বিভিন্ন কর্পোরেশনের উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেয়ার সিদ্ধান্তে শেয়ারবাজারে সরকারি কোম্পানির শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দাম কমার আশঙ্কায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিনিয়োগকারী সরকারি শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে।
বিশেষ করে বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গত তিন দিনে প্রচুর শেয়ার বিক্রি করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশাল অঙ্কের টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করা আছে। এখান থেকে বছরে সুদ বাবদ অনেক টাকা আয় হয়।
আর এই তহবিল কোষাগারে তুলে নিলে এসব প্রতিষ্ঠানের আয় কমবে। তাদের মতে, শেয়ার বিক্রি আরও বাড়লে বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, এ তহবিল তুলে নিয়ে সরকারি কয়েকটি ব্যাংকও সমস্যায় পড়বে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড় একটি ব্রোকারেজ হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার যে আইনটি করতে যাচ্ছে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু এর মধ্যে বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আমাদের ধারণা সরকার এটি দ্রুতই বাস্তবায়ন করবে।
কারণ বর্তমানে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই। এ কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টাকা তুলে নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারি টাকা তুলে নিলে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ে প্রভাব পড়বে। এ কারণে আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করছি।
রোববার এবং সোমবার তিতাস গ্যাস, যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার বিক্রি করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজে লাগাতে একটি আইন করা হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে ‘জমা আইন ২০১৯’-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। খসড়ায় গত মে পর্যন্ত ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ ২ লাখ ১২ হাজার ১শ’ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে আনার কথা বলা হয়েছে।
তবে জুন পর্যন্ত তা বেড়ে ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এদিকে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন কোম্পানিতে। কারণ বর্তমানে শেয়ারবাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কোম্পানি রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, পেট্রোবাংলা এবং পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫৬ হাজার ৫৬৯ টাকার তহবিল রয়েছে।
বাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫৬টি কোম্পানির মধ্যে সরকারি কোম্পানি ২০টি। এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েল।
পেট্রোবাংলার আওতাধীন তিত্যাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি এবং ঢাকা ইলেকট্রনিক সাপ্লাই কোম্পানি।
এছাড়া অন্যান্য খাতের যেসব কোম্পানি রয়েছে সেগুলো হল- রেইন উইক যজ্ঞেশ্বর, ন্যাশনাল টিউব, রূপালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ক্যাবল, আইসিবি, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, উসমানিয়া গ্লাস, বাংলাদেশ সার্ভিস, এটলাস বাংলাদেশ, শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে।
এসব কোম্পানি বছরে যে টাকায় আয় করে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আসে ব্যাংকের এফডিআরের সুদ থেকে। আর সরকার তহবিল তুলে নিলে সুদ খাত থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কমবে। সামগ্রিকভাবে যা কোম্পানির আয়ে প্রভাব ফেলবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এখানে দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, বাজেট বাস্তবায়নে চাপ বাড়ছে। ফলে অর্থ সংকটে পড়েছে সরকার। সে কারণে এই তহবিল নেয়ার চিন্তা করছে।
তবে ভালো কাজে বিনিয়োগ করলে সমস্যা নেই। কিন্তু এই তহবিল দিয়ে প্রশাসনিক ব্যয় মেটানো হলে, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে এই টাকা তুলে নিয়ে ব্যাংক চাপে পড়বে। কারণ ব্যাংকগুলো এই টাকা বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে রেখেছে। তাই তাদের সময় দিয়ে এগুলো তুলে নিতে হবে।