৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ১:৩৭

পাঁচ বছরের প্রকল্পের ৬৮ শতাংশ সোয়া ৬ বছরে

সাসেক জয়দেবপুর টু এলেঙ্গা চার লেন

উন্নয়ন প্রকল্পে টাকা খরচে যতটা গতি বাস্তবায়নে ততটা নেই। যার কারণে বছরের পর বছর লাগছে কাজ শেষ করতে। পাঁচ বছরে সমাপ্ত করার কথা ছিল সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতাভুক্ত জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা চার লেন প্রকল্পটি। কিন্তু সোয়া ছয় বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৬৮ শতাংশ। এটি ২০১৮ সালের মার্চে শেষ করার প্রস্তুতি নিয়ে অনুমোদন নেয়া হয়েছিল। অথচ সময় বাড়িয়েও ৫০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। বর্ধিত সময়সীমা ২০২০ সালের মধ্যে এই মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ সমাপ্ত হওয়া নিয়ে বাস্তবায়নকারীরাই সংশয়ের মধ্যে রয়েছে। উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিন ধরে যশোর-বেনাপোল-খুলনা মহাসড়কে সংস্কারকাজ চললেও তা এখনো শেষ না হওয়ায় একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করার জন্য নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। আইএমইডি বলছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গুণগত মান বজায় রেখে কাজ সমাপ্ত করতে ব্যর্থ হলে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্প্রতি বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া সাসেক চার লেনের এই মহাসড়ক প্রকল্পটিতে গত জুন পর্যন্ত তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর ওই অর্থ ব্যয়ে কাজ হয়েছে ৬৮ শতাংশ। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। প্রকল্পের জন্য মোট ৬৯ দশমিক ৯৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। এ পর্যন্ত মাত্র ৩৪ দশমিক ৪৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। সর্বমোট ২২টি ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাবের মধ্যে মাত্র ১২টি প্রস্তাবের ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩৫ দশমিক ৫৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। অবশিষ্ট ক্ষতিপূরণপূর্বক ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় সড়কটির নির্মাণকাজ ক্ষেত্র বিশেষে পুরোপুরি শুরু করা যাচ্ছে না।

নির্মাণাধীন সড়কের চেইনেজ ৪+৩০০ কিলোমিটার থেকে ৪+৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এই রাস্তার বাম পাশে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আবর্জনাস্তূপ এসএমভিটি লেন ঢেকে মেইন ক্যারেজওয়ে পর্যন্ত এসে বাস্তবায়ন কাজ বিঘিœত করছে। এতে সড়ক ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বেশি নেয়ার কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যয় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ব্যয় ২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৮ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এখানে ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন ব্যয় ধরা হয়নি। জয়দেপুর-চন্দ্রা হয়ে টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটিও ২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেয়া হয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে। সাসেক রোড কানেকটিভিটি প্রজেক্ট ইমপ্রুভমেন্ট জয়দেবপুর, চন্দ্রা-টাঙ্গাইল এলেঙ্গা রোড টু-এ-লেন হাইওয়ে প্রজেক্ট নামে এই প্রকল্পটিও থমকে থাকে। নকশা ত্রুটি সংশোধনের নামে কাজ শুরুর আগেই ২৭৮ কোটি টাকা শেষ হয়ে যায়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আবুধাবি ফান্ড ও ওপেক ফান্ড এই তিনটি দাতাসংস্থা এতে মোট ১ হাজার ৮৪৩ কোটি ৬৮ লাখ ২১ হাজার টাকার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। এ পর্যন্ত এই প্রকল্পের ব্যয় তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে। প্রথম দফায় সংশোধন করে ব্যয় বাড়িয়ে ৩ হাজার ৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা করা হয়। এরপর এই ব্যয় আবার বাড়িয়ে ৩ হাজার ৩৬৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা করা হয়। ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। শেষবার ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ হাজার ৫৯৩ কোটি ১৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। আর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।

প্রকল্প পরিচালক মো: ইসহাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্ধিত কিছু কাজের জন্য সময় বেশি লাগছে। তবে নির্ধারিত সময় ২০২০ সালের জুনের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দুই দিকের সার্ভিস রোডের কাজ শেষ হবে নির্ধারিত সময়ে। চারটি ব্রিজ ও ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি জানান, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ ৫০ শতাংশ বাকি আছে। এটি চলমান আছে।

এ দিকে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, এই প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটি উভয় পাশে এসএমভিটি লেনসহ ছয় লেনে উন্নীতকরণ হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ভবিষ্যতে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত ও নেপাল এবং বুড়িমারি দিয়ে ভারত ও ভুটানের সাথে উপ-আঞ্চলিক সড়ক সংযোগ সহজতর হবে। একই সাথে জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/438781/