৮ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৩:১৬

মানুষ খুন এত সহজ!!!

ছেলেটার মুখের দিকে তাকানো যায় না। বিশ্বাস করা যায় না ওকে খুন করা হয়েছে। সত্যি কি তাকে খুন করা হয়েছে? নাকি আমরা কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছি। একটু পরেই ঘুম ভেঙে যাবে। জেগে দেখবো না আবরার ফাহাদ মরেনি। ও বেঁচে আছে। সকাল সকাল মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে। একটু পরেই ক্লাসে যাবে।

আমাদের দুঃস্বপ্ন কেটে যাবে। তা অবশ্য হওয়ার নয়। সকালে ঘুম ভাঙতেই শুভ সকাল জানায় বাংলাদেশ। আবরার ফাহাদের হত্যার সংবাদের মধ্যদিয়ে। ছেলেটা নটর ডেমের ছাত্র ছিল। পড়তো বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগে। যে কোনো বিচারেই বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের একজন। এখনও পর্যন্ত যতদূর জানা গেছে, হল ছাত্রলীগের ‘আদালতেই’ কার্যকর হয়েছে তার মৃত্যুদণ্ড! কী অবলীলাতেই না বলে ফেললাম! মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গেল একজন ছাত্র, একটি পরিবারের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ, বর্তমান। সবকিছু শেষ হয়ে গেল! কিছু অমানুষের হাতে। ভাবা যায় না ওরাও বুয়েটে পড়তো। কী দোষ ছিল ছেলেটির! ফেসবুকে তার একটি স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে। একবার দেখা যাক কী লিখেছে সে- ১. ৪৭-এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করলো। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিয়েছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে। ২. কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চায় না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দেবো। ৩. কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তর ভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দেবো। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব। হয়তো এ সুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মতো সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’

এই লেখার জন্য কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায়??? আবরার কখনও দূর কল্পনাতেও ভেবেছিল এই লেখার জন্য তাকে মরতে হবে! একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে। গণমাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতাদের বক্তব্যে যা বোঝা যায়, আবরারের অপরাধ সে শিবিরের পেইজে লাইক দিয়েছিল। তার কাছে তারা আপত্তিকর লেখা পেয়েছে! উপর্যুক্ত স্ট্যাটাসটিই কি তবে আপত্তিকর!

এতো ঠুনকো, সামান্য কারণে কেউ কাউকে হত্যা করতে পারে? অবিশ্বাস্য বললেও তো কম বলা হয়। কোথায় যাচ্ছে এই দেশ, কোথায় যাচ্ছি আমরা! ৫৬ হাজার বর্গমাইলেই অসহায় আবরাররা! ওরা খুন হবে! দুই-একদিন হাউকাউ হবে! তারপর সব ঠাণ্ডা! আবরারকে হত্যার মাধ্যমে এরাতো আসলে সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করলো। অমানুষেরা মানবজাতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা নয়।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=193679