে সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি দামও কমে যাবে।

এদিকে, চট্টগ্রামে পিয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সকাল ১১টা থেকে নগরীর চৌহমুনী বাজারে অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পিয়াজ বিক্রির অভিযোগে ৫টি দোকানকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া নগরীর পাহাড়তলি বাজারে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জের পিয়াজের পাইকারি বাজারে অভিযান চালিয়ে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে, পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিপণনে নেতৃত্ব দানকারী মেঘনা, সিটি ও এস আলম গ্রুপসহ বড় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর মাধ্যমে পিয়াজ আমদানি করে বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে এসব কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী। বৈঠকে পিয়াজের সঙ্কট মোকাবিলায় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে। যদিও ঢাকার শ্যামবাজার, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, হিলি, ভোমরা, সোনামসজিদ, ফরিদপুর, পাবনাসহ দেশের কৃষিপণ্যের বড় আড়তদার ও প্রচলিত আমদানিকারকরা সরকারকে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা করেনি বলে জানা গেছে। সরকার মনে করছে, বাজারে সরবরাহ বাড়ানো এখন প্রধান কাজ। এ জন্য বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলোর সহযোগিতা চেয়েছে মন্ত্রণালয়।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত বছর এই সময় বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৫০ টাকা। অর্থাৎ মানুষকে এখন দ্বিগুণ থেকে চার গুণ দামে পিয়াজ কিনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের প্রথম দিন থেকে গত ৫ই অক্টোবর পর্যন্ত দেশে দেড় লাখ টন আমদানি করা পিয়াজ ঢুকেছে। এর মধ্যে আগস্টে ঢুকেছে ৬৭ হাজার ৭৩৭ টন। সেপ্টেম্বরে এসেছে ৭৬ হাজার ২৭৭ টন। অন্যদিকে, চলতি মাসের প্রথম ৫ দিনে আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ৪২৭ টন পিয়াজ।

পিয়াজের গড় আমদানি মূল্যেও বড় ধরনের ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসের চার সপ্তাহে টনপ্রতি ১৯০ থেকে ৩১৪ ডলার দরে পিয়াজ আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়। কেজি পড়ে ১৬ থেকে ২৭ টাকা।

সেপ্টেম্বর মাসের চার সপ্তাহে টনপ্রতি ২৪৬ থেকে ৫৯৫ ডলারে পিয়াজের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়। এতে দাম পড়ে ২১ থেকে ৫১ টাকা। আর সর্বশেষ এ মাসের প্রথম ৫ দিনে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে গড়ে টনপ্রতি ৬২৩ ডলার দরে, কেজিপ্রতি দর ৫৩ টাকা। এ দামের সঙ্গে জাহাজভাড়া ও অন্যান্য খরচ যুক্ত হবে। কিন্তু পাইকারি বাজারে যেকোনো পিয়াজ (পচন না ধরা) ৭২ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানা গেছে, পিয়াজের বাজার সামাল দিতে মেঘনা ও সিটির মতো বড়দের মাঠে নামিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সিটি গ্রুপ জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে তুরস্ক থেকে আড়াই হাজার টন পিয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। এ পিয়াজ দেশে আসবে চলতি মাসের শেষ দিকে। প্রতি কেজির আমদানি মূল্য পড়বে ৪০ টাকার মতো।
গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা পিয়াজের দাম নিয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমারে ধর্মীয় একটি অনুষ্ঠানের কারণে দুই /তিন দিন তাদের রপ্তানি বন্ধ, ওইটা বন্ধ হওয়ার কারণে দামটা বেড়েছে।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=194948